নিরাপদ পানি সরবরাহে কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার

মো. খসরু চৌধুরী (সিআইপি)
 | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৯

২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পানি দিবস’ পালন হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম বড় বড় করে বিলবোর্ডে ছাপা হতো কিংবা বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হতো পত্রিকার পাতায়। ফিটকিরি, ক্লোরিন ট্যাবলেট কিংবা পাতন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় একসময় পানি বিশুদ্ধ করার চেষ্টা হতো। এই সেদিনও আমরা পানি ফুটিয়ে তারপর ঠান্ডা করে পান করতাম। এখন সেদিন নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা পাচ্ছেন।

এসডিজির নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই আমরা শত ভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চায় সরকার। মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আওতায় আনার লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। সারাদেশে সুপেয় পানির যে সমস্যা তা সমাধানে সরকার গঠনের পর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার সরকার জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৬ অর্জনের লক্ষ্যে টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও এর প্রয়োগ, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব উন্নত টয়লেট নির্মাণ ও ব্যবহার এবং স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। অথচ গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে ২৪০ কোটি মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ মানুষ মারা যায়, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়।

শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে। গড় আয়ু বেড়েছে, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে; নবজাতক ও প্রসূতিদের মৃত্যুর হার কমেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষায় জোর দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষাকে পৃথক করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর গড়ে তোলেন। বর্তমানে ৩৭টি সরকারি ও ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ছয়টি আর্মড ফোর্সেস ও আর্মি মেডিকেল কলেজ, একটি সরকারি ডেন্টাল কলেজ, আটটি ডেন্টাল ইউনিট, ১২টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, ১৪টি বেসরকারি ডেন্টাল ইউনিট, ২৮টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রতিষ্ঠান, ১৩টি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রতিষ্ঠান, ৯টি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, ২০০টি বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রশিক্ষণ স্কুল, ১১টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এবং ৯৭টি বেসরকারি ইনস্টিটিউশন অব হেলথ টেকনোলজি পরিচালিত হচ্ছে। গত ১৪ বছরে সারা দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরিসীম মমত্ববোধ নিয়ে শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের স্বাস্থ্যখাত এখন অনেক অগ্রসর। গ্রামীণ জনপদে এই সেবা বিস্তৃত হয়েছে। গ্রামীণ দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও সর্বস্তরের জনগণের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা প্রদান, স্বাস্থ্যখাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, মাঠপর্যায়ে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং সকল স্তরের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে মৌলিক চিকিৎসা চাহিদা পূরণ, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল, অসংক্রামক রোগসমূহের ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধে ব্যাপক উদ্যোগ, পুষ্টি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সূচকসমূহের ব্যাপক অগ্রগতিতে স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে অভূতপূর্ব অর্জন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে বহু দূর। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এখন সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নদীভাঙন রোধে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি যে সব নদী তার নাব্য হারিয়ে ফেলেছে সেব নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বেই কীভাবে নদীভাঙন রোধ করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করছে।

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। নদী গুলোই এ দেশের প্রাণ। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৭০০ টি নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২২,১৫৫ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

নদী রক্ষায় গঠন করা হয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদীর অবৈধ দখল, পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্প কারখানা কর্তৃক সৃষ্ট নদী দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌ-পরিবহনযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে এ কমিশন গঠিত হয়েছে।

বর্তমান সরকার নদী রক্ষায় সচেতন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী রক্ষার কথা বলেছেন। শরীরে রক্ত চলাচলে যেমন শিরা উপশিরা প্রয়োজন তেমনি নদী দেশের সকল ধরণের প্রবাহ রাখতে সহযোগিতা করে।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :