সুস্থ থাকতে কলা খান, জটিল রোগের ঝুঁকি কমবে
সুস্থ থাকতে ফল খাওয়ার সত্যিই কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কোন ফল খেলে বেশি উপকার পাবেন, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। উপকারী ফলের তালিকায় কলা কিন্তু একেবারে উপরের দিকে রয়েছে। রোজ যদি একটি করে কলা খেতে পারেন, তা হলেও সুস্থ থাকবে শরীর। নিয়মিত কলা খেলে বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন আলসার, ক্যানসার, হৃদ্রোগ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ দূরে পালাবে। কলার মধ্যে লুকিয়ে আছে সুস্থ থাকার মন্ত্র।
কলা সহজলভ্য ফল হওয়ায় কলার প্রতি মানুষের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। গ্রামে-শহরে সবখানেই এটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কলার চাষ করা হয়। কলা বহুগুণে সমৃদ্ধ। বিদেশি দামি ফলের প্রতি না ঝুঁকে কম দামে দেশি ফল খাওয়াই ভালো। ছোট-বড় সকলেরই প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়া উচিত।
কলার বৈজ্ঞানিক নাম হলো মুসা সেপিয়েনটাম। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির কলার বিভিন্ন আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। আমাদের দেশে সাগর কলা, চাম্পা কলা, সবড়রকলা, কাঠালী কলা ও বাংলা কলা বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশসমূহে কলা ভালো জন্মায়। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই কলার উৎপত্তিস্থল হিসাবে পরিগণিত। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে কলা অন্যতম প্রধান ফল। বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, প্রভৃতি এলাকায় শত শত বৎসর যাবৎ ব্যাপকভাবে কলার চাষ হয়ে আসছে।
কলার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে বাধ্য। মুহূর্তের মধ্যে এনার্জি পেতে কলার জুরি মেলা ভার। কিন্তু তা ছাড়াও যে প্রচুর কাজ করে কলা। জেনে নিন কলার বহুগুণ-
পাকা কলাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ যেমন- পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ফোলেট, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন-বি রয়েছে। এগুলো শরীরকে কর্মক্ষম ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত কলা খাওয়া অভ্যাস করলে শরীর বেশ সতেজ থাকে। কলায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। রোজ কলা খাওয়ার অন্যতম উপকার হল, এতে হজম ভাল হয়। ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর নিউট্রিশন’ -এর গবেষণা জানাচ্ছে, দিনে ২০-২৫ গ্রাম ফাইবার খাওয়া জরুরি। এর ফলে পেটের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। কলা সেই কাজটি করে।
কলার আরেকটি অন্যতম গুণ হচ্ছে এটি ক্যানসার প্রতিরোধ করে। আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্সের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যদি খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার রাখেন তাহলে তা কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
তাছাড়া ভিটামিন সি ‘সম্ভবত’ খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। আপনার একদিনে যে পরিমাণ ভিটামিন সি প্রয়োজন একটি কলায় তার প্রায় ১৭ শতাংশ থাকে। এই গবেষণা শতভাগ সন্তোষজনক নাও হতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে তা আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না।
স্ট্রোক, কিডনি, মস্তিষ্কে সমস্যা ও ব্লাড প্রেসার কমাতে চিকিৎসকরা সবসময় পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কলা পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ। আপনার একদিনে যতোটুকু পটাশিয়াম দরকার একটি গড়পড়তা আকারের কলায় তার ১২ শতাংশ থাকে। এমনকি হার্ভার্ড স্কুল অব হেলথও ব্লাড প্রেসার কমানোর জন্য পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
কলা ফাইবার সমৃদ্ধ। অর্থাৎ, এটি আশযুক্ত খাবার। আপনার একদিনে যতোটুকু ফাইবার প্রয়োজন একটি গড়পড়তা আকারের কলায় তার ১২ শতাংশ থাকে। ফাইবার তথা আঁশযুক্ত খাবারের অনেক উপকারিতা আছে।
কলা কলেস্টোরেলের মাত্রা কমায়, বাওয়েল মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখে, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে ও শরীরের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে এটিই আপনার জন্য ভালো সমাধান। তাছাড়া কলা খেলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণও হয়।
কোনো কাজ শুরুর আগে বা কাজের মাঝখানে কলা খেয়ে নেন তাহলে তা স্পোর্ট ড্রিংকের মতোই কাজ করবে। আপনার শরীরে চঞ্চলতা ফিরিয়ে আনবে ও বেশি পরিমাণে কাজ করার শক্তি তৈরি হবে। কলায় যে পরিমাণ শর্করা আছে তা তা দ্রুতই এনার্জিতে পরিবর্তন হয়। তাছাড়া পটাশিয়াম ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যারা হাড় শক্ত করতে চান কলা তাদের জন্য খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়া কলা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
কলা হার্টের খেয়াল রাখে। কারণ কলায় রয়েছে পটাশিয়াম, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। শরীরের প্রতিটি কোষ সচল রাখতে পটাশিয়াম অত্যন্ত জরুরি। অন্যান্য ফল এবং খাবারের চেয়ে কলায় পটাশিয়ামের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। ফলে সুস্থ থাকতে কলা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কলা এমন এক ফল যা প্রতিদিনের জীবনেই ব্যবহার করা হয় না, একাধিক খাবারের স্বাদ বাড়াতেও ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে মাফিন এবং কেক।
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার। কাঁচা কলায় প্রতিরোধী স্টার্চও থাকে। তবে তা হজম হয় না। এই দুই ধরনের ফাইবার শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। দিনে দুটি কলা খেলেও রক্তচাপের মাত্রা কমে যায়।
কলা হল কার্বোহাইড্রেটের সমৃদ্ধ উৎস। চনমনে এবং চাঙ্গা থাকতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ শরীরে পর্যাপ্ত থাকা জরুরি। কলা কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি পূরণ করে। ২০১৯ সালে ‘জার্নাল অফ ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকোনলজি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র তেমনটাই বলছে। কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি১২, যা শরীরকে ভিতর থেকে চাঙ্গা রাখে।
ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ডায়েটের পর্বে কলা রাখতে চান না অনেকেই। অথচ পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, সঠিক ভাবে যদি ডায়েট করা যায়, তা হলে কলা খেলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বরং কলা খেলে পেট ভর্তি থাকে দীর্ঘ ক্ষণ। ফলে বারেবারে খাবার খাওয়ার প্রবণতাও অনেক কমে। ওজন বৃদ্ধিতেও রাশ টানা সম্ভব।
আলসারের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। আলসার থাকলে কলা খাওয়া যেতেই পারে। পেটের আলসার থেকে দূরে থাকতে কলা হতে পারে অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। কলা প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে শরীর সুস্থ রাখে।
কলা এই নিউরোট্রান্সমিটার বাড়াতে সাহায্য করে। কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেশিয়াম যা ভালো ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য কলা খাওয়া খুবই উপকারী। দুর্বলতা কাটাতে কাজ করে এবং রক্তের শর্করার সামঞ্জস্য বজায় রাখে।
কলার খোসাও উপকারী। ব্রণ এবং ত্বকের সংক্রমণের সমস্যার থাকলে নিয়মিত পাঁচ মিনিট কলার খোসা ম্যাসাজ করা যায়।
চোখে অনেকেরই ডার্ক সার্কেল থাকে। অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে খোসা মিশিয়ে চোখের নিচে সারা রাত বা এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে।
সেরোটোনিন মুড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সেরোটোনিনের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলে মানসিকভাবে স্থিতিশীল এবং মনোযোগী বোধ করা সম্ভব।