ঢাবিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে সাংবাদিক হেনস্তা, তদন্ত কমিটি গঠন

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২২, ২৩:০৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলে সাংবাদিক হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাত ১১টায় হলের রিডিংরুমের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের নাম তাওসিফুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি অবজারভার পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।

এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তি চেয়ে প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক। পরে ঘটনা তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তুষার হোসাইন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন রিফাত এবং ফাইনান্স বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সিরাজুল ইসলাম।

তুষার ও রিফাত হল ছাত্রলীগ সভাপতি মারিয়াম জামান সোহানের অনুসারী। অন্যদিকে সিরাজুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের অনুসারী।

অভিযোগপত্রে তাওসিফ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রাত ১১:২০ নাগাদ হল ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা হলের রিডিং রুমে যাচ্ছিলেন। আমিও সেখানে দেখতে যাই এবং দুইটি রিডিং রুমে একই নির্দেশনা দেওয়ায় আমি ছোট করে বললাম 'অহ দ্যাট সেইম লেকচার' এবং বের হয়ে চলে আসতেছিলাম। তখন তুষার হুসাইন, মুনতাসির মামুন রিফাত এবং সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন আমার 'লেকচার' শব্দটি শোনেন এবং আমার পথ অবরুদ্ধ করেন। আমাকে বারবার জেরা করতে থাকেন। আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি বলি আমি জাতীয় দৈনিক অবজারভারের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার।’

ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘তারা আমাকে, সাংবাদিক সমিতি, সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। তুষার হুসাইন আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে একজন আমাকে ধাক্কা দেন। আমার ধারণা, তুষার হুসাইনের বিরুদ্ধে ডেইলি অবজারভারে ছিনতাইয়ের নিউজ করায় তিনি আগে থেকেই আমার উপর ক্ষিপ্ত। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বের হয়ে আসলে উনাদের আমি বিষয়টা অবগত করি। উনাদের উপস্থিতিতেই আমাকে শাসায় এবং উগ্রভাবে বারবার গায়ের দিকে তেড়ে আসে।’

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত তুষার হোসাইন বলেন, ‘গতকাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে আমরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে রিডিংরুমে যাই। তখন হলের একটা ছেলে নিজে নিজে আজেবাজে ভাষায় মন্তব্য করে বের হচ্ছিলো। তখন আমাদের একজন সিনিয়র তাকে বলে যে তুমি এরকম কেন করতেছ। তখন সে সাংবাদিক পরিচয় দিলে আমি তাকে বলি, তুমি কি সাংবাদিকতার পাওয়ার দেখাচ্ছ?’

ভুক্তভোগী ও সাংবাদিক সমিতির নেতাদের গালিগালাজ ও ধাক্কা দেয়ার অভিযোগের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি বা কেউ তাকে ধাক্কা দেয়নি। গালিগালাজও করিনি।’

অভিযুক্ত মুনতাসির মামুন রিফাত বলেন, ‘ও রিডিংরুম থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে বলেছে যে, বড় বড় লেকচার দিচ্ছে। তখন আমি বলেছি যে, কি বললা তুমি আবার বলো। তখন কিছু জুনিয়র উল্টা-পাল্টা কথা বলেছে। আমি ওদের থামিয়ে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান সোহান বলেন, ‘আমরা রিডিং রুম থেকে বের হয়ে কোন ধাক্কাধাক্কি বা গালাগালি শুনিনি। একটু জটলা দেখেছি। পরে আমি তাওসিফকে বলেছি তুমি আমার সাথে আসো। আর তুষার ওদের সরিয়ে দিয়েছি।’

সূর্যসেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। হলের আবাসিক শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজকে রাতেই ওনারা সকলের সাথে বসবেন। বসে কথা বলবেন। এতে যদি কারো দোষ বা অপরাধ থেকে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি জানতে পেরেছি এবং আমি হল প্রভোস্টকে বলে দিয়েছি যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/এসকে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :