শ্রীপুরে মাছ-মাংস-ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন, ক্রেতারা দিশেহারা

মহিউদ্দিন আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:১৭
সোমবার গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা বাজার থেকে ছবিগুলো তোলা। ছবি: ঢাকাটাইমস

গাজীপুরের শ্রীপুরে সকল হাটবাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর ইলিশের মৌসুম চললেও প্রতি কেজি ইলিশ কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা।

এদিকে বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। অন্যান্য সবজি কিনতেও ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি নেই । গেল কয়েক দিনের বেশ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, সবজি, মাছ ও মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে এসে যেন দিশেহারা হয়ে পড়ছেন ক্রেতারা।

সোমবার দুপুরে উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুদিন আগেও এক ডজন ডিমের কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আজ সেই ডিমের ডজন কিনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। ডজনের কমে ডিম কিনলে প্রতিটির দাম পড়ছে ১৫ টাকা। অপেক্ষাকৃত কম আয়ের লোকদের জন্য এ যেন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা বাজারে আসা আলম নামে এক ব্যক্তি বলেন, এ যেন মগের মুলুকে বাস করছি! প্রতিদিনই বাড়তি দামে সদাই কিনতে হচ্ছে। আজ তো একটি ডিম কিনতে ১৫ টাকা লাগছে! এই দেশে দেখার কেউ আছে? জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে, আর আমাদের চোখ বন্ধ করে টাকা দিতে হবে।

এদিকে ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও দাম চড়া। ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আধা কেজি থেকে এক কেজির ইলিশ ৯০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

বরমী বাজারে এসে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আলাউদ্দিন। তিনি ছেলেকে কথা দিয়েছেন ইলিশ মাছ কিনবেন। কিন্তু বাজারে এসে ইলিশের দাম শুনেই হতাশ। বড় ইলিশের কাছে যেতেই সাহস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এটি কীভাবে সম্ভব? ভরা মৌসুমেও ইলিশের এত দাম! দাম কেন বেড়েছে, এর ব্যাখ্যাও কারও কাছে নেই। বিক্রেতাদের কথা, নিলে নিন, না নিলে যান। তাদের বক্তব্য, তারা কম দামে কিনতে না পারলে কম দামে বিক্রি করবেন কীভাবে?

আগের বাড়তি দামেই গরুর মাংসের কেজি বাজারভেদে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির কেজি বাজারভেদে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। সোনালি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি প্রতিকেজি মুরগি প্রকারভেদে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে সব ধরনের মাছ আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। কম আয়ের শ্রমজীবী মানুষের আমিষের জোগানদাতা সিলভার কার্পের কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। দেড় থেকে দুই কেজি বা তার বেশি ওজনের সিলভার কার্পের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। তেলাপিয়ার কেজি ২০০ টাকা, কই মাছ ২০০ থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত। চাষের পাঙাশ মাছের কেজি ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।

রুই ও কাতলার কেজি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা, বাইম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা, বড় বোয়াল ৮০০ টাকা, ছোট ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের আইড় ৭৫০ টাকা। চাষের শিং মাছ ৫৫০ টাকা। পাবদার কেজি ৬০০ টাকা। মলা মাছের কেজি ৫০০ টাকা।

মাওনা চৌরাস্তা চালের বাজারে নতুন করে বাড়েনি চালের দাম। আগে দাম বেড়ে যাওয়া প্রতি কেজি চিকন চাল বাজার ও ধরনভেদে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চিকন চালের কেজি ৬৫ টাকা, পাইজাম ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, স্বর্ণা ও আটাশ চালের কেজি ৫৫ টাকা।

মসুর মোটা ডালের কেজি ১২০ টাকা, চিকন ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা। ছোলার ডাল ১০০ টাকা কেজি। আলুর কেজি ৫৫ টাকা, আদা ৩০০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম বেড়েছে। সব রসুনের কেজি এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।

ভোজ্যতেলের দাম নতুন করে বাড়েনি। প্রতি লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বোতলজাত পামওয়েলের লিটার ১৭০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনি ১৫০ টাকা। খোলা দুয়েক জায়গায় ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বেগুনের কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, ভেন্ডি ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৪০০ টাকা, শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টমেটো ২৬০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। মাওনা চৌরাস্তা সবজি ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া জানান, আড়ৎ থেকে তিনি বেশি দামে সবজি কিনেছেন তাই সবজির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সবজির দাম কমানোর তার কোন হাত নেই তেলিহাটি থেকে সবজি কিনতে আসা রতন ভূঁইয়া জানান, আমি একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করি আমার যে পরিমাণে বেতন পাই কোন রকমে আমার সংসার চলে কিন্তু সবজি বাজারে এসে দেখি সবজির দাম চড়া।

দোকানির সঙ্গে কথা বলতে শুনে বাজার করতে আসা এক নারী বলেন, মূল্য তালিকা থাকে না, দেখার কেউ নেই। কথা বলতে গেলে দোকানিরা মাস্তানের মতো আচরণ করেন।

স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানান, দ্রুত বাজার মনিটরিং করে নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য।

(ঢাকাটাইমস/০৯অক্টোবর/প্রতিনিধি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :