কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:০১

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি এ্যান্ড উইমেন্স কলেজের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানির পর বিচার না পেয়ে লোকলজ্জার ভয়ে হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে গেছেন নির্যাতিতা। এ ঘটনায় অন্য ছাত্রীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তারা। এর আগেও এমন অপকর্মের কারণে সাময়িক বহিষ্কৃত হন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।

এরই মধ্যে কলেজ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণদর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।

নির্যাতিত শিক্ষার্থী ও কলেজে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাদারীপুরের প্রত্যন্ত এলাকা ডাসার উপজেলার দক্ষিণ ডাসারে অবস্থিত সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ। যেখানে ৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলার ৮শ’ শিক্ষার্থী পড়ালেখার সুবাধে আবাসিক হোস্টেলে থাকেন। তাদের মতো বেগম রোকেয়া ছাত্রীনিবাসে থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী পড়ালেখা করতেন।

গত ২৪ জুলাই একা প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে আনেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবদুস সামাদ তালুকদার। পরে কলেজের ২০৪ নাম্বার রুমের ভেতর যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ নির্যাতিতার।

সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা গেছে, বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষ জাকিয়া সুলতানা বরাবর বিচার চেয়ে লিখিত দেন ওই শিক্ষার্থীরা। ঘটনার দেড় মাসেও বিচার না পাওয়ায় হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে গেছেন নির্যাতিতা। এ ঘটনায় অন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় কলেজের কম্পিউটার অপারেটর হাফিজুর রহমানকেও হুমকি দিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মুঠোফোনে জানান, আমি স্যারকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। স্যার আমাকে একা প্রাইভেট পড়াতেন।ওই দিন আমাকে তিনি জড়িয়ে ধরেন এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। অনেক কষ্টে নিজেকে রক্ষা করি। পরে তিনি আমার পায়ে ধরে বলেন, এ ঘটনা তুমি কাউকে বলবা না। আমিও কাউকে বলব না। আমি তোমার কলেজের সকল বিষয় সাহায্য করব। কিন্তু এরপরে সেই কলেজের কম্পিউটার অপারেটরকে দোষ চাপিয়ে থানায় গড়ালো বিষয়টা। পরে আমি কলেজ হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে আসি।

এব্যাপারে সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজের কম্পিউটার অপারেটর হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি অধ্যক্ষকে জানালাম। পরে সামাদ স্যার এতে আমার ওপর ক্ষ্যাপে যান। এতে তিনি আমার নামে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে ডাসার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে বিচার দাবি করছি। যাতে কলেজের সব মেয়ে ঠিকঠাক পড়ালেখা করতে পারে, কারো কোন অসুবিধা না হয়।

অভিযুক্ত প্রভাষক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, এ ঘটনা সত্য নয়, আমি তাকে একা প্রাইভেট পড়াতাম। অধ্যক্ষের কাছে যে অভিযোগ দিয়েছে, আমি তার উত্তর দিয়েছি।

ডাসার থানায় সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভাষক আরো বলেন, ওই মেয়ের সাথে হাফিজুর রহমানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। হাফিজ আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।

এ বিষয়ে সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ জাকিয়া সুলতানা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণদর্শানো নোটিশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিনি নোটিশের জবাবও দিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান জানান, শিক্ষকের জিডির বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। আদালত থেকে নির্দেশনা এলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জুনে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কলেজটিতে যোগদান করেন আবদুস সামাদ তালুকদার। এর আগেও এমন অপকর্মের কারণে সাময়িক বহিষ্কৃত হন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :