ক্যানসার থেকে মুক্তি দিতে পারে বেকিং সোডা

বেকিং সোডা রান্নাঘরে থাকা অতিপরিচিত একটি সামগ্রীর নাম। বেকিং সোডাকে খাবার সোডাও বলা হয়ে থাকে। বেকিং সোডাকে রাসায়নিকভাবে সোডিয়াম বাইকার্বনেট নামে ডাকা হয়। পাশাপাশি এটিকে মাঝেমধ্যে বাইকার্বনেটও বলা হয়। বেকিং সোডাতে নাহকোলাইট নামক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যে উপাদানটি প্রাকৃতিক খনিজ হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত। সাধারণত এই বেকিং সোডার সাথে এসিডিক পদার্থ যোগ করা হলে দুটির বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড নামক গ্যাস তৈরি হয়। এটি খাবারে ব্যবহার করা যায় এমন একটি উপাদান হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বারা স্বীকৃত।
বেকিং সোডার যে ব্যবহারটি কমবেশি সবাই জানেন সেটি হলো বেকিংয়ের ক্ষেত্রে। কেক,পাউরুটি, বিস্কুট ইত্যাদি খাবার তৈরির জন্য বেকিং সোডা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কারণ এটি খাবার ফোলাতে সহায়তা করে।
অনেকের বাড়িতে বিভিন্ন কাজে বা খাবারে বেকিং সোডার প্রচুর ব্যবহার করা হয়। খাদ্যদ্রব্য বা বিভিন্ন পানীয়ের সাথে খাবার সোডা ব্যবহার না করলেই নয়।
কিন্তু জানেন কি একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে বেকিং সোডা একেবারে অব্যর্থ ওষুধের মতো কাজ করে। ত্বকের সমস্যা, হৃদরোগ, স্নায়ুবিক সমস্যা এমনকি ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বেকিং সোডা ব্যবহার করে সাফল্য মিলেছে। যেমন, ইতালির এক চিকিৎসক-গবেষক তুলিও সিমোনসিনির দাবি, বেকিং সোডার প্রয়োগে ক্যান্সারের চিকিত্সা ও নিরাময় সম্ভব। মিলেছে সাফল্যও। তিনি তাঁর ‘ক্যান্সার ইজ অ্যা ফাঙ্গাস: অ্যা রিভল্যুশন ইন টিউমার থেরাপি’বইয়েও এ কথা উল্লেখ করেছেন। সিমোনসিনির দাবি, ক্যান্সার এক ধরনের ফুসকুড়ি যা বেকিং সোডার সাহায্যে সহজেই নিরাময় করা সম্ভব।
শুধু ক্যানসারের নিরাময়ের ক্ষেত্রেই নয়, শরীর থেকে দুষিত বর্জ্য বাইরে বের করে শরীরকে ঝরঝরে রাখতে সাহায্য করে। দিনে অন্তত দু’বার এক চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস জলেতে মিশিয়ে খেতে পারলে, (বিশেষ করে সকালে এবং রাতে ঘুমাতে যাবার আগে) সারাদিন শরীর থাকে ঝরঝরে।
পেশীতে টান পরা, ক্লান্তি ভাব বা ত্বকের মরা কোষ থেকে রেহাই পেতে স্নানের সময় জলেতে এক কাপ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। ওই জলে স্নান করলে ত্বক হবে নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল। তাছাড়া, ভাইরাসের কারণে ত্বকের প্রদাহ বা জ্বালা অনুভূত হলে সামান্য বেকিং সোডা নিয়ে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে হালকা মালিশ করে নিলে উপকার মিলবে। যতদিন ভাল না হয়, ততদিন ঠিক এ ভাবে বেকিং সোডা কাজে লাগাতে হবে।
বেকিং সোডা আর ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড একসঙ্গে মিশিয়ে নিলে তা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে। এই দু’টি উপাদান একসঙ্গে মিশে শরীরের কোষ, কলা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) আর অ্যাসিড বের করে দিতে সাহায্য করে। যেমন, বমি বমি ভাবের চিকিৎসায়, হৃদরোগ, স্নায়ুবিক সমস্যা, ক্যান্সার ও ফ্লু-এর চিকিৎসায় বেকিং সোডা আর ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
তবে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ব্যবহার করা হয়। আসলে পানিতে মিশিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। পেটের সমস্যা দূর করতে এবং দাঁত পরিষ্কার করতে বেকিং সোডা পাউডার খুবই উপকারী খাবার হিসেবে কাজ করে। বেকিং সোডার অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শরীরের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং অন্যান্য পরজীবী ধ্বংস করতে সাহায্য করে। চলুন নিচে জেনে নেওয়া যাক বেকিং সোডার ব্যবহার এবং বেকিং সোডার গুনাগুন কিংবা পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করলে কী কী উপকার পাওয়া যায়-
কেমোথেরাপিরও চেয়েও শক্তিশালী
লেবু এবং বেকিং সোডার মিশ্রণ দশ হাজার বার কেমোথেরাপিরও চেয়েও শক্তিশালী। কেমোথেরাপির বিষম রকমের পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে, কিন্তু লেবু এবং বেকিং সোডার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। এ মিশ্রণ শুধু ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে। পক্ষান্তরে কেমোথেরাপি ভাল কোষগুলোও ধ্বংস করে। সুতরাং যাদের এই মারণব্যাধি ক্যানসার আছে তাদের জন্য উপকারি। এই মিশ্রণ ক্যানসারের পাশাপাশি কিডনি ফেইলইর রোগীদের জন্যও সমানভাবে কার্যকর। এই মিশ্রণ বানানোর জন্য চা চামচের ২ চামচ লেবুর রস (অবশ্যই অর্গানিক লেবু হতে হবে), আধা চা চামচ বেকিং সোডা এবং ৮ আউন্স পানি দিয়ে বানালে উপকার পাবেন।
ঠোঁটের কালো ভাব কমায়
মধু এবং বেকিং সোডা মিশিয়ে প্রতিদিন তিন মিনিট করে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখলে ঠোঁটের কালোভাব দূর হবে। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেকিং সোডা ক্যানসার থেকে মুক্তি দিতে পারে।
ত্বকের উন্নতিতে সহায়তা করে
মৃত কোষ অপসারিত করে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে বেকিং সোডা। এর ফল স্বরূপ ত্বকের পুরানো দ্যুতি ফিরে আসে। এর জন্য কেবল প্রয়োজন পানির সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়ে মুখে বৃত্তাকারের ঘষে লাগানোর। তবে এটি সপ্তাহে দুই দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। ত্বকের যত্নে বেকিং সোডার ব্যবহার জেনে নিন
ব্যায়াম থেকে সৃষ্ট সমস্যা দূর করে
অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমতে পারে, শরীরে পেশীগত কাঠিন্নতা দেখা দিলে এই সমস্যার প্রতিষেধক হিসাবে বেকিং সোডা অত্যন্ত উপকারী। পানির সঙ্গে মিশ্রিত বেকিং সোডা এক্ষেত্রে অসাধারণ উপকার করে।
ব্রণ প্রতিরোধক, ব্রণের গর্ত দূর করে
ব্রণ এবং মুখে হওয়া ফুসকুড়ি কমাতে অসাধারণ উপকার করে বেকিং সোডা। শুধু খেলেই হবে? মাখতেও তো হবে বেকিং সোডা! বেকিং সোডা এবং পানির মিশ্রণ ব্যবহার করে আপনার মুখের ত্বকের গর্ত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বেকিং সোডার সঙ্গে ভালো করে পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট বা লেই তৈরি করুন। সাবান অথবা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখটা ভালো করে ধুয়ে নিন। মুখ ভালো করে মুছে শুকিয়ে নিন। এরপর বেকিং সোডার পেস্ট ভালো করে মুখে মাখুন। কিন্তু বেশি জোরে মুখ ঘষবেন না। তারপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন। ব্যস এবার তফাৎটা দেখুন। সামান্য বেকিং সোডা কতটা কাজের, নিজের মুখ দেখেই তার প্রমাণ পেয়ে যাবেন।
কিডনির কার্যকলাপে সাহায্য করে
ক্ষারীয় পদার্থ হিসাবে বেকিং সোডা শরীরে অম্লের পরিমাণ কমাতে এবং পি.এইচ সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মার্কিন সোসাইটি অফ নেফ্রোলজির মতো একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, এটি শরীরে কিডনির কার্যকলাপ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ঘটায়।
মুত্রাশয়ের অসুখ
মুত্রাশয়ের অসুখ সারাতে পানি দিয়ে বেকিং সোডা পানের বিকল্প আর কিছু নেই। এছাড়া বেকিং সোডা পানি আপনার শরীরে উপকারি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
গেঁটেবাত
ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ মূত্র এবং টিস্যুতে অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গেলে সারা শরীরে মারাত্মক যন্ত্রণা হয়। যার ফলস্বরূপ গেঁটে বাত দেখা যায়। এটি ঠিক করতে বেকিং সোডা অসম্ভব উপকার করে।পানির সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণে বেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে বাতের অসুখ নিরাময় হয়।
দাঁত উজ্জ্বল করে
বেকিং সোডার মতো দাঁত পরিষ্কার অন্য কিছুতেই হয় না। দাঁতের ওপর থেকে দাগ ওঠানোর জন্য বেকিং সোডার ভূমিকা অসাধারণ। দাঁত ঝকঝকে সাদা করতে সোডা পাউডারের ভূমিকা অতুলনীয়। এই সোডা পানি দাঁতে ব্যবহারে দাঁত হবে ঝকঝকে সাদা।
আলসারে বেকিং সোডা
আপনি কি পেটের আলসারে ভুগছেন? তাহলে আজই এক গ্লাস পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করুন। দেখবেন ধীরে ধীরে এর সুফল পাবেন।
দেহের পিএইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
পানির সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে শরবতের মত পান করলে এটি দেহের পিএইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরে এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে এটি হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৪ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন