বানের জলে ডুবেছে কৃষকের স্বপ্ন

মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২২, ১০:৪৬

ক’দিন আগেও ছিল তীব্র খরা। ফসল উৎপাদনে পড়েছিল বিরূপ প্রভাব। এর রেশ না কাটতেই এবার বানের জলে তলিয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। এতে দিশেহারা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলী ও আলীরটেকের কৃষি পরিবারগুলো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে বন্যাপরিস্থিতির কারণে দেশের প্রতিটি নদ-নদীর পানি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় বেড়েছে ধলেশ্বরী নদীর পানিও। ফলে ধলেশ্বরী নদী বেষ্টিত বক্তাবলীর পশ্চিম কানাইনগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। এতে কয়েক লাখ টাকার ফসল বিনষ্টের পথে। যাদের অনেকে ঋণ করে আবাদ করেছিলেন বর্গা নেয়া জমিতে। সোনালি ফসলের আশায় যেন বুনেছিলেন সোনালি স্বপ্নও। তবে সর্বনাশা বানের জল সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে। এতে চাপা কান্না চলছে বক্তাবলী ও তৎসংলগ্ন আলীরটেকের কৃষকদের মাঝে।

তথ্য মতে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষিরাজ্য বলা হয় বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়নকে। উপজেলার ৩ হাজার ৭শত ৫৮ হেক্টর জমির মধ্যে বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়নেই অন্তত ২ হাজার হেক্টরের বেশি পরিমান কৃষি জমি রয়েছে। সেই কৃষি রাজ্যেই এবার আঘাত হেনেছে বানের জল।

কৃষকরা বলছেন, প্রতিবছর আষাঢ়ের শেষের দিকে নদীর পানি বেড়ে তা খাল হয়ে কিছুটা ফসলি জমিতে আসে। তবে বন্যার কারণে এবছর আষাঢ়ের শুরুতেই পুরো বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে তলিয়ে গেছে। এক মাস পড়ে হলেও এই ফসলগুলো ঘরে তোলা যেত।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদ হাসনাত দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘নদীর পানি বেড়ে বক্তাবলীতে ও আলীরটেকের বেশ কিছু কৃষি জমিতে পানি চলে এসেছে বলে জেনেছি। সেখানে আমাদের মাঠ কর্মী রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে যে, কেবল বক্তাবলীতে প্রায় ৫০ হেক্টর (১৩ হাজার ৭শত শতাংশ) কৃষি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।’

এদিকে, বানের জলে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে কথা হয় আব্দুল বাসেতের সাথে। তিনি বক্তাবলীর পশ্চিম কানাইনগর এলাকার বাসিন্দা। ৩৬০ শতাংশ জমি জুড়ে ওই এলাকায় আবাদ করেছিলেন কৃষক আব্দুল বাসেত। ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে গত ৩ আগেই তলিয়ে গেছে তার আবাদি জমিগুলো। ৩৬০ শতাংশের মধ্যে কিছুটা তার ব্যক্তিগত এবং অধিকাংশই তিনি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেছিলেন ঢেঁরশ, পাট, ডাটা, ধুন্দুল ও লাউসহ বিভিন্ন সবজি। যা এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আব্দুল বাসেত বলেন, ‘১২ পাহি (৩৬০ শতাংশ) জমিতে চাষাবাদ করছিলাম। লাখ লাখ টেহা (টাকা) খরচ হইছে। আমার সব ফসল নদীর পানিতে তলাইয়া গেছে। প্রত্যেক বছরই ধলেশ্বরী নদীর পানি বাড়ে। কিন্তু এই বছর ১ মাস আগে পানি বাড়ছে। জমি বর্গা আর ধার দেনা কইরা চাষাবাদ করছিলাম ভালো ফলনের আশায়। এহনতো সবই শ্যাষ।’

কথা হয় কৃষক হালিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৬ পাহি (১৮০ শতাংশ) জমি বর্গা নিয়া সবজি চাষ করছিলাম। বন্যার পানিতে সব শ্যাষ। ফসলের কোনো চিহ্নই নাই।’

কৃষক ওয়াদুদ মিয়া বলেন, ‘আমি এবার ৪০ বিঘা (১২শ’ শতাংশ) জমিতে পাট, ঢেঁড়স, ধুন্দুল, বেগুন ও আমনধানের চাষ করছিলাম। সব তলাইয়া গেছে। লাখ তিনেক টাকা ক্ষতি হইছে।’

কৃষক আব্দুল মোতালিব বলেন, ‘৩ পাহি (৯০ শতাংশ) জমিতে সবজি চাষ করছিলাম। সব তলাইয়া গেছে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদ হাসনাত বলেন, ‘বৃষ্টি এবং নদীর জোয়ারের পানি বাড়াতে কিছু কিছু ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এই মুহূর্তে ক্ষতি নির্ণয় করা যাচ্ছে না। পানি যদি দু-এক দিনের মধ্যে নেমে যায়, তাহলে সমস্যা হবে না। তবে ১০ দিনের মত পানি থাকলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। তখন ক্ষতির বিষয়টি জানানো যাবে। ক্ষতি যদি হয় তাহলে বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করবো। সেখান থেকে পরবর্তী ব্যবস্থা বা করনীয় সম্পর্কে নির্দেশনা আসবে।’

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/এআর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :