শ্লীলতাহানির পর আত্মহত্যা: নীলিমা মৃত্যুশয্যায় লিখে গেলেন কী ঘটেছিল সেদিন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২৩, ২২:০৭

শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে গত ৮ জুলাই মধ্যরাতে আত্মহত্যার উদ্দেশে কীটনাশক পান করেন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শ্রীফলতলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী নীলিমা খাতুন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তবে তার আগে হসাপাতালের বেডে শুয়ে তিনি তার মৃত্যুর জন্য কারা দায়ী এবং সেদিন কী ঘটেছিল তা চিরকুটে লিখে যান। সেই চিরকুটে তিনি একই উপজেলার মাঠ আন্দুলিয়া গ্রামের ওলিয়ার রহমানের ছেলে রাসেল ও তার বান্ধবী সুমাইয়াকে মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন।

নিহত নীলিমা খাতুন উপজেলার ৭ নম্বর রঘুনাথপুর ইউনিয়নের শ্রীফুলতলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ব্যাপারীর মেয়ে।

নিলীমার লিখিত চিরকুট ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে রাসেলের সঙ্গে পরিচয় হয় নিলীমার। রাসেল বিভিন্ন সময়ে নিলীমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে এলেও তাতে নিলীমা কখনো সম্মতি দেননি। প্রত্যাখাত হয়ে রাসেল নীলিমাকে কৌশলে অপহরণের ছক কষেন।

সে মোতাবেক বিগত ঈদের তৃতীয় দিন (১ জুলাই) নিলীমার বান্ধবী সুমাইয়াকে দিয়ে ফোন করিয়ে নিলীমাকে স্থানীয় জোহান ড্রীমভ্যালী পার্কে বেড়াতে নিয়ে আসেন রাসেল। সেখানে গিয়ে রাসেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় নিলীমার। এরই মধ্যে বান্ধবী সুমাইয়া সেখান থেকে কৌশলে সরে যান।

এসময় পার্কের নির্জন স্থানে নিলীমাকে একা পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানি ঘটান রাসেল। নিলীমা রাসেলের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে পালানোর চেষ্টা করেন। তার কাছে থাকা একটি সরকারি ট্যাব জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন রাসেল। কৌশল ও বুদ্ধি খাটিয়ে রাসেলের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে আসেন নিলীমা। এরপর রাত ১০টার দিকে ঘরে থাকা কীটনাশক সেবন করে ছটফট করতে থাকেন। গুরুতর অবস্থায় পরিবারের লোকজন নিলীমাকে উদ্ধার করে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জুলাই মধ্যরাতে মৃত্যুবরণ করেন নিলীমা। হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ নিলীমা পুরো ঘটনা একটি সাদা কাগজে লিখে রেখে যান।

আসামি রাসেল

বিষয়টি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায় একটি প্রভাবশালী মহল। এ ঘটনায় নিলীমার পিতা আব্দুর রাজ্জাক ব্যাপারী বখাটে রাসেল ও বান্ধবী সুমাইয়াকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও এখন সেই মামলায় এ পর্যন্ত কাউকে গ্রপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

স্থানীয় চেয়ারম্যান বসির উদ্দীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এভাবে ডেকে নিয়ে একজন মেধবী ছাত্রীর সম্মানহানি ঘটানো খুবই দুঃখজনক। তিনি আত্মহত্যা প্ররোচনাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

মামলার বাদী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সুমাইয়ার কারণেই তার মেয়ে মৃতুবরণ করেছে। সে ডেকে নিয়ে বখাটের হাতে তুলে দিয়েছে নিলীমাকে। এখন একটি মহল সুমাইয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তিনি বখাটে রাসল ও সুমাইয়ার গ্রেপ্তারের দাবি করেন।

এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডু থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অনিষ মন্ডল বলেন, মামলা রেকর্ড হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আশা করা যায় খুব দ্রুতই বখাটে রাসেল ও সুমাইয়াকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :