৩০০ কোটি টাকা পাচারে জড়িত চট্টগ্রামের ১২ সিএন্ডএফ এজেন্ট

এম হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম
 | প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৩৩

মধ্যপ্রচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে টিশার্ট, টপস ও লেডিস ড্রেস রফতানির নামে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাচার করা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ১০ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান ও চট্টগ্রামের ১২টি সিএন্ডএফ এজেন্টের যোগসাজশে এ টাকা পাচার করা হয়েছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো টিশার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট, ইত্যাদি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রফতানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে।

এই দশ প্রতিষ্ঠানকে পর্যালোচনা করলে বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে দেওয়া তথ্যের মধ্যে অমিল পাওয়া যায়। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধানসহ ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্যমতে, ১ হাজার ২৩৪ চালান দেখিয়ে ৯ হাজার ১২১ মেট্রিকটন পণ্য রফতানির কথা বলে এই দশ প্রতিষ্ঠান মোট ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচার করেছে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, অর্থপাচারে জড়িত ঢাকার রফতানিকারক ১০ প্রতিষ্ঠান হল- গুলশানের ফ্যাশন ট্রেড, উত্তরার এমডিএস ফ্যাশন, গাজীপুরের হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড ও পিক্সি নিটওয়্যারস লিমিটেড, সাভারের প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, বনানীর থ্রী স্টার ট্রেডিং, মিরপুরের ফরচুন ফ্যাশন, কচুক্ষেতের অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, শাহবাগের স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ও ক্ষিলখেতের ইডেন স্টাইল টেক্স।

অর্থ পাচারে ওই পোষাক কারখানার সাথে জড়িত চট্টগ্রামের ১২ সিএন্ডএফ এজেন্ট হল নগরীর খাতুনগঞ্জের রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল ও পান বেঙ্গল এজেন্সী লিমিটেড, দেওয়ানহাট এলাকার এম এ জে শিপিং কর্পোরেশন, সুগন্ধা এলাকার জে জে এসোসিয়েটস, নগরীর আগ্রাবাদের এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পরাগ এসএমএস লিমিটেড ও এনএইচ কর্পোরেশন, বায়েজিদ এলাকার এক্সপ্রেস ফরোয়ার্ডারস, সদরঘাট এলাকার মেসার্স এ কে এন্টারপ্রাইজ ও এম/এস এ.কে এন্টারপ্রাইজ এবং ফকিরহাটের কে আর এস সি এন্ড এফ লিমিটেড।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে ঢাকার প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড ৩৮৩টি ও ২০২০ সালে ৮টি পণ্যের চালান সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়াায় রফতানির কথা বলে ৯২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৪৫ টাকা পাচার করে। ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০-এ তিন বছরে ঢাকার ফ্যাশন ট্রেড নামের প্রতিষ্ঠানটি মোট ২৪৬টি পণ্য চালান দেখিয়ে ৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৩৬ টাকা পাচার করেছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালে গাজীপুরের হংকং ফ্যাশন লিমিটেড সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, নাইজেরিয়া, কুয়েত, কানাডায় ৪০ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬ টাকা পাচার করে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৫৯টি পণ্যচালান রপ্তানির দেখিয়ে ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৩ টাকা পাচার করে মিরপুরের ফরচুন ফ্যাশন।

এছাড়াও ২০২০ সালে ঢাকার কচুক্ষেত এলাকার অনুপম ফ্যাশন লিমিটেড ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০৩ টাকা পাচার করে পোশাক রপ্তানি দেখিয়ে। একই বছরে টঙ্গির পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড ৫ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৪১ টাকা ও ঢাকা শাহবাগের স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ২ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৯০২ টাকা ও ইডেন স্টাইল টেক্স ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৬ টাকা পাচার করেছে। এ টাকা পাচার হয়েছে ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, পানামাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, আমরা আমাদের প্রতিটা সভায় সকল সদস্যদের অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত না হবার আহ্বান জানাই। তবুও লোভের ফাঁদে পড়ে অনেকে এসব কাজে জড়িত হচ্ছেন। কাজেই অপরাধী যেই হোক না কেন তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানিপণ্য পাঠানোর সঙ্গে জড়িতদের সকল স্তরে নজরদারি বাড়াতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/৪সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :