অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আলোচিত ‘র‌্যাপলার’ বন্ধের নির্দেশ দিল ফিলিপাইন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০২২, ১৪:০০| আপডেট : ২৯ জুন ২০২২, ১৫:৩৯
অ- অ+

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আলোড়ন সৃষ্টি করা ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম ‘র‌্যাপলার’ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির কর্তৃপক্ষ। দুতার্তে সরকারের কট্টর সমালোচক এই সংবাদমাধ্যমটির প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী মারিয়া রেসা। তিনি এই সিদ্ধান্তের প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ফিলিপাইনে যে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনায় মুখর সেগুলির মধ্যে অন্যতম র‌্যাপলার। আর এই সংবাদমাধ্যমটি এমন সময়ে বন্ধের নির্দেশ এল যখন একদিন পরই ক্ষমতা ছাড়তে যাচ্ছেন দেশটির আলোচিত প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে।

ফিলিপাইনের নতুন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র, যিনি কুখ্যাত স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে। তার মা ইমেলদা মার্কোসও নানা কারণে তিন যুগের বেশি সময় ধরে আলোচনায়।

এদিকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কোস নির্বাচিত হওয়ার পরই দেশটির সংবাদমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। এরইমধ্যে র‌্যাপলার বন্ধের নির্দেশের মাধ্যমে দেশটির সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আরও সংকীর্ণ হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত মে মাসে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কোস জুনিয়র নির্বাচিত হওয়ার পরই নতুন এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে নোবেল বিজয়ী মারিয়া র‌্যাপলার বন্ধ করবেন না বলে জানিয়েছেন। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

মারিয়া রেসা বলেন, ‘আমরা আমাদের সাংবাদিকতা চালিয়ে যাব। আমরা আইন অনুযায়ী চলব। আর আমাদের অধিকারের পক্ষে লড়াই অব্যাহত রাখব।’

র‌্যাপলার বন্ধের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ফিলিপাইনে নতুন সরকার যেনতেনভাবে র‌্যাপলারকে বন্ধের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকীর্ণের চেষ্টা করছে।

২০১২ সালে র‌্যাপলার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই বিভিন্নভাবে এ সংবাদমাধ্যমটি বন্ধের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালে দেশটির সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এক বিবৃতিতে জানায়, এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাপলারের কার্যক্রম পরিচালনা করার লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। কারণ এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, র‌্যাপলারে অর্থায়নের প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক।

তবে সেসময় এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন মারিয়া। তার দাবি, র‌্যাপলারে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিনিয়োগকারীর অর্থ রয়েছে। কিন্তু আইনের কোন ব্যাতয় ঘটেনি। ওই বিনিয়োগকারী আইন অনুযায়ী অর্থায়ন করেছেন।

চার বছর ধরে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের অভিযোগের বিষয়ে আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মারিয়া রেসা। সদ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত দোয়ের্তের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে নিরপরাধ ও বিরোধী দলের সদস্যদের হত্যার পাশাপাশি নারীবিদ্বেষ, মানবাধিকার লঙ্গন এবং দুর্নীতি সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে খবর প্রকাশ করেছে র‌্যাপলার।

২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা রেসার বিরুদ্ধে অন্তত সাতটি ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০২০ সালে একটি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে তিনি এখন আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই মামলাটিকে দেশটির সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য একটি ‘পরীক্ষা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

গত বছর রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে বিজয়ী হন। ফিলিপাইনে কর্তৃত্ববাদী শাসনের পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র প্রকাশের জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত।

২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তির তালিকায় স্থান পান তিনি। র‌্যাপলার প্রতিষ্ঠার আগে তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে কাজ করতেন। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি।

চলতি বছর রিপোটার্সর উইদাউট বর্ডারের (আরএসএফ) এক প্রতিবেদনে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৭তম অবস্থানে ফিলিপাইন। তবে গত বছর থেকে চলতি বছর এ সূচকে ৯ ধাপ পিছিয়েছে দেশটি।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/আরআর/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে ট্রল, দিনাজপুরের এএসপি প্রত্যাহার
‘গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি’
“চাঁদাবাজ যতই প্রভাবশালী হোক, পার পাবে না”
গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা