সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণ-আগুন: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ২১:৫৫ | প্রকাশিত : ০৪ মার্চ ২০২৩, ২০:০৫

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা রি রোলিং মিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও এই ঘটনায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে কদমরসুল এলাকার সীমা রি রোলিং মিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে এ বিস্ফোরণের ঘটে।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড কুমীরা স্টেশনের একে একে নয়টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী থেকে মিলিটারি পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্সও ঘটনাস্থলে যায়।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি বলেন, বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ওই অক্সিজেন প্লান্টে বিকট বিস্ফোরণ হয়। অক্সিজেন রিফুয়েলিং করার সময় এ বিস্ফোরণ ঘটে। সেসময় মিলের ভেতরে অনেকেই কাজ করছিলেন। ফলে অনেক মানুষ হতাহত হন। পরে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে বিস্ফোরণে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট এক প্রকার লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্ফোরণে প্ল্যান্টের দেয়াল ভেঙে পড়েছে। প্লান্টের মেশিনারিজ ও জিনিসপত্র যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আশপাশে টিনের টুকরা পড়ে রয়েছে। প্ল্যান্টটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। চারটি ট্রাকে আগুন ধরে যায়। এগুলোও দুমড়েমুচড়ে যায়।

বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল তিন কিলোমিটার দূর থেকেও শব্দ শোনা গেছে। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে আধা কিলোমিটার এলাকায় বাড়িঘর ও অফিস-আদালত কেঁপে ওঠে। বিকট শব্দে অনেক স্থাপনার কাচ ভেঙে যায়। দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি দুর্ঘটনাস্থল থেকে উড়ে যাওয়া প্ল্যান্টের একটি লোহার টুকরার আঘাতে আধা কিলোমিটার দূরে এক ব্যক্তি নিহত হন। তাঁর নাম মো. শামসুল আলম। এ সময় তিনি একটি দোকানে বসেছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম।

ঘটনাস্থলে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, এ পর্যন্ত ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে অক্সিজেন প্ল্যান্টের ভেতর থেকে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকজনের মরদেহ প্ল্যান্টের বাইরে থেকে উদ্ধার করা হয়।

তবে সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদৎ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ছয়জন নিহতের খবর পেয়েছি। এদের মধ্যে দুজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আছে। বাকিদের মরদেহ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের নাম জানা গেছে। সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার শামসুল আলম (৬৫) ছাড়াও অন্য নিহতরা হলেন-সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা ফরিদ (৩৪), নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার ছোট মনগড়া গ্রামের মিকি রেঙি লখরেটের ছেলে রতন লখরেট (৪৫), নোয়াখালীর সুধারাম থানার অলিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (৫০) এবং লক্ষ্মীপুরের মো. সালাউদ্দিন।

এছাড়া দুর্ঘটনায় দগ্ধ হওয়াসহ আহত হয়েছেন ৩০ জন। তাদের মধ্যে নয়জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- মো. নূর হোসেন (৩০), মো. আরাফাত (২২). মোতালেব (৫২), ফেনসি (৩০), মো. জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), মো. ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬) ও মো. জাহিদ হাসান (২৬)।

স্বজনদের আহাজারি

চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণে কারও হাত-পা উড়ে গেছে। কারও বের হয়ে গেছে নাড়ি-ভুড়ি। হতাহত ও স্বজনদের আহাজারিতে মেডিকেল কলেজে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চমেকের পরিচালক শামীম আহসান।

তিনি আরও জানান, আহতদের চিকিৎসাসেবার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

চিকিৎসার খরচ দেবে সরকার

জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার সব খরচ ও ওষুধ দেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটি গঠন

বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী

সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল। শনিবার বিকালে বিস্ফোরণ ঘটলে সেখানে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা চালায়। এরপর তাদের সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।

প্রসঙ্গত, সীতাকুণ্ডের একই এলাকায় ২০২২ সালের ৪ জুন রাতে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশত প্রাণহানির সঙ্গে বহু মানুষ আহত হন। বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের প্ল্যান্টের দূরত্ব আধা কিলোমিটার।

(ঢাকাটাইমস/০৪মার্চ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :