নোবেলের যত বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ মে ২০২৩, ১৫:৫৯ | প্রকাশিত : ২০ মে ২০২৩, ১৫:২৮

বিতর্ক ও গায়ক নোবেল যেন একই সুতোয় গাঁথা। বিভিন্ন সময় উদ্ভট মন্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য খবরের শিরোনামে এসেছেন বহুবার।

ভারতীয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার সংগীতবিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘সা রে গা মা পা’-তে অংশ নিয়ে দুই বাংলায় পরিচিতি পান নোবেল। তার দারাজ কণ্ঠের গায়কীতে শুরুতে অনেকেই তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেই মুগ্ধতা ধরে রাখতে পারেননি নোবেল। উল্লেখযোগ্য কাজ তো দেখাতে পারেনই নিয়ে কুড়িয়েছেন নিন্দা। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য এদিকে সাম্প্রতি এ গায়কের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ ও তার নামে রাজধানীর মতিঝিল থানায় হওয়া প্রতারণার মামলায় আজ শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

বিতর্কের শুরু ‘সা রে গা মা পা’ দিয়েই

নোবেলের বিতর্ক শুরু হয় ২০১৯ সালে ‘সা রে গা মা পা’-এর প্রাথমিক ফলাফলে যখন তাকে তৃতীয় ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নোবেল ভক্তদের ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়। নোবেলকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল সকল বিচারকদেরও। কয়েকটি পর্বে নোবেলের গান শোনার পরই বিচারকরা তাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার বলে ঘোষণা করেছিলেন। যদিও এই বিতর্কটা নোবেলের পক্ষে থাকলেও এরপর থেকে বিতর্ক নোবেলকে ঘিরে ধরে। ‘সা রে গা মা পা’ অনুষ্ঠানে দেশের নামকরা গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুর করা ‘মা’, ‘বাবা’, ‘এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়’ শিরোনামের তিনটি গান গেয়ে শোনান তিনি। কিন্তু গানের শিল্পীদের নাম বললেও কোনোবারই নোবেল গান তিনটির স্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদের নাম উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ ঝাড়েন প্রিন্স মাহমুদ। পরে অবশ্য সোনারগাঁ হোটেলে আয়োজিত গীতিকারের জন্মদিনে উপস্থিত হয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন নোবেল।

দাবি তুলেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বদলানোর

২০১৯ সালের আগস্টে একটি লাইভ সাক্ষাৎকারে হাজির হয়ে নোবেল বলেন, “রবীন্দ্রনাথের লেখায় নয়, প্রিন্স মাহমুদের লেখায় আমার সোনার বাংলাকে বেশি ভালোভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। এই গানের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের আবেগ। বাংলাদেশের সঙ্গে, বাংলার মানুষের সঙ্গে এই সোনার বাংলার যোগ অনেক বেশি। এমনকি জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটিই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল হয়েছিল। আমিও এ বিষয়ে একমত।”

নোবেলের এই সাক্ষাৎকার প্রচার হওয়ার পর তা দেখে ফুঁসে ওঠেন স্বয়ং তার ভক্তরাই। যে নোবেলকে তারা ভালোবেসে মনের আসনে ঠাঁই দিয়েছিল, জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলায় সেই নোবেলকে তারা ছুঁড়ে ফেলে দেন।

দাবি জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যচর্চা বয়কটের

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যচর্চা বয়কটের দাবি জানিয়ে বিশ্বকবিকে ব্রিটিশদের চাটুকার বলে কটাক্ষও করেছেন নোবেল! ২০২২ সালের আগস্টে নিজের ফেসবুক আইডিতে নোবেল লিখেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর রাবীন্দ্রিক সাহিত্যচর্চা অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে বয়কট করা হোক। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল! বিদ্রোহী কবি; যখন আমাদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ছিলেন। রোজ রোজ ব্রিটিশদের কাছে কারাবন্দি হতেন। কনডেম সেলে টর্চারের শিকার হচ্ছিলেন। তখন ব্রিটিশদের চাটুকারিতা করে সো-কল্ড বিশ্বকবি বিন্দাস আমাদের বাপ-দাদার রক্ত চুষে খাচ্ছিল।’ পরবর্তীতে বিতর্কিত ইউটিউবার হিরো আলমকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বিকৃত করে নজরুল ও রবীন্দ্রসংগীত গাইতে নিষেধ করা হলে সেই প্রসঙ্গ টেনে নোবেল তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ-নজরুল তো আর নবী কিংবা দেবতা না যে তাদের গান প্যারোডি আকারে গাওয়া যাবে না! রবীন্দ্রনাথ এদেশের কবিদের মূল্যায়ন করে যাই নাই। তারে নিয়ে যে এদেশে চর্চা হয় এটাই রবীন্দ্রনাথের জন্য বেশি। বাংলাদেশের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান নিতান্তই কম বা নেই বললেই চলে।’

‘সা রে গা মা পা’ শো থেকে সাসপেন্ড

জাতীয় সংগীত বিতর্কের মধ্যেই সামনে এসেছে আরও একাধিক বিতর্ক। ‘সা রে গা মা পা’-এর শো চলাকালীন এক বিচারককে নাকি নোবেল বলেছিলেন, ‘তার গান বিচার করার ক্ষমতা ওই বিচারকের নেই। যার কারণে জি বাংলা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কিছুদিনের জন্য নোবেলকে সাসপেন্ড করে রাখে। গুঞ্জন রয়েছে, শোয়ের বাকি প্রতিযোগীদের সঙ্গেও নোবেল বেশ নাকউঁচু ভাব নিয়ে চলতেন। এমনকি, বাংলাদেশের কোনো শিল্পীকেই তার যথাযোগ্য মনে হয় না বলে নাকি মন্তব্য করেন।

