কী চেয়েছিলেন তাহের ও গণবাহিনী

কী চেয়েছিলেন কর্নেল তাহের? কী ছিল তার কথিত বিপ্লব? চেয়েছিলেন চীনা গণবাহিনীর ধাঁচে সামরিক জান্তার অধীনে জনগণকে শাসন করবেন। তাই দেখা যায়, ১৯৭৪ সালেই জাসদের কথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আদর্শ দিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ নামে সশস্ত্র একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তাদের ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ব্রিটিশ অথবা পাকিস্তানি সেনাদের মতো হবে না। হবে গণবাহিনী। কোনো অফিসার থাকবে না। সেনাবাহিনীর মধ্যে তাহের ও তার গণবাহিনী ‘শ্রেণিসংগ্রাম ও বিপ্লবের’ মন্ত্র ছড়িয়ে দেয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর মধ্যে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তারা চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলেন।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে, বিশেষত সিপাহিদের মধ্যে সে সময় যেসব অভাব-অভিযোগ এবং অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া ছিল, তাহেরের গণবাহিনী তারই পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেছিল। সিপাহিদের অবহেলিত অনুভূতিকে উসকে দিয়ে তাদের কাজে লাগানোর জন্য দেশের বিভিন্ন সেনাছাউনি ও ব্যারাকে প্রচারপত্র বিলি করে তাদের প্রতি সংগ্রামের আহ্বান জানিয়েছিল। গণবাহিনীর এ প্রচারপত্রে সিপাহিদের তাদের ঊর্ধ্বতনদের প্রতিও ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমন একটি প্রচারপত্র বা লিফলেটে বলা হয়েছিল, ‘অফিসাররা ক্ষমতা ও পদের লোভে অভ্যুত্থান ঘটাচ্ছে। আর প্রাণ দিচ্ছে সাধারণ সিপাহিরা। নিগৃহীত; অধিকারবঞ্চিত সিপাহিরা আর কামানের খোরাক হবে না। সিপাহি-জনতার ভাগ্য এক। তাই সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমেই ক্ষমতা দখল করতে হবে। সুতরাং বিপ্লবের জন্য, শ্রেণিসংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হউন।’ পাকিস্তান প্রত্যাগত সিপাহিরা এতে উদ্বুদ্ধ হয়। পাকিস্তানে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত থাকা অবস্থায় তারা যে বিলাসী সুযোগ-সুবিধা পেত, তা বাংলাদেশে এসে না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল। তারা রাজনীতি বিযুক্ত হলেও তাদের মধ্যে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়।
১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাস ছিল টালমাটাল সময়। একদিকে জেলহত্যা, অপর দিকে ক্যু-পাল্টা ক্যু, সেনা কর্মকর্তা হত্যাসহ জাসদের গণবাহিনীর হঠকারী তৎপরতা মিলে এক নারকীয় অস্থিরতায় পূর্ণ ছিল দেশ। নানা সুবিধা মহল বিশেষত স্বাধীনতাবিরোধীরা মাঠে নামার সুযোগটি কার্যকর করে।
২ নভেম্বর রাতে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। তিনি ক্ষমতা নিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না। এমনকি ক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করার বিষয়েও দোটানায় ছিলেন। তার অভ্যুত্থান ঘটানো বা ক্ষমতা দখল বিষয়ে রেডিও-টিভিতে কোনো ভাষণ বা ঘোষণা দেননি। খালেদ মোশাররফ যখন ক্ষমতা নিয়ে মোশতাকের সঙ্গে দর-কষাকষি করছিলেন, তখন মোশতাক ও তার সহযোগী আত্মস্বীকৃত খুনিরা জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। এর পরপরই ক্ষমতাচ্যুত হন মোশতাক। আর খুনিদের দেশ ছেড়ে পালানোর পথ করে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলার সুবাদে এবং ভারত-ভীতিকে কাজে লাগান জাসদের নেতারা। এতে নেতৃত্ব দেন সিরাজুল আলম খান ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু তাহের। তাদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার পক্ষে ৪ নভেম্বর থেকে সেনাদের মধ্যে নানা দাবির স্লোগান তুলে পোস্টার ছড়ানো হয়। পাকিস্তান প্রত্যাগত সিপাহিরা এই কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই পোস্টারে ছিল বারো দফা দাবি। যেমনÑ‘যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, এমন রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। সেনাসদস্যদের মধ্যে এত র্যাংক থাকবে না। বেতন বাড়াতে হবে, থাকা ও খাওয়ার উন্নতি করতে হবে’ ইত্যাদি। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় দাবি ছিল ‘ব্যাটম্যান প্রথা লোপ’। তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়াসংবলিত এই পোস্টার সিপাহিদের আকৃষ্ট এবং উত্তেজিত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
খালেদ মোশাররফদের অভ্যুত্থান যে ভারতের সহায়তায় ঘটেছে এবং সে যে ভারতের দালাল, তা প্রচার করে তার বিরুদ্ধে সিপাহিদের খেপিয়ে ও লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিদেশি গণমাধ্যমেও ঢাকার এক সাংবাদিকের বরাত দিয়ে প্রচার করা হয়ে যে খালেদ মোশাররফের সহায়তায় ভারতীয় সেনারা বাংলাদেশে আসছে, যা সিপাহিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জাগিয়ে তোলে খালেদ মোশাররফদের বিরুদ্ধে। দেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট থেকে হাজার হাজার সিপাহি খালেদ মোশাররফকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ঢাকামুখী হয়।
মুসলিম লীগসহ ডানপন্থী দলগুলোও ‘বিপ্লবী গণবাহিনী’ নাম দিয়ে একটি পোস্টার প্রচার করে সে সময়। ডান চরমপন্থীদের এই পোস্টারে সৈনিকদের দাবি-দাওয়া ছাড়াও, খালেদ মোশাররফ যে ভারতের দালাল, তা খুব জোরেশোরে বলা হয়। এই ডান ও বামের মিলন সেনাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বিশেষত তাহের ও সিরাজুল আলম খান সেনাবাহিনীতে রাতারাতি যে সাম্যবাদ চালু করতে চান, তা সাধারণ সেনাদের মধ্যে ‘স্বর্গপ্রাপ্তি’ ধরনের অনুকূল সাড়া জাগিয়েছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল সেনাবাহিনীতে তাহেরের অনুগত মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান প্রত্যাগত বহু সদস্য থাকায়। তারা তাহেরের প্রতি ‘স্বপ্নপূরণের দ্রষ্টা’ হিসেবে মনে করে বিশ্বাস করেছিল। মধু এবং দুধের নহর বয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর করেছিলেন তাহের তাদের। তাই এই সিপাহিরা স্লোগান তুলেছিলÑ‘সেপাই সেপাই ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই।’ তারা সর্বোচ্চ পদ চেয়েছিলেন সুবেদার। তার ওপরে আর কোনো পদ থাকবে না।
৬ নভেম্বর মধ্যরাতের পর সাধারণ সেনারা অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান। এমনকি তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে বিশৃঙ্খলভাবে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এদের মধ্যে ১৫ আগস্টের খুনি ফারুক ও রশিদের অনুগত ল্যান্সার ও দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারির জওয়ানরাও ছিল। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণভার সাধারণ সিপাহিদের হাতে চলে যায়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সিপাহিদের সঙ্গে যোগদান করে অন্যান্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে আগত সিপাহিরা। এমনকি খালেদ মোশাররফের সমর্থনে রংপুর থেকে আসা সেনারাও তার বিরোধী সিপাহিদের সঙ্গে যোগ দেন। সেনাছাউনি থেকে ট্যাংকগুলো পুনরায় বেরিয়ে আসে। ১৫ আগস্টে এগুলো ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন ছিল। ৩ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো রাজপথে নামার সঙ্গে সঙ্গে সিপাহিরাও নেমে আসে। ঢাকা শহরজুড়ে তখন গোলাগুলির শব্দ কেবলই। বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে এসে খালেদ মোশাররফ ও তার সঙ্গীরা শেরেবাংলা নগরে রংপুর থেকে আসা সেনা ইউনিটে আশ্রয় নেন। ভোরে ফারুক ও রশীদের অনুগত ল্যান্সার ও আর্টিলার বাহিনী সেখানে আসে। তারা প্রথমেই হত্যা করে খালেদ, কে এন হুদা, এটি এম হায়দারÑতিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে। এরা ক্যান্টনমেন্টে একজন মহিলা ডাক্তারসহ (আবু ওসমান চৌধুরী সেক্টর কমান্ডারের স্ত্রী), ১৩ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে। অফিসারের স্ত্রী ও বাদ যায়নি।
রাতেই ফারুক-রশীদের অনুগত ল্যান্সার বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট গিয়ে জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে উদ্ধার করে। তারা স্লেøাগান দেয়, ‘সিপাহি বিপ্লব জিন্দাবাদ, জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’ ৬ নভেম্বর মধ্যরাতের পর ভারী ও হালকা সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের অবিরাম গোলাগুলি বর্ষণ করতে করতে সিপাহিরা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বিনা বাধায় তারা ঢাকা বেতার কেন্দ্র দখল করে নেয়। গণবাহিনী প্রধান তাহের সাময়িকভাবে বেতার ভবনের কর্তৃত্বভার গ্রহণ করেন। যখন গোলাগুলি চলছিল, তখন পাকিস্তানপন্থী উল্লসিতরাও সমানে ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে রাজপথে নেমে আসে। ট্রাকে ট্রাকে সোল্লাসে ভ্রমণরত সশস্ত্র সিপাহিরাও বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। এই সব স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবর, সিপাহি জনতা এক হও, স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়েছে, গণরাজ কায়েম হয়েছে; বিপ্লবী গণবাহিনী জিন্দাবাদ; কমরেড সিরাজ ভাই লও লও সালাম’ ইত্যাদি। পাকিস্তানপন্থী সিপাহি আর জাসদের গণবাহিনী এক কাতারে নেমে এসেছিল ৭ নভেম্বর।
৭ নভেম্বরের ক্ষমতার পটপরিবর্তনকে পরাধীনতার পরিসমাপ্তি হিসেবে অভিহিত করে এনায়েতুল্লাহ খান সম্পাদিত সরকারি পত্রিকা বাংলাদেশ টাইমস শিরোনাম দেয়, ‘বাংলাদেশ উইনস ফ্রিডম।’
গণবাহিনী পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। শিখণ্ডী হিসেবে জিয়াউর রহমানকে সামনে নিয়ে আসার পর সিপাহিরা তার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাহেরের অনুরোধে সিপাহিদের সমাবেশে কোরআন শরিফ ছুঁয়ে জিয়া প্রতিজ্ঞা করেন যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো মেনে নেবেন। যেমন রাজবন্দি হিসেবে জলিল-রবদের মুক্তি এবং ব্যাটম্যান প্রথা লোপ। প্রথম দাবিটি তিনি কার্যকর করলেও বাকিগুলো আর কার্যকর করেননি।
তাহের ও সিরাজুল আলম খানের কথিত ‘সিপাহি-জনতা বিপ্লব ’ থেকে রব-জলিলসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয়নি। সিপাহিদের কোনো দাবিই আর পূরণ হয়নি। প্রাণ দিয়েছে অযথাই বহুজন।
তাহের ও সিরাজুল আলম খানের চাওয়া কী ছিল? প্রথমত, তারা শেখ মুুজিব সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৩ থেকে তাই তারা সশস্ত্র সামরিক সংগঠন গণবাহিনী গড়ে তোলে। দেশজুড়ে গুপ্তহত্যা, থানা ফাঁড়ি ও অস্ত্র লুট, পাট ও খাদ্যগুদামে অগ্নিসংযোগ, রেললাইনে নাশকতা সৃষ্টিসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছিল। গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ ছেড়ে তারা সশস্ত্র রাজনীতির পথ ধরে নকশালসহ আরও চৈনিকপন্থী সশস্ত্র সংগঠনের পাশাপাশি অবস্থান নেয়। তারা চেয়েছিলেন, বাংলাদেশে চীনের গণবাহিনীর মতো শ্রেণিহীন একটি সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে। যে বাহিনীতে সাধারণ সৈনিকদের সঙ্গে অফিসারদের পার্থক্য হ্রাস পাবে। সেনারা দেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হবে। তাদের এই বিপ্লবী চাওয়ার মধ্যে জনগণের কোনো অবস্থান ছিল না। জনগণের জীবনযাত্রা পরিবর্তনের কোনো দাবি-দাওয়া ছিল না। ফলে জনসমর্থন পায়নি তাদের এই কথিত বিপ্লবে। কারণ, তারা সেনাবাহিনীকে রাজনীতিকীকরণে এনে তাদের শাসন চালু করতে চেয়েছিলেন। মোদ্দা কথা, সেনাবাহিনী তথা গণবাহিনীর অধীনে জনগণ থাকবে। প্রত্যক্ষভাবে সামরিক শাসনেরই নামান্তর।
তাহেরের ‘বিপ্লব’ প্রকল্পে জনগণের কোনো দাবি-দাওয়া, রাষ্ট্র পরিচালনার বিধিবিধান ছিল না। ছিল শুধু সিপাহি শাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। যেখানে রাজনীতি ও রাজনীতিকদের অবস্থান গণবাহিনীর অধস্তন। শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনীকে গণবাহিনীতে রূপান্তর করে তাহেররা চেয়েছিলেন ‘বিপ্লব’ নামক বিশাল হস্তীকে ধারণ করতে। চীনের গণবাহিনী গড়ে ওঠার পেছনে জনগণের সঙ্গে দীর্ঘ পথচলার বিষয় ছিল। কিন্তু তাহেররা তাদের ‘চীনা বিপ্লব’ ঘটাতে জনগণকে সম্পৃক্ত করেনি। ফলে কেবল সিপাহিদের তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ করার ক্ষেত্রে ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ প্রক্রিয়া নিয়ে তাহেররা এগিয়ে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।
তাহেরদের বিদ্রোহ বা বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার কারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকা, পাকিস্তানপন্থীদের ওপর নির্ভর করা, রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকাসহ আরও নানাবিধ কারণে। বরং জাসদের কাঁধে চড়ে ক্ষমতার মসনদে আসীন হয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে তাহেরসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন জিয়া। ক্ষমতায় বসার কয়েক দিনের মধ্যে জিয়া তার শপথ থেকে সরে আসেন। তখন তাহেররা নতুন করে বিপ্লব করার আহ্বান জানিয়ে পোস্টার লিফলেট বিতরণ করেন সেনাবাহিনীর সিপাহিদের মধ্যে। শুধু তা-ই নয়, ২৪ নভেম্বর একটি পাল্টা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাও তারা করে। কিন্তু জিয়া তা কঠোরভাবে দমন করেন। ২৩ ও ২৪ নভেম্বর তাহেরসহ জাসদের অন্য নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। তাহেরকে মুক্ত করার জন্য ২৬ নভেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে অপহরণ করে জিম্মি করার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় তাহেরের ভাইসহ সশস্ত্র অনুগতরা। ঘটনাস্থলে তাহেরের এক ভাইও মারা যান।
তাহের ও সিরাজুল আলম খানরা যা চেয়েছিলেন, অর্থাৎ সামরিক বাহিনীর অধীনে জনগণের শাসন। আর তাই করেছেন জিয়াউর রহমান। এবং পরবর্তী সময়ে এরশাদ। শুধু অবিচারে মৃত্যুবরণ করেন তাহের। জিয়ার ‘পথের কাঁটা’ হিসেবে তাকে সরে যেতে হয়। তাহেরের রোমান্টিক অ্যাডভেঞ্চারের মাশুল জাতিকে আজও দিতে হয়। সেদিনের ‘সিপাহি-জনতা ভাই ভাই’ স্লোগান বুমেরাং হয়ে ফিরেছিল দেশজুড়ে। তাহের ও তার গণবাহিনী ‘বিপ্লবে’র নামে অবিপ্লবী কর্মকাণ্ড করে দেশকে পাকিস্তানি চেতনার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। যার রেশ এখনো রয়েছে।

মন্তব্য করুন