নানা উদ্যোগেও বাড়ছে না রিজার্ভ, কাটছে না ডলার সংকট

রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা রকম উদ্যোগ নিলেও দিন দিন রিজার্ভের পরিমাণ কমছেই। আর বাজারে ডলারের সংকট এখনও কাটেনি। ব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের দামে অস্বাভাবিক ব্যবধান আছে। ফলে বিদেশ ভ্রমণে যেতে অনেকে এখন ডলারের বিপরীতে গন্তব্য দেশের মুদ্রা এর্ন্ডোস করছেন।
এছাড়া অনেকে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ডলার মজুত করে রাখছেন। এটিও বাজারে ডলার সংকটের কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকারকে হুন্ডি ঠেকাতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে মেরুদন্ড শক্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতি ধনী লোকরাও যেন ঘন ঘন বিদেশে না যেতে পারে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এদিকে রিজার্ভ ধরে রাখতে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য বাদে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার। রপ্তানি বাড়ানো এবং প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরেও এই দুই সূচকে রয়েছে প্রবৃদ্ধি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এদিকে রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়ায় আয়ের সাথে ব্যয় মিলছে না। এজন্য দিন দিন রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করলে পরিমাণ দাঁড়াবে ২৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
ঋণ দেওয়ার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে কিছু সুপারিশ করেছে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) সরবরাহ করা ৭ বিলিয়ন, শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০ কোটি, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত, গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। যা আইএমএফের হিসাব পদ্ধতির সাথে মিলছে না বলে জানিয়েছেন প্রতিনিধিদল।
এদিকে রেমিট্যান্সের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসলেও পরবর্তীতে রেমিট্যান্সের ধারা নিম্নমুখী। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ২৫ দিনে ১৩৪ কোটি ৭১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম ২৫ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার আর বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০৭ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪ লাখ ডলার এবং বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে দুই কোটি ৮৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
রপ্তানি আয়েও বড় ধাক্কা লেগেছে। এসবের কারণে রিজার্ভে চাপ আরও বাড়ছে। রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হুণ্ডি প্রতিরোধের বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছে না। এর ফলে বিপাকে পড়ছেন বেশ কয়েকটি খাতের ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বৈধ উপায়ে আসা রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা, অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নিলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে না।
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের রপ্তানি আয় এবং রেমিটেন্স দুটোই নিম্নমুখী। আগে যখন বেশি ছিল তখন হিসেব করে চলা দরকার ছিল। এখন রিজার্ভ কমে যাওয়ায় তা ধরে রাখার জন্য নতুন এলসি খোলা বন্ধ করাসহ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনও সবাই চেষ্টা করলে ঠিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। নতুবা বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। হুন্ডি ব্যাসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশে এক শ্রেনির লোক অতি ধনী হয়েছে ঋণ খেলাপি করে, বেশী দামে কন্ট্রাকিং কাজ করে। এরা আবার ডলার পাচার করছে। ‘ডলার ধরে রাখতে অতি ধনী লোকেদের নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। তারা যেন ঘনঘন বিদেশে না যেতে পারে।’
এদিকে বাজারে ডলার সংকটের আরেকটি কারণ অনেকে আবার স্টক করে রাখছে। হুন্ডি ঠেকাতে ডলারের সরকারি রেট আর বাজার রেট কাছাকাছি হওয়া উচিত।–যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।
আবু আহমেদ আরও বলেন, ‘দেশে সামাজিক আর রাজনৈতিক অস্তিরতাও অর্থ পাচারের জন্য দায়ী। অতি ধনীরা সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বিদেশে বাড়ি গাড়ি বানায়।’
(ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এফএ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

অনিশ্চয়তায় অল্প অল্প করে হজের টাকা জমানো মানুষ

আদালতের আদেশ মানছে না পাট অধিদপ্তর, কথা বলতেই রাজি নন ডিজি

রোজা-ঈদ: ছিনতাই-ডাকাতি ঠেকাতে ঢাকাজুড়ে নজরদারি

কাজ অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প সমাপ্ত

তাহলে ৪৪৭ কোটি টাকার ট্যাবের কী হবে

পথে নামলে সংসার চলে আব্দুল আলীর

রাজধানীজুড়ে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া হর্ন, কে থামাবে?

টিকে থাকার লড়াইয়ে পোশাক শিল্প

‘ইয়াবা কারবারে’ কম্পিউটার অপারেটরের শতকোটি টাকার সম্পদ