নিজের গান আলোচনায় আনতে বিতর্কিত প্রচারণা

নিজের কোনো গান প্রকাশের আগে ফেসবুকে একাধিক ইস্যুতে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে আলোচনায় এসেছেন নোবেল। জানা গেছে গান প্রচারণার অংশ হিসেবেই হয়তো এমন বিতর্কিত পোস্ট তার। তবে নোবেলের দাবি ছিল তার ফেসবুক পেজ হ্যাক হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছিল। এর রেশ ধরেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেক নোবেলের এসব আচরণের কারণে তার সঙ্গে হওয়া ২২ গানের চুক্তি বাতিল করেছে। এ ছাড়া নোবেলকে একাধিক সিনেমার প্লেব্যাক থেকে বাদ দেওয়া হয়।

প্রতিদিন চার লাখ টাকার মাদক লাগে নোবেলের

মাদককাণ্ডে বেশ কয়েকবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন নোবেল। মাদে সংশ্লিষ্ট থাকায় স্ত্রী সালসাবিলও তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। সেইসঙ্গে গণমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন প্রতিদিন চার লাখ টাকার মাদক লোগে নোবেলের। প্রাক্তন স্ত্রী সালসাবিল বলেন, ‘মাদকদ্রব্য ছাড়ার কথা এবং চিকিৎসা নেওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলে সে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় সে কখনো মাদক ছাড়বে না এবং বলে—নেশা ছাড়লে তো আগেই ছাড়তাম। এরপর আমি আমার পারিবারিক সিদ্ধান্তে আমার ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করি।’

নিজের মাকে মেরে হাসপাতালে পাঠেয়েছেন

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে নোবেলের প্রাক্তন স্ত্রী সালসাবিল জানান, নোবেল সবাইকে মারধর করত৷ এমনকি নিজের মাকে পর্যন্ত ছাড়েনি৷ মাকে মেরে এমন অবস্থা করেছিল যে হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়েছিল৷ নোবেলের এই আচরণে ক্ষুব্ধ তার পরিবারও৷ ওর বাবা পর্যন্ত ওকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন৷ আমাদের বিয়ের সময়ও পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল৷ তবে এখন একদমই সম্পর্ক ভালো নেই৷ আমি একা নই, ওর পরিবারও ওকে শোধরানোর চেষ্টা করেছিল৷ তবে এখন সকলেই হার মেনেছে ওর কাছে৷

নোবেলের মাতলামিতে পণ্ড হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছরপূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী নোবেল গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন। গান গাওয়ার জন্য মঞ্চে উঠেই মাতলামি শুরু করেন। এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে দর্শকরা জুতা ও পানির বোতল নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে, নিজের অন্যায় স্বীকার করে ক্ষমা গায়ক বলেন, ‘স্টেজে ওঠার আগে সেই পরিবেশে মনোনিবেশ করার জন্য, নিজেকে রিল্যাক্সড রাখার জন্য অল্প মদ্যপানের দরকার পড়ে। তবে সে দিন অতিরিক্ত মদপান করিনি। স্টেজে ওঠার আগে সামান্য মদপান করেছিলাম। এ ঘটনায় আমি অনুতপ্ত এবং দুঃখিত। হাঁটু গেড়ে হাতজোড় করে সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। এ রকম ঘটনা আর ঘটবে না।’

আছে গান চুরির অভিযোগ

নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ গায়কের বিরুদ্ধে আছে গান চুরির অভিযোগও। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তার বিরুদ্ধে গান চুরির অভিযোগ আনেন ‘অ্যাবাউট ডার্ক’-ব্র‌্যান্ড এর ভোকালিস্ট নাসির উল্লাহ। তিনি দাবি করেন নোবেলের ‘দেশ’ নামের গাওয়া গানের কথা ও সুরের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে ‘অ্যাবাউট ডার্ক’-এর গান ‘তুমি’র সঙ্গে। যদিও অভিযোগ ওঠার পরই নিজের ‘ভেরিফাইড’ ফেসবুক পেজ থেকে গানটি ডিলিট করে ফেলেন নোবেল।

(ঢাকাটাইমস/২০মে/এলএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

‘বাণিজ্যিক সিনেমার নির্মাতাদের অনুদান দিলে চলচ্চিত্র এগিয়ে যাবে’

যে পানীয়র গুণে ৫০ বছরেও এত মোহময়ী মালাইকা অরোরা

অস্কারজয়ী বাঙালি নির্মাতা সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে কতটুকু জানেন

‘চলচ্চিত্র শিল্পে সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

সুবর্ণা মুস্তাফার স্বামীর সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন! যা বললেন নীলাঞ্জনা

শাকিব খান কি সত্যি তৃতীয় বিয়ের পথে? যা জানালেন আরশাদ আদনান

আমরা কি শ্রমিকদের সঠিক মর্যাদা দিতে পারছি?

মেয়ের বয়স ১১ মাস, এবার ছেলের বাবা হলেন চিত্রনায়ক রোশান

মে দিবসে দেখতে পারেন শোষিত মানুষের এই তিন সিনেমা

কনসার্টে নাচছেন ট্রাম্প-রবীন্দ্রনাথ, মূল ভিডিওটি আসলে কার?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :