পুরান ঢাকার রজব আলী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:০২

পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামি মিলন সিকদার ওরফে চাপা মিলনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

রবিবার দুপুরে র‍্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) ফারজানা হক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার গভীর রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর কোতোয়ালি থানার নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামি মো. মিলন সিকদার ওরফে চাপা মিলনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত চাপা মিলনের বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহত রজব আলী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। কিন্তু রজব আলীর বাসা ছিল লালচাঁন মোকাল্লেম পাড়ায়। আর গ্রেপ্তারকৃত মিলনের বাসা ছিল যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায়। তারা পরস্পর বন্ধু হলেও এলাকা ভিত্তিক উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে গ্রুপিং ছিল। রজব আলী আর মিলন দুজনেই মাদকাসক্ত ছিল। তারা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দল বেধে মাদক সেবন করত। একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন রজব আলী তাদের মাদক সেবনের সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে। পরবর্তীতে জামানতের টাকা পরিশোধ না করেই তারা রজব আলীর কাছে জামানত দেওয়া মোবাইলটি দাবি করে।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। ওই শত্রুতার জের ধরে রায়সাহেব পাড়া এলাকার ছেলেরা এই মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি জিকুর ২০২২ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তান হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। জিকুর নেতৃত্বে মো. মিলন ওরফে চাপা মিলনসহ রহিম ওরফে আরিফ, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু নিহত রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে।

২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার নবাবপুরে মোবাইলের দোকানে রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে যায়। তখন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও চার থেকে পাঁচজন রজব আলীকে ঢাকা জজ আদালতের পেছনে ১৬/এ কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা আর মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে। তরা রজব আলীকে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে রজব আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

তখন রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়। রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।

ওই রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর গ্রেপ্তারকৃত মিলনসহ সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রজব আলী হত্যার পর থেকেই মিলন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গাজীপুরে আত্মগোপনে চলে যায়। সেখানে এক মাস অবস্থান করে জায়গা পরিবর্তন করে রাঙামাটিতে ১৫ দিন, বরিশালে এক মাস থাকেন। পরে ঢাকায় আসার পরে তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে চার বছর জেল খেটে ২০১৫ সালে জামিনে বের হন।

জামিনে বের হয়ে তিনি বেশ পরিবর্তন করে আবার পলাতক জীবনযাপন শুরু করেন। পলাতক থাকা অবস্থায় তিনি রাজধানীর বিভিন্ন বাসে হেলপারি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে নিজে গাড়ি চালনা শিখে বাসচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। আর একটি ছেলে রয়েছে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটার আন্তঃজেলা বাস চালানোর সুবাদে তিনি তার পরিবার নিয়ে বর্তমানে কুয়াকাটার মহীপুরে একটি ভাড়া বাসায় নকল নাম পরিচয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তাকে কোতওয়ালী থানায় থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মো. মিলন সিকদার ওরফে চাপা মিলন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার চৌদ্দ বুড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান সিকদারের ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/এএ/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :