আন্দোলনকারীদের আইনি সুরক্ষা এবং গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৩৮| আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৮:০৬
অ- অ+

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের জাতীয় বীর, আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে আইনি সুরক্ষা এবং গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল পাঁচটা ২০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় উন্মুক্ত বৃষ্টির মধ্যে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আগামী নির্বাচিত সরকারের সংবিধানের তফসিলে এই ঘোষণাপত্র সংযুক্ত করা হবে।

ঘোষণা পত্রে বলা হয়-

যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগনিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে;

এবং

যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণী, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়;

এবং

যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত;

এবং

যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রীম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়;

এবং

যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়;

এবং

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;

এবং

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;

এবং

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গনঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

এবং

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

এবং

সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে।

এবং

বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।

এবং

৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রনয়ণ করা হলো।’

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা বিকেল পাঁচটায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় খোলা চত্বরে পাতা চেয়ারে আসন নেন।

বৃষ্টির মধ্যে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর জুলাই শহীদ ও আহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে প্রদর্শিত হয় জুলাই অভ্যুত্থানে আহত-নিহতের নিয়ে তৈরি প্রামাণ্যচিত্র।

এরপর ৫টা ২০ মিনিটে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা। শেষ হয় ৫টা ৩৪ মিনিটে।

এদিকে প্লাজার সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজিত হয়েছে দিনব্যাপী জুলাই জাগরণ অনুষ্ঠান। এই দুই অনুষ্ঠান ঘিরে লোক সমাগমে ভরপুর হয়ে উঠেছে দেশের সুপ্রশস্ত এভিনিউটি।

(ঢাকাটাইমস/৫আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপন
ফাঁস হয়েছে অডিও/ তাপসকে বিমানবন্দরে আটকা দেয় ইমিগ্রেশন, ফোনে সহায়তা চেয়েছিলেন শেখ হাসিনার
`জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে' জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপন
জুলাই ঘোষণাপত্রে যা আছে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা