যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন কোলেস্টেরল বেড়েছে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৪| আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫০
অ- অ+

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়মের কারণে শরীরে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। অন্যদিকে কিছু অভ্যাস আছে যেমন ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবন এসব কারণেও বেড়ে যায়। আর কিছু রোগ রয়েছে কোলেস্টেরলের জন্য দায়ী ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি। আর কিছু ওষুধ আছে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

কোলেস্টেরল হল একটি চর্বি জাতীয় পদার্থ যা শরীরের কোষে পাওয়া যায়। লিভার কোলেস্টেরল তৈরি করে এবং অনেক খাবারের মধ্যেও কোলেস্টেরলও পাওয়া যায়। শরীরের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সীমিত পরিমাণে কোলেস্টেরল প্রয়োজন, কিন্তু যখন কোলেস্টেরল অত্যধিক বৃদ্ধি পায়, তখন এটি রক্তনালীতে রক্ত ​​​​প্রবাহকে বাধা দিতে শুরু করে। এর ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে এবং হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে থাকে। অল্প বয়সেও কোলেস্টেরল বাড়তে পারে, তাই সময়মতো উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণগুলো চিনতে হবে।

চিকিৎসকদের মতে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে কি না, তা বুঝতে সব সময় রক্তপরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। রক্তে বেশি কোলেস্টেরল এলেই শারীরিক নানা সমস্যা শুরু হতে পারে। এর প্রভাব শরীরের বহিরঙ্গেও দেখা দেয়। তাই একটু সচেতন হলেই বুঝে যাওয়া যায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে কি না।

রক্তে ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে গেলেই কোলেস্টেরলের সমস্যা শুরু হয়! এর ফলে ধমনীর দেওয়ালগুলোতে মেদ জমতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সরু হতে শুরু করে ধমনীগুলো, ব্যাহত হয় রক্ত সঞ্চালন। ধমনী সরু হয়ে গেলে পাকস্থলী, প্লীহা ও যকৃতেও ঠিক মতো রক্ত সঞ্চালন হয় না। অন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী নালিগুলোর পথ মেদের কারণে সরু হয়ে অন্ত্রে পেরিফেরাল আর্টারি ডিসি়জ় হতে পারে। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত ছড়িয়ে পরে ধমনীর মধ্য দিয়ে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেই ধমনীগুলোর ভিতর স্নেহ পদার্থের আস্তরণ তৈরি হয়। ফলে রক্ত চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে আসতে পারে। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘প্লাক’ তৈরি হওয়া। এই ধরনের প্লাক তৈরি হলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত পৌঁছনোয় সমস্যা দেখা দেয়। দেহের প্রান্তিক অঙ্গগুলির ধমনীতে তৈরি হওয়া এই সমস্যাকেই বলে ‘পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ’ বা ‘পিএডি’। অন্ত্রে এই সমস্যা দেখা দিলে সেই অংশের টিস্যুগুলিরও ক্ষতি হয়। এই কারণে রোগীর বারে বারে মলত্যাগের বেগ আসে কিংবা মলের সঙ্গে রক্তপাত হয়। এমনটা কি আপনার সঙ্গেও হয়? তা হলে কিন্তু এটি কোলেস্টেরলের লক্ষণ হতে পারে।

কোলেস্টেরল কয়েক ধরনের হয়ে থাকে ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল এবং টোটাল কোলেস্টরল। এর মধ্যে একটা হলো উপকারী। আর তিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই কোলেস্টেরল মাত্রা বেড়ে গিয়ে জমা হয় রক্তনালিতে। জমা হতে হতে রক্তনালির স্বাভাবিক যে রক্তস্রোত তা বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এতে শরীরের যেমন ক্ষতি হয় তেমনই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গও বিকল হয়ে যেতে পারে যে কোনও সময়ে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা ভীষণ জরুরি। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যায় কোলেস্টেরল বেড়েছে না ঠিক আছে। এছাড়াও যাদের উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে তাদের মধ্যে বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে যা দেখলেও বোঝা যায়। রক্তে বেশি কোলেস্টেরল এলেই শারীরিক নানা সমস্যা শুরু হতে পারে।

চোখের নীচে বা চোখের পাতায় সাদাটে বা হলদেটে ব্যথাহীন ফোলা অংশ দেখা দিলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করান। এতে চোখের কোনও সমস্যা দেখা না দিলেও এটি রক্তে কোলেস্টেরল থাকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ।

কিছু দিন ধরে মাঝেমাঝে বুকে ব্যথা হচ্ছে, অথচ ইসিজি রিপোর্টে তেমন কিছু সমস্যা খুঁজে পাননি? এমন হলে এক বার রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিন, রক্তে কোলেস্টেরল প্রবেশ করেছে কি না।

হাতের তালুর অপরদিকের গাঁট ফুলে গেলে সাবধান হতে হবে।

কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় যার কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা শুরু হয়। পেশীতে ব্যথা এবং চাপ বিশেষত পায়ে ব্যথা অনুভূত হয়।

হঠাৎ ওজন বেড়ে গেলে তা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ওজন নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে বুকে ব্যথা হওয়া শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাতে হবে এবং একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সিঁড়ি বেয়ে ওঠা এবং নামার সময় অতিরিক্ত ঘাম এবং অস্থিরতা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অর্থ হতে পারে।

কোলেস্টেরল জমলে মস্তিষ্কেও রক্ত সঞ্চালন কমে। এই কারণে ঘাড়ে ও মস্তিষ্কের পিছনের দিকে মাঝে মাঝে একটানা ব্যথা হয়।

শারীরিক পরিশ্রম করলে বা কোনও উদ্বেগের কারণে হৃদ্‌স্পন্দনের হার বেড়ে যেতেই পারে। কিন্তু কোনও কারণ ছাড়াই কি মাঝেমাঝেই কি হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে যায়? এমনটা হলে আর সময় নষ্ট না করে রক্ত পরীক্ষা করান।

খুব ভাল করে লক্ষ করে দেখুন তো, চোখের মণির চারপাশে ধূসর রঙের কোনও গোল দাগ দেখা যাচ্ছে কি না। তা হলে জানবেন, তা চোখের সমস্যা নয়, বরং কোলেস্টেরলের কারণেই এমনটা হচ্ছে। তাই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে অনেক সময়ে কমলা চাকা চাকা দেখা দেয় ত্বকে। সাধারণ র‌্যাশের মতো নয়। কিছুটা হলদেটে ভাব থাকে। বিশেষ করে চোখের উপরে দেখা যায় এই ধরনের ফোলা ভাব।

অনেক সময়ে আবার মোমের মতো ফোলা ভাব দেখা দেয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে। হাত কিংবা গলায় এমন দাগ দেখে অনেকেই অ্যালার্জি ভাবতে পারেন। কিন্তু তা নয়। কাছে গেলেই বোঝা যায়, এর মধ্যে তেলতেলে ভাব আছে আবার হঠাৎ কিছু দিনের জন্য লালচে ভাব দেখা দেয় ত্বকে। তা আবার সেরেও যায় দিন কয়েকের মধ্যে।

জন্ডিস হলেও চোখের নিচে হলদে ভাব দেখায় তা কিন্তু নয়, কোলেস্টেরল বেশি মাত্রায় থাকলেও চোখের নিচে হলদেটে ভাব দেখায়। এতে দেখতে কোনও সমস্যা হয় না কিন্তু একটানা বেশিদিন এরকম থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক সময় রক্তনালি আটকে যায়। তখন মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে বাধা পড়ে। এতে ঘাড় ও মাথার পিছনে ভীষণ ব্যথা হয়। শুধু মাথাতেই নয়, ঘাড়েও অস্বস্তিকর ব্যথা হয়।

হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া শুধুমাত্র ব্যায়াম শারীরিক পরিশ্রম অথবা টেনশনের কারণেই হয় না। কখনও কখনও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলেও অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হতে পারে। যার থেকেই স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

অত্যধিক পরিমাণে ধূমপান, অ্যালকোহল পান, অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাওয়ার খেলে যে কোনও সময় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। নিয়মিত ফল, টাটকা শাক-সবজি অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। তাহলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ঢাকাটাইমস/১২ জানুয়ারি/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট ধরে রাখতে হবে: ড. মঈন খান
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ জায়গায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে: আসিফ মাহমুদ 
আ.লীগ সরকারের করা বন্দি বিনিময় চুক্তিতেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব: দুদক চেয়ারম্যান 
ক্ষতিগ্রস্ত তিন রিকশা চালককে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান ডিএনসিসির, চাকরির প্রতিশ্রুতি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা