বৈঠা হাতে মঞ্জিলা বেগম: হার না মানা জীবন সংগ্রামের গল্প

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১০ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৫৭

কাক ঢাকা ভোরে ঘর থেকে নৌকার বৈঠা হাতে বেরিয়ে যান মঞ্জিলা বেগম (৪৫)। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খেয়া ঘাটের মাঝি হিসেবে নদী পারাপারের কাজ করেন। ঘরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বড় মেয়ে ও আরেক ছোট মেয়েসহ অসুস্থ স্বামীর সকল ব্যয় বহন করতে হয় তাকেই। বাধ্য হয়েই মঞ্জিলাকে হতে হয়েছে খেয়া পাড়ের মাঝি। জীবনের গল্পে মঞ্জিলা বৈঠা হাতে এক সংগ্রামী নারী।

সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের গাজিবাড়ি এলাকায় অসুস্থ স্বামী শফি খান (৬০), বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বড় মেয়ে রুবিয়া খাতুন (১৫) ও ছোট মেয়ে সুমি আক্তারকে (১০) নিয়ে বসবাস মঞ্জিলা খাতুনের। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ১০-১২ বছর আগে কৃষিকাজের পাশাপাশি খেয়া নৌকা চালালেও অসুস্থ হওয়ার পর থেকে শফি খান এখন আর কোন কাজ করতে পারেন না। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র মঞ্জিলা বেগমই।

বুধবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিট। গাজীবাড়ি এলাকার গাজীখালী নদীর খেয়া ঘাটে মঞ্জিলা বেগমকে বৈঠা হাতে খেয়া নৌকার মাঝির আসনে দেয়া যায়। নদীর এপার থেকে ওপারে লোকজনকে পাড় করছেন তিনি। কাক ডাকা ভোর থেকে তিনি নৌকা চালানো শুরু করেন। ঘরে ফেরেন রাত ৯-১০টার দিকে। অসুস্থ স্বামী দিনের অধিকাংশ সময় বসে থাকেন নদী পাড়ে। সন্ধ্যার পর অজানা শঙ্কায় নিজেও উঠে পড়েন নৌকায়। বাড়িতে মায়ের অপেক্ষায় থাকেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বড় মেয়ে ও অপর ছোট মেয়েটি।

নদী পাড়াপাড়ে মঞ্জিলাকে প্রতিজন নদী পাড় হতে ১০ টাকা করে দেন। তবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাওয়া আসা বাবদ দেন ৫ টাকা। এছাড়া স্থানীয়রা সামর্থ্য অনুসারে বাৎসরিক ১৫-২০ কেজি ধান দেন। এ দিয়েই সংসার চলে মঞ্জিলার।

মঞ্জিলা বেগমের স্বামী শফি খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ। আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। টান (শ্বাসকষ্ট) উঠলে তিন চারজন মিলে বাতাস করা লাগে সেই কারণে আমি কোনো কাজ করতে পারি না। আমার স্ত্রী নৌকা চালিয়ে খেয়া পারাপার করে উপার্জন করে সংসার চালায়। এটা আমার জন্য অনেক কস্টের কিন্তু আমি অসহায়। রাত হলে ভয় হয় তাই তখন আমি নিজেও নৌকায় বসে থাকি।

কাকডাকা ভোরে ঘর থেকে বের হন মঞ্জিলা বেগম। ঘরে ফেরেন রাত ৯-১০ টার দিকে।

মঞ্জিলা বেগমের বড়মেয়ে রুবিনা আক্তার বলেন, মা সকালে ফজরের আজানের সময় নৌকা চালাতে বের হয় আর বাসায় ফিরে রাত ৯টা ১০টার দিকে। সারাদিন আমরা মায়ের দেখা পাইনা। আমার বাবা অসুস্থ হওয়ায় সে কোনো কাজ করতে পারে না।

অসুস্থ স্বামী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মেয়ের চিকিৎসাসহ পরিবারে সকল খরচ বহন করতে হয় মঞ্জিলা বেগমকেই। কষ্ট হলেও তাই বাধ্য হয়েই তাকে খেয়া পারাপারের কাজ করতে হচ্ছে।

মঞ্জিলা বেগম বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েটি প্রতিবন্ধী। আমার স্বামী যখন সুস্থ ছিল তখন সেই টুকটাক কৃষি কাজ করে সংসার চালাত। কিন্তু আমার স্বামীর অসুস্থতার পর থেকে সে কোন কাজ করতে পারেনা। একজন নারী হয়ে নৌকার বৈঠা হাতে তুলে নিয়েছি। কাজটি অনেক কষ্টের। রাত বিরাতে নৌকা বাইতেও ভয় করে। কেউ যদি আমাদের সাহায্য করে একটি দোকান করার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে কষ্টের কাজ করতে হইতো না।

সমাজের বিত্তবানরা মঞ্জিলা বেগমের পাশে দাঁড়ালে পরিবারটি এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জুবায়ের খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা ছোট থেকেই পরিবারটিকে দেখে আসছি। আগে মঞ্জিলার স্বামী অন্যের জমিতে কৃষিকাজের পাশাপাশি নৌকা চালাতো। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মঞ্জিলা বেগম এখন খেয়া পারাপারের কাজ করেন। আমরা স্থানীয়ভাবে তাদের যতটুকু সম্ভব সহায়তা করে থাকি। তবে সমাজের বিত্তবান যারা রয়েছেন তারা যদি তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে তারা একটু ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারতেন।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মানবিক। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী পরিবারটিকে সহায়তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।

(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :