একটি সফলতার গল্প

রেজাউল মাসুদ
 | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩৬

নগরীর উত্তরা এলাকায় বসবাসকারী স্মার্টবয় পিয়াল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে গ্রাজুয়েট করে নামকরা এক প্রতিষ্ঠানের ফ্যাশন ডিজাইনার সে। ফেসবুকে মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করা তার অন্যতম ফ্যাশন। দুই বছর আগে ফেসবুকে পরিচয় হয় এক তরুণীর সাথে।পরিচয়ের জেরে মুঠোফোনে কথা হতো প্রায়ই তাদের। গড়ে ওঠে দুজনের বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কিছুদিনের মধ্যে সেই সম্পর্ক প্রেমে রূপান্তরিত করে পিয়াল। প্রেমিক পিয়াল প্রথমবার দেখা করতে গিয়ে ঘটান এক অঘটন। কৌশলে এবং প্রতারণার আশ্রয়ে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণীকে তার এক বন্ধু রাজুর সহায়তায় উত্তরায় তার বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। স্ত্রীকে কৌশলে এসময় বাসার বাইরে রাখে রাজু। এরপর নগরীর বিভিন্ন জায়গায় তরুণীকে প্রতারিত করে এবং সুকৌশলে নিয়মিত তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক চালিয়ে যায় পিয়াল।

একসময় পিয়ালের প্রতারণা মেয়েটি বুঝতে পারে, সে জানতে পারে তার সাথে একাধিক মেয়ের এমন সম্পর্ক। বিবাহের কথা বলায় এবং এসব বিষয় নিয়ে মতভেদে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।এক পর্যায়ে পিয়াল গাঁ ঢাকা দিয়ে তার সাথে সবধররনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।এ ঘটনায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে।মাকে ঘটনা খুলে বলে, ফোনে পিয়ালের সাথে মেয়ের মা যোগাযোগ করে, উচ্চবাচ্য কোন কথার উত্তর না দিয়ে ফোনটি কেটে দেয় পিয়াল, তার সব মোবাইল নম্বর অফ করে রাখে, এমনকি পিয়ালের যে সব আত্মীয় স্বজনের মোবাইল নম্বর মেয়ে জানত সেইসব নম্বরও বন্ধ রাখে।মেয়ে এবং তার পরিবার হন্য হয়ে খুজতে থাকে ছেলেকে, ভীষন অসুস্হতায় মেয়েটি ভেঙ্গে পরে, ট্রমায় যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।

টেলিভিশন পেপার পত্রিকায় পিবিআই-এর কথা জানতে পারে মেয়ের মা। বাবা মা সহ মেয়েটি পিবিআই ঢাকা মেট্রো র অফিসে সরাসরি আমার কাছে আসে। তাদের বাসা যাত্রাবাড়ীতে। বাবা জানায় তার মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে সবে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আমার নাবালিকা এ মেয়ের এমন পরিণতির কি কোন বিচার পাবনা? নুসরাত হত্যার ঘটনা রহস্য উদঘাটনসহ সবাইকে গ্রেফতার করে পুরো দেশকে আপনাদের সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছেন, পিয়ালকে আইনের আওতায় আনতে আমরা অন্যকোন সংস্থার কাছে যেতে চাইনা। প্লিজ আমাদের সহায়তা করুন, আমার মেয়ের জীবনটা বাচান।মেয়ের পরিবার পিবিআইর কাছে এমন মানবিক আকুতি জানিয়ে সহায়তা চায়।

ঘটনাটি আমলে নেয় পিবিআই।পিবিআই উত্তর বিভাগের একটি চৌকষ টিম চারমাস ছায়া তদন্ত করে ঘটনার পুরো সত্যতা পায়।প্রতারক পিয়ালের পরিচয় কর্মস্থল অবস্হান ঠিকানা সব জানতে পারে পিবিআই। পিয়ালের মাল্টিন্যাশনাল অফিসে যায় পিবিআই টিম।ঘটনার র ব্যাপারে অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়, পিয়ালের সাথে কথা হয় অনেকক্ষন, বুঝানো হয়, ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করে ভয়ও দেখানো হয়, কিন্ত প্রতারকের সহজাত এবং স্বভাবসুলভ ভংগিতে পিয়াল অস্বিকার করে সব।পরদিন পিবিআই অফিসে ডাকা হয় পিয়ালসহ তার বন্ধু রাজুকে।ঘটনার সব প্রমান তার সামনে উপস্হাপন করা হয়।কখন কোনদিন কবে মেয়েটির সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছে সব সচিত্র তার সামনে তুলে ধরলে কিছুটা ভয় পায় সে।মেযেটির সামনে মুখোমুখি করা হয়,ঘটনার আংশিক স্বীকার করে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিছুদিন সময় চেয়ে লিখিত দেন পিয়াল।

এরপর একইরকম স্বভাবসুলভ তালবাহানা করতে থাকে পিয়াল। সময়ক্ষেপন আর তার পরিবারকে মিথ্যা তথ্য দেয় মেয়েটি সম্পর্কে, মেয়েটি তাকে ব্লাকমেইল করছে বলে পরিবারের কাছে সহায়তা চায় পিয়াল। এসময পিয়ালের এক ভগ্নিপতি তার এ ধরনের অপকর্ম রক্ষায় অগ্রনী ভুমিকা নেয়।মেয়েটি এবং তার পরিবার আবার হতাশায় নিমজ্জিত হন। ছেলের পরিবারকে অনুনয় বিনয় করে বিষয়টি সমাধান করতে বলে মেয়ের অসহায় বাবা। হয়না কোন সমাধান, বরং মেয়ে সম্পর্কে নানা অপবাদ দিতে থাকে ছেলেপক্ষ। বড় প্রতিষ্ঠানর চাকুরী করা পিয়াল মনে করে মেয়েটি কিংবা পিবিআই তার কিচ্ছু করতে পারবেনা।হতাশা নিয়ে অবশেষে একদিন মেয়েটি পিয়ালকে ফোন দেয়, “তুমি বিষয়টা এভাবে ছেলে খেলা মনে করে উড়িয়ে দিচ্ছ, তারজন্য কিন্ত একদিন তোমায় আমার কাছে আসতেই হবে।” পিয়াল মেয়েকে আপনি আপনি বলে কথা বলে এবং ধমক দিয়ে তার পরিবারের সাথে কথা বলতে বলে, সে কিছু জানেনা বলে কথা এড়িয়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এরপরই শুরু হয় পিবিআই এর কর্মযজ্ঞ আর এ্যাকশান। ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়ে মেয়েটি মামলা দায়ের করার পরপরই পিবিআই এর টিম অভিযানে নামে। লোকেশন বের করে আসামী পিয়ালকে কোনকিছু ভাববার সুযোগ না দিয়ে মুহুরতেই উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সব দোষ স্বীকার করে নেয়। মামলাটি পিবিআই অধিগ্রহণ করে পিয়ালকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। একমাসেরও অধিক সময জেলখানা থেকে দেমাগ দাপট অহংকারের দর্পচূর্ণ ভেঙ্গে জামিনে বের হয় পিয়াল।মেয়েটির সাথে ছেলের পরিবারের হয় অসহায় আত্মসমর্পন।ভগ্নিপতি এবং পিয়ালের বন্ধুসহ অপরাধীরা পিবিআই র ভয়ে তটস্হ থাকে। পিয়ালের ভিতর যে পাপ এবং অসুর বাসা বেধেছিল সেটার মৃত্যু হওয়ায় মেয়েটি অবশেষে পিয়ালকে ক্ষমা করে দেয়।

গল্পের শেষের কথা: প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ানোর আগে সব মেয়েদের অত্যন্ত সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। কারণ এটি ভালোবাসা নয়, বোকামি।।

এটি আমার চাকুরী জীবনের অন্যতম সেরা সফলতার গল্প।

তখন আমি পিবিআই ঢাকা মেট্রোর এসপি।

রিপোস্টের কারণ: পিবিআই এর এসপির কল্যানে পিয়াল তার ভুল বুজতে পেরে ভালবাসার মানুষটিকে নিয়েই দুবছর যাবত ঘর বেঁধেছেন।গত পরশু তাদের এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়েছে।গতকাল ফোনে মেয়েটির কৃতজ্ঞতার কান্নায় আমিও আশ্রুসিক্ত হয়ে পরছিলাম। দোয়া করতে বাচ্চাটিকে আজই হসপিটালে দেখে এলাম।

স্বস্তি প্রশান্তির অবয়ব বোধহয় এমনই!!

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :