মগবাজার বিস্ফোরণ: তিতাসের ‘অসহযোগিতায়’ শেষ হচ্ছে না মামলার তদন্ত

আবদুল হামিদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ মে ২০২২, ১৪:৩৯ | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০২২, ১০:২৯

রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তবে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সিটিটিসিকে প্রতিবেদন না দেয়ায় মামলার তদন্ত সমাপ্ত করতে পারছেনা পুলিশের সংস্থাটি, যদিও তদন্ত সংশ্লিষ্ট চারটি সংস্থা প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে। তদন্ত সংস্থাগুলো মনে করে, বিস্ফোরণের দায় এড়াতে পারে না তিতাস। পেট্রোবাংলার মতে, তিতাসের অবহেলা একবারেই স্পষ্ট।

সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কাউকে ছাড় দিয়ে প্রতিবেদন জমা দেবো না, যার যে দায় রয়েছে সেটা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।’

সিটিটিসি কর্মকর্তা বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটার পরে সব সংস্থা থেকে দায়সারা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়ে কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয় না।’

এ কারণে ঢাকা শহরে এমন বিস্ফোরণের ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।

তদন্তকারী সংস্থা বিস্ফোরণের গত ১১ মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এত দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মামলার তদন্ত খুব গুরুত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে। সবার গাফিলতি বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি। এছাড়া কয়েকটা সংস্থার অবহেলা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হওয়ার প্রধান কারণ।’

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে ছয়টি সংস্থা তদন্ত করছে। এর মধ্যে চারটি সংস্থা তদন্ত শেষ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিলেও দুটি সংস্থা এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে না বলে জানান সিটিটিসির এক কর্মকর্তা।

সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক দফা চিঠি দিয়েও তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়ায় মামলার তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ চিঠি দেয়ার পরও কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ সদর দপ্তর, পেট্রোবাংলা, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন সিটিটিসিকে দেয়া হয়েছে। তবে ঈদের ছুটির পরে তিতাসে আদালতের মাধ্যমে চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে সিটিটিসির।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ মোল্লার কাছে বিষয়টি জানতে চেয়ে কয়েকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় মগবাজার ওয়্যারলেস গেটে তিনতলা ভবন রাখীনীড়ের নিচতলা ও দোতলা প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডে ওই বিস্ফোরণের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে এতে আশেপাশের এক ডজনেরও বেশি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পরে রাখীনীড় ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন নতুন ভবন করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। চারপাশ টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। আর অপরপাশে আড়ংয়ের শো-রুমের যেসব গ্লাস ভেঙে যায়, সেগুলো ফেলে দিয়ে দেওয়াল উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর আস্তরণ মুছে যাচ্ছে।

গত বছরের ২৭ জুন রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। ঘটনার দুই দিন পরে ২৯ জুন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করে রমনা থানা পুলিশ। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাড়ির মালিক, শর্মা হাউস, বেঙ্গল মিট, গ্র্যান্ড কনফেকশনারি, সিঙ্গার ইলেকট্রনিকস, তিতাস গ্যাস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে কারও না কারও অবহেলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

বিস্ফোরণে আড়ং, বিশাল সেন্টারসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ ভেঙে পড়ে। আড়ংয়ের উল্টো দিকে আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা ভবনটি প্রায় ধসে যায়। ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র, নিচতলায় খাবারের দোকান শর্মা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মিশে গেছে। লোহার গ্রিল, আসবাবপত্র, ভবনের বিভিন্ন অংশ ছিটকে পড়ে রাস্তায়। সড়কের ওপর আটকে থাকা দুটি ক্ষতিগ্রস্ত বাসের ভেতরে যাত্রীদের রক্ত আর জিনিসপত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বিস্ফোরণস্থলের পাশের ভবনের তেমন ক্ষতি না হলেও রাস্তার ওপর পাশের আড়ংয়ের শোরুমসহ অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো বিস্ফোরণ ঘটলে বলা যাবে না, এটা কোন দিকে যাবে এবং কী ক্ষতি হবে। বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়া যদি সোজা না গিয়ে আশপাশের আবাসিক ভবনের দিকে যেত, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হতো।’

দুর্ঘটনার পর তিতাস কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, ভবনটিতে কোনো গ্যাসসংযোগ ছিল না। সেখানে গ্যাসের যে পাইপলাইন রয়েছে, সেটা সচল নয়। সিটিটিসির তদন্তে উঠে এসেছে, সাত বছর আগে ওই বাড়ির অবৈধ গ্যাসসংযোগ রাইজার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল তিতাস কর্তৃপক্ষ। তবে গ্যাসের সরবরাহ স্থায়ীভাবে বন্ধ করেনি তারা। এতে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়। আর পাইপলাইনটিতে ছিদ্র ছিল। ওই লাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাস চিলার রুমে জমা হয়। কোনো কারণে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ (স্পার্ক) থেকে সেখানে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (কন্ট্যাক্ট) শাহনেওয়াজ পারভেজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাসের অবহেলা একেবারেই স্পাস্ট। এই ঘটনা গ্যাস থেকে হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। একটা ঘটনা ঘটার পরে আমরা নড়েচড়ে বসি। কিন্তু এর আগে কিছুই করি না।’

শাহনেওয়াজ বলেন, ‘ওই বাসার নিচে একটি গ্যাসের রাইজার ছিল। সেটা বাসার মালিক তিতাসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিজের ব্যবস্থাপনায় সরিয়ে নেয়। এতে ওই রাইজারে লিকেজ হয়ে যায়। পরে ওখান থেকে গ্যাস বের হয়ে জমতে জমতে বিস্ফোরণ ঘটে।’

গ্যাসের রাইজার সরানোর নিয়ম জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি বাসার রাইজার সরাতে হলে তিতাসে আবেদন করতে হয়। পরে ওই সংস্থার লোকজন গিয়ে তাদের ব্যবস্থাপনায় সেটা সরিয়ে দেয়। কিন্তু বাসা মালিকেরা তিতাসের কিছু কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রাইজার সরানোর কাজ করেন। এতে করে একটা বাসায় যেই কয়টা গ্যাস লাইন নেয়া হয়, পরে সেটা অবৈধভাবে বাড়িয়ে নেয় তারা।’

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের উপপ্রধান পরিদর্শক মো. আব্দুল হান্নান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মগবাজারের বিস্ফোরণ গ্যাস থেকেই হয়েছে। এখানে অন্যকিছুর আলামত পাওয়া যায়নি। আমরা প্রতিবেদন খুব সচ্ছতার সঙ্গে তৈরি করেছি।’

(ঢাকাটাইমস/০৫মে/এএইচ/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :