মেট্রোরেল স্টেশনে পদে পদে প্রযুক্তি, শেষের পথে ৯ স্টেশন

অভিজিত রায় কৌশিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১০ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৩৮

নাগরিক পরিবহন খাতে উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যুক্ত হচ্ছে মেট্রোরেল। সব ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে ছুটবে মেট্রোরেলের ট্রেন। প্রথম দফায় রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল।

ইতিমধ্যে প্রায় শেষের পথে এই রুটের ৯টি স্টেশনের কাজ। এই প্রকল্পের স্টেশনগুলোতে প্রবেশ থেকে শুরু করে ট্রেনে ওঠা পর‌্যন্ত প্রতিটি ধাপে থাকছে প্রযুক্তির ব্যবহার।

গত বছরের ২৯ আগস্ট মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক ট্রায়াল রান শুরু হয়। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে রওনা হয়ে পল্লবী পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টায় চারটি স্টেশন ঘুরে আবার ডিপোতে ফিরে যায় ট্রেন। ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলে ট্রেনটি।

এরপর বছর ধরে বিভিন্ন সময় নানা কারিগরি দিকে থেকে ট্রায়াল রান করেছে মেট্রোরেলের ট্রেন। সম্প্রতি বেস স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর‌্যন্ত ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রায়াল রানও সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ১০০ কিলোমিটার গতিতে নিয়মিত চলবে ট্রেন। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ১৬টি স্টেশন হবে এবং মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

প্রকল্পটি পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এতে বেড়ে যায় ব্যয়। এই প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এখন ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেড়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

মেট্রোরেলে ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের প্রথমে এস্কেলেটর বা সিঁড়ি দিয়ে দ্বিতীয় তলার কনকর্স হলে উঠতে হবে। বয়স্ক, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্টেশনে থাকবে লিফটের ব্যবস্থা। দোতলার কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট।

টিকেট ছাড়া কেউ প্ল্যাটফর্মে যেতে পারবেন না, কেননা প্ল্যাটফর্মে ঢোকার জন্য থাকবে টিকিট পাঞ্চের ব্যবস্থা। যাত্রীদের টিকিট পাঞ্চ করে ঢুকতে হবে স্টেশনে। টিকিট পাঞ্চ করার পর যাত্রীরা দোতলা থেকে নির্ধারিত এস্কেলেটর বা সিঁড়ি কিংবা লিফট ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্মে উঠবেন।

কোনো কারণে কেউ নির্ধারিত গন্তব্যের বেশি ভ্রমণ করলে কিংবা টিকিট না থাকলে তিনি প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোতে পারবেন না। বাড়তি ভাড়া পরিশোধ কিংবা টিকিটের দাম পরিশোধ করে বেরোতে হবে। এসব যাত্রীদেন জন্য প্ল্যাটফর্মে থাকছে আলাদা রুম।

এসব ব্যবস্থা ইতিমধ্যে প্রায় সব কটি স্টেশনে বসানো হয়েছে বলে জানান মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. মশিউর রাহমান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে ৯টি স্টেশনের কাজ প্রায় সম্পন্নের পথে। তবে এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। খুব শিগগির প্রস্তুত হয়ে যাবে সব।’

টিকিট পাঞ্চ করে যাত্রীদের স্টেশনে ঢুকতে হবে জানিয়ে ড. মশিউর রাহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, টিকিট পাঞ্চের আগ পর্যন্ত যাত্রীদের থাকতে হবে ‘নন পেইড’ এলাকায়। যাত্রী মেশিনে টিকিট পাঞ্চ করে চলে যাবেন ‘পেইড’ এলাকায়।

প্রথম ধাপে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওয়ের মধ্যে চলাচল করবে মেট্রোরেল ট্রেন। এগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

ভাড়া

মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণে গঠিত কমিটি সম্প্রতি প্রাথমিক প্রস্তাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়া দিয়ে সর্বোচ্চ দুই স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া যাবে।

দেশের প্রথম মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে ৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ছয়টি কোচের ট্রেন প্রতিবারে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

মেট্রোরেলের ট্রায়াল রান

গত বছরের ২৯ আগস্ট দেশের প্রথম মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক ট্রায়াল রান শুরু হয়। রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে রওনা হয়ে পল্লবী পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টায় চারটি স্টেশন ঘুরে আবার ডিপোতে ফিরে যায় ট্রেন। ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলে ট্রেনটি।

ওই দিন সকালে 'ভায়াডাক্টের উপর প্রথম মেট্রো ট্রেন চলাচল পরীক্ষণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন' অনুষ্ঠানের পর পরীক্ষামূলক চলে ট্রেনটি। মেট্রোরেলের প্রথম পরীক্ষামূলক এই চলাচলে কোনো যাত্রী পরিবহন করা হয় না।

ওই পরীক্ষামূলক চলাচলে চালকের আসনে ছিলেন একজন জাপানি নাগরিক। তিনি পিসিসিএল কোম্পানির একজন কর্মচারী। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জাপানি ও দেশীয় কর্মী ছিলেন।

পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেই সময় তিনি জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের এমআরপি লাইন-৬ এর বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন গঠন করা হয় ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল)। ২০১৫ সালে জাপানের সহায়তায় এসটিপি সংশোধন (আরএসটিপি) করে মেট্রোরেলের রুট সংখ্যা বাড়ানো হয়।

হবে ছয় মেট্রোরেল লাইন

এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই ছয়টির আওতায় মোট ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে।

তার মধ্যে উড়াল ৬৭ দশমিক ৫৬৯ কিলোমিটার এবং পাতাল ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এতে মোট ১০৪টি স্টেশন থাকবে, যার মধ্যে উড়াল স্টেশন ৫১টি এবং পাতাল হবে ৫৩টি।

এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫: নর্দান রুট, এমআরটি লাইন-৫: সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪।

লাইনগুলোর মধ্যে উত্তরা-মতিঝিল এমআরটি লাইন-৬ এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত হচ্ছে। আর বাকিগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

এমআরটি লাইন-১ হবে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল। ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ দুটি অংশে বিভক্ত। বিমানবন্দর রুট (বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর) এবং পূর্বাচল রুট (নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত)।

এমআরটি লাইন-৫: নর্দান রুটটি ২০২৮ সালের মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত পাতাল ও উড়াল সমন্বয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে।

এমআরটি লাইন-৫: সাউদার্ন রুটটি ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে পাতাল ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এবং উড়াল ৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার।

এমআরটি লাইন-২: ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ জি২জি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে এমআরটি লাইন-২ নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে জাপান ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

এমআরটি লাইন-৪ এর নির্মাণকাজও শেষ করা হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। পিপিপি পদ্ধতিতে কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্রাকের পাশ দিয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল মেট্রোরেল হিসেবে এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন।

(ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :