অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার

রেজাউল করিম হীরা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ মে ২০২৩, ০৯:৩১ | প্রকাশিত : ০৯ মে ২০২৩, ০৯:০১

অস্থির দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। রেকর্ড পরিমাণ আমদানির পরও কাটছে না সংকট। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানো হলেও স্থিতিশীল হচ্ছে না বাজার। এ অবস্থায় দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের বাজারে এখন ভোজ্যতেলের কোনো সংকট না থাকলেও সিন্ডিকেটের কবলে বাড়ছে দাম। মিলগুলোর কারসাজির কারণে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মালিক মেসার্স সবুজ কমার্শিয়াল শাহেদ উল আলম বলেন, ‘কিছু কিছু মিল আমাদের তেল সরবরাহ করছে না। তাদের চাহিদা হচ্ছে বর্ধিত ভ্যাটের টাকা তাদের দিতে হবে।’

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স আর এন ট্রেডার্সের মালিক আলমগীর পারভেজ বলেন, ‘কয়েকটি মিল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় খুচরা পর্যায়ে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র তিনটি মিল তেলের সরবরাহ সচল রেখেছে।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে নানা সংকট সত্ত্বেও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৬৯ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন তেলের পাশাপাশি এক লাখ ৭৮ হাজার ৩৬৭ মেট্রিক টন পাম তেল রয়েছে, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছরের একই সময়ে ৬৬ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন তেলের পাশাপাশি এক লাখ ৪ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন পাম তেল আমদানি করা হয়। নতুন করে আরও এক কোটি ১০ লাখ লিটার আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির নির্ধারিত প্রতি লিটারের দাম ১৪৬ দশমিক ১০ টাকা। সে হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৪৮ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকা। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে দুই লিটারের পেট বোতলে এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান গুভেন ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

জানা গেছে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব গত ২৩ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

সূত্র জানায়, টিসিবি কর্তৃক এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আন্তর্জাতিকভাবে ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা,২০০৮ অনুসরণ করে গত ১৬ এপ্রিল তারিখে সয়াবিন তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গুভেন ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেড, মহারাষ্ট্র, ভারত (স্থানীয় এজেন্ট: এইচএইচ এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা) এর কাছ থেকে সয়াবিন তেল সরবরাহের জন্য দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ সয়াবিন তেল জাহাজীকরণ সম্পন্ন করার শর্ত দেওয়া হয়।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান গুভেন ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ২ লিটার পেট বোতলে ১.২৬ ডলার মূল্যে (১ ডলার=১০৭.০০ টাকা) ক্রয়ের সুপারিশ করে।

সূত্র আরও জানায়, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দর ও দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দরের প্রতিলিটারের পার্থক্য প্রতিলিটারে ০.০৩ ডলার কম। নির্ধারিত দরে টিসিবির গুদাম পর্যন্ত খরচ (ভ্যাট, এআইটি, পিএসআই ফি, মেরিন ইন্স্যুরেন্স, পোর্ট চার্জ, শিপিং এজেন্ট চার্জ,স্টিভডোরিং চার্জ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কমিশন,ক্যারিং চার্জ ইত্যাদিসহ) প্রায় ১৪৬.১০ টাকা প্রতি লিটার, যা বর্তমানে স্থানীয় বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উল্লেখ্য, বর্তমানে স্থানীয় বাজারে সয়াবিন তেলের প্রতিলিটারের গড়মূল্য ১৮২.৫০ টাকা। নির্ধারিত দর বর্তমান স্থানীয় বাজারমূল্য থেকে ৩৬ দশমিক ৪০ টাকা কম। এর আগে, গত ২৭ মার্চ তারিখে উন্মুক্ত দরপত্রের (জাতীয়) মাধ্যমে ২ লিটার পেট বোতলে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭৩ দশমিক ৯৫ টাকা দরে দরপ্রস্তাব পাওয়া গেছে; যা থেকে মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত দর ২৭ দশমিক ৮৫ টাকা কম।

(ঢাকাটাইমস/০৯মে/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :