ট্রমা সেন্টার নিজেই ‘ট্রমাটাইজড’, সেবাবঞ্চিত আহতরা

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)
 | প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৬:৪৪

সারাদেশে দুর্ঘটনাপ্রবণ ২১টি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ট্রমা সেন্টার। অথচ এগুলোর অধিকাংশের নেই কোনো কার্যক্রম। দু-একটি চালু থাকলেও তাতে নেই পূর্ণাঙ্গ সেবা। ফলে আহতদের দুর্ভোগ কমেনি।

সেগুলোর একটির অবস্থান ঢাকার পার্শ্ববর্তী উপজেলা ধামরাইতে। প্রায় ১১ বছর আগে ট্রমা সেন্টারের ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনো সেন্টারটি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থেকে ভবনের দেয়ালের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পরার পাশাপাশি জানালা ও লোহার গেটগুলোতে ধরেছে মরিচা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধামরাইয়ের ইসলামপুর এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরেই এই ট্রমা সেন্টারটির অবস্থান। ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায় মূল ফটকে ঝুলছে তালা। সামনে জমে আছে ময়লা আবর্জনা। লোহার কেঁচি গেটে মরিচা পড়েছে। ভবনটির বাইরে থেকে ভেতরের বিভিন্ন অংশে দেখা যায় ধুলোবালির পুরো আস্তরণ। ভবনের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে লতা পাতা গজিয়ে গেছে। ছাদে বেড়ে উঠেছে ছোট আকৃতির বট গাছ। ভবনের দ্বিতীয় তলার কার্ণিশে ৫টি এসির বাইরের অংশে জমে আছে ধুলোবালি। সন্ধ্যা হলেই ভবনের পেছনের অংশে মাদক সেবনকারীদের আনাগোনা বেড়ে যায় বলে জানান স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালের মার্চে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যায়ে ৩ তলা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০১২ সালে ভবনটির নির্মান কাজ শেষ হয়। ওই সময়ে সাভার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ঢাকা জেলার সিভিল সার্জনকে ট্রমা সেন্টার ভবন হস্তান্তর গ্রহণের অনুরোধ জানান। সিভিল সার্জন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তৎকালীন ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানান। ওই কর্মকর্তা ভবনটি সমাপ্ত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ৩ সদস্যের যাচাই কমিটি গঠন করে। কমিটি একই বছরের ১২ মে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে ট্রমা সেন্টারে সোলার প্লান্ট স্থাপন করা হয়নি, বৈদুতিক সংযোগ ও নিরাপত্তা বাতি নেই, লিংক করিডোরের কাজ সমাপ্ত নয়, অ্যাপ্রোচ সড়কে কার্পেটিং করা হয়নিসহ বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরে। পরে বিষয়টি সিভিল সার্জন ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিভিন্ন সময় গণপূর্ত বিভাগে কাজ সমাপ্ত করে ভবনটি হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে ভবনটি যে অবস্থায় আছে সেভাবেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। তবে কর্তৃপক্ষ কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানান। সর্বশেষ চলতি বছরের ২ জানুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গণপূর্ত বিভাগে অসম্পন্ন কাজ সমাপ্ত করে ভবনটি হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হলেও এখনো সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূর রিফফাত আরা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ভবনটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। তবে এব্যাপারে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ তারা এখনো নেয়নি। ট্রমা সেন্টারটির কার্যক্রম শুরু করতে পারলে সড়ক দুর্ঘটাপ্রবণ এই এলাকায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো পাশাপাশি স্থানীয়রা বাসিন্দারাও এর সুবিধা ভোগ করতে পারতেন।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার ফেনীর মহিপাল, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, ঢাকার ধামরাই, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গাসহ ১০ জেলায় ট্রমা সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩০ কোটি টাকা। পরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও উদ্যোগটি চলমান থাকে। গত ১২ বছরে নতুন করে আরও ১১টি সেন্টার তৈরি করে তারা। কিন্তু সেগুলোও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :