হাতিরঝিলে রাজউকের হাঁসে কতটা লাভ হলো জীব বৈচিত্র্যের?

পুলক রাজ, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ মে ২০২৩, ০৮:১৬| আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ১২:৪৩
অ- অ+

হাতিরঝিলে অবমুক্ত করা ৩০০ হাঁসের ৫০টি নেই হয়ে গেছে। পরিকল্পনা ছাড়া এত বড় জলাধারে হাঁস টিকিয়ে রাখা নিয়ে আগেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে রাজউক নতুন করে আরও ৫ হাজার হাঁস ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে হাতিরঝিল লেকের পুলিশ প্লাজা সংলগ্ন দ্বীপ থেকে ৩০০ হাঁস অবমুক্ত করা হয়। লেকের জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে হাঁসগুলো ছাড়া হচ্ছে বলে সেসময় জানিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

হাতিরঝিলে হাঁস ছাড়ার উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে রমনা পার্ক লেক ও খিলগাঁও বটতলা ঝিলে হাঁস অবমুক্ত করার উদাহরণ দেখান তারা। ওই দুই লেকে তদারকির অভাবে বেশিরভাগ হাঁস চুরি কিংবা বিভিন্ন রোগে মারা যায়। ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ যে উদ্দেশ্যে হাঁস অবমুক্ত করেছিল তার কোনো সুফল মেলেনি।

হাতিরঝিল নিয়েও একই আশঙ্কা ছিল বিশেষজ্ঞদের। বিশেষজ্ঞরা ঢাকা টাইমসকে বলেছিলেন, এসব হাঁস পরিকল্পনার অভাবে শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে তো? এমন প্রেক্ষাপটে অবমুক্ত করার প্রায় সাড়ে তিন মাস পর হাতিরঝিলের হাঁসগুলোর খোঁজ নিয়েছে ঢাকা টাইমস।

আরও পড়ুন>> হাতিরঝিলে হাঁস: শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে তো? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

আরও পড়ুন>> হাতিরঝিলের সৌন্দর্য বর্ধনই ৩০০ হাঁস ছাড়ার প্রধান উদ্দেশ্য: রাজউক চেয়ারম্যান

হাতিরঝিলের হাঁস বিষয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, লেকে ৩০০ হাঁস ছাড়া হলেও ৫০টির মতো হাঁস মারা গেছে। হাঁসগুলো প্রতিদিন গুনে গুনে সকাল ৮টার দিকে লেকে ছাড়া হয়। ১০০ মিটারের চেয়ে বেশি দূর যায় না। বিকালে আবার হাঁসগুলো তাদের নিজ গন্তব্যে চলে আসে।

হাঁসের নিরাপত্তাকর্মী ফারুক আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাতিরঝিলের যেদিকে নৌযান চলে সেই দিকে হাঁস যায় না। হাঁসগুলো অসুস্থ হলে ডাক্তারদের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো হয়।’

হাতিরঝিলের হাঁসের ইনচার্জ সুশীল কুমার আকাশ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ঠিকঠাক হাঁসের পালন করে যাচ্ছি। হাঁসগুলো দেখে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও উপভোগ করতে পারছেন।’

দর্শনার্থীরা বেশিরভাগই বলছেন হাঁস দেখেননি:

হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা বেশিরভাগই বলছেন, তারা হাঁস আছে শুনলেও চোখে দেখেননি। রিপন হোসেন নামে একজন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি সপ্তাহে দুদিন হাতিরঝিল লেকে ঘুরতে আসি। কিন্তু কখনো হাঁসগুলো চোখে পড়েনি।’

আরেক দর্শনার্থী শাহারা সায়মা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার দিকে মাঝে মধ্যে কিছু হাঁস দেখেছি। যতদিনই দেখেছি ওই এক জায়গায়ই দেখেছি।’

রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাতিরঝিলে হাঁস সব সময় দেখা যায় না। আর দেখা গেলেও এক জায়গাই দেখা যায়। হাঁসগুলো পুরো হাতিরঝিল লেকে ঘুরে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি হাঁসগুলোর দেখাশোনা করতে একদল নিরাপত্তা কর্মী কাজ করেন। এদের তো একটা খরচ আছে। রাত-দিন মিলিয়ে যদি দশ জন নিরাপত্তাকর্মী হলেও তাদের প্রতিমাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ। হাঁসের জন্যও তো একটা খরচ আছে। তাহলে এত টাকা খরচের পরে হাতিরঝিলের কতটুকু সৌন্দর্য বর্ধন হলো?’

হাতিরঝিলের পাশেই মগবাজারের বাসিন্দা চাকরিজীবী নারগিস আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে অফিস বন্ধের দিনে হাতিরঝিল আসি। হাঁস ছাড়ার কথা শুনেছি। তবে দেখিনি। খোঁজ নিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে শুনেছি হাঁস নাকি বনানী চলে যায়।’

কী বলছে রাজউক:

রাজউকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রোটোকল) মো. সাইফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাঁস ছাড়ার প্রথম দিকে ১০টি হাঁস মারা যায়। ১০টি হাঁস কিনে ৩০০ পূরণ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৮টায় হাঁসগুলো লেকে ছাড়া হয়। বিকাল ৫টার দিকে আবার তাদের বাসস্থানে চলে আসে।’

দর্শনার্থীদের দেখতে না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের এই সহকারী পরিচালক বলেন, ‘আসলে হাতিরঝিল তো অনেক বড়। হাঁসগুলো ৩/৪টা গ্রুপ হয়ে লেকে ঘুরে বেড়ায়। অনেক সময় গুলশান ও বনানীর দিকে চলে যায়। ফলে দেখা যায় না।’

হাতিরঝিলের হাঁস নিয়ে জানতে রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা যা বললেন:

হাতিরঝিলে হাঁস অবমুক্ত করা নিয়ে পরিকল্পনার ঘাটতির কথা বললেন প্রাণিবিদ অধ্যাপক ড. আলেয়া বেগম। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘৩০০ হাঁসের মধ্যে এই অল্প দিনেই ৫০টি নেই। আসলে পরিকল্পনার অভাব আছে বলেই হাঁসগুলো নেই।’

ড. আলেয়া বেগম বলছেন, শুধু হাঁস নয়, উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা গেলে বিভিন্ন জাতের পাখিও আসবে। তবে এর জন্য পরিকল্পনা দরকার। হাতিরঝিল দেখতেও খুব সুন্দর। পাখিদের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য আরও বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কিছু করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।’

‘এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে, ৫ হাজার হাঁস ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছে রাজউক। আমি মনে করি এসব না করে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে হাতিরঝিল লেককে সৌন্দর্য বাড়ানো হোক।’

(ঢাকাটাইমস/২৪মে/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এনসিসি ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি 
অন্তর্বর্তী সরকারও শেখ হাসিনার মত নানাভাবে ন্যারেটিভ তৈরি করছে: রিজভী 
হবিগঞ্জের সীমান্তে বিজিবির সতর্ক পাহারা, ২ স্তরের নিরাপত্তা বলয়
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা