মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকিদাতা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৮ | প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:১৭

কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করে আলোচিত ব্যবসায়ী খলিল আহমেদকে হত্যার হুমকিদাতা নির্দেশদাতা দুজনকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‌্যাব-৩ এর একটি দল শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র গ্রেপ্তারের বিষয়টি ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছে।

হত্যার হুমকিতে আতঙ্কিত খলিল, তবুও বাড়াননি মাংসের দাম

সারা দেশে যখন মাংসসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে, তখন সবার চেয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করে চমক সৃষ্টি করেছেন রাজধানীর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল। তবে কম দামে মাংস বিক্রি করায় হত্যার হুমকিও পেয়েছেন তিনি। তবে হুমকিতে আতঙ্কিত হলেও মাংসের দাম বাড়াননি খলিল।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, হত্যার হুমকির কোনো প্রভাব পড়েনি খলিলের মাংসের দোকানে। দোকানের সামনে একাধিক ব্যানার লাগিয়ে আগের মতোই ৬৫০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করছে ‘খলিল গোস্ত বিতান’। এছাড়া হুমকির কোনো প্রভাব দেখা যায়নি দোকানের কর্মচারীদের মধ্যেও। দোকানের সামনে গরু জবাই করা থেকে শুরু করে মাংস বিতরণের কাজ করতে দেখা যায় অন্তত দুই ডজন কর্মচারীকে।

এদিন দুই ঘণ্টারও বেশি খলিলের দোকানের সামনে অবস্থান করে শাহজাহানপুর ও আশেপাশের এলাকা থেকে মাংস কিনতে আসা ক্রেতাদেরে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। ক্রেতারা যে যার প্রয়োজনমতো মাংস কিনছেন দোকানটি থেকে। দোকানের সামনে একাধিক ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি’।

হঠাৎ গুলি করে হত্যার হুমকিতে আতঙ্কিত জানিয়ে ঢাকা টাইমসকে খলিল আহমেদ বলেন, থানায় জিডি করেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে বলে জানিয়েছে।

এই মাংস ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যবসায়িকজীবনে আমি কাউকে কোনো ক্ষতি করিনি, কাউকে একটা বকা দিইনি। কর্মচারীদের সঙ্গে কাস্টমারের মনমালিন্য হলে আমি কাস্টমারদের পক্ষ নিয়ে তাদের মন রাখার চেষ্টা করি। ক্রেতারা আমাদের দোকানে আসে কারণ তাদের বিশ্বাস আছে এখানে কেউ ঠকবে না, আমার কাছে এসে ঠকলে তারা আমার কাছে আসতেন না।’

খলিল বলেন, ‘অনেক দুশ্চরিত্র লোক বা গোষ্ঠী আছে যারা আমার ভালো চায় না, আমার সাফল্য তাদের ভালো লাগে না তারা আমাকে এ ধরনের হুমকি দিচ্ছে।’

মাসখানেক আগে যখন সারাদেশে মাংসের দাম কম ছিল তখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি গরু জবাই করেন খলিল। তবে বর্তমানে ১৫ থেকে ১৮টি গরু জবাই করা হয় খলিল গোস্ত বিতানে। এতে প্রতিদিন ১২০-১৩০ মণ মাংস বিক্রি হয়।

বর্তমানে রাজধানীর অন্যান্য মাংসের দোকানে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় মাংস বিক্রি হলেও কীভাবে ৬৫০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করছেন- জানতে চাইলে খলিল বলেন, ‘আমাদের সেল (বিক্রি) বেশি, এজন্য আমরা কম দামে দিচ্ছি।’

জিডির বিষয় উল্লেখ করে এই মাংস ব্যবসায়ী জানান, দুটি নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন আসে। কল রিসিভ করতেই ফোনের অপর পাশ থেকে বলা হয়, তোর ছেলের জন্য ছয় বুলেট, তোর জন্য ছয় বুলেট রেখেছি। কথা না শুনলে বাবা-ছেলেকে মেরে ফেলব।‘

খলিলের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজিত কুমার সাহা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তদন্তে আমরা যে লিংক পেয়েছি সেই লিংক নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের এই সংশ্লিষ্ট অফিসাররা এটা নিয়ে কাজ করছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটনের বাইরেও তারা কাজ করছেন।’

খলিলকে হুমকির বিষয়টি সত্য জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের যতগুলো অ্যাংগেল আছে, সব অ্যাংগেলে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো তেমন কিছু নাই, আমরা খলিলকে আশ্বস্ত করেছি।’

ওসি জানান, খলিলের মাংসের দোকানের পাশেই শাহজাহানপুর থানা পুলিশের একটি টহল টিম সবসময় কাজ করে।

এদিকে খলিল মাংস বিতানের পাশেই ‘ছালাম মিট’ নামে আরেকটি মাংসের দোকান রয়েছে। খলিলের মাংসের দোকানে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও একই সময়ে ‘ছালাম মিট’ ছিল অনেকটা ক্রেতাশূন্য। দোকানটির সামনে যেতেই ক্রেতা না থাকার কারণও পরিষ্কার হয়। দোকানটির ভেতর সাইনবোর্ডে লেখা ‘গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি।’

পাশের দোকানে ৬৫০ টাকা, কিন্তু ছালাম মিটে মাংসের দাম ৫০ টাকা বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে দোকানটির এক কর্মচারী ঢাকা টাইমেসকে বলেন, ‘আমরা মাংসে কোনো হাঁড়, চর্বি দেই না। এজন্য আমাদের মাংসের দাম বেশি। খলিলে হাঁড় চর্বি মাথা সবকিছু মিশিয়ে মাংস বিক্রি করে। এজন্য তারা কম দামে বিক্রি করে। তারপরও যার যার নিজস্ব ক্রেতা আছে, তারা পছন্দের দোকানে যাবে। খলিলের ক্রেতারা খলিলে যান, আমাদের ক্রেতারা আমাদের কাছে আসেন।’

আপনারা ৬৫০ কেজিতে বিক্রি করলে লাভ থাকবে কিনা জানতে চাইলে এই দোকানি বলেন, ‘এখন গরুর দাম বেড়েছে। গরু কিনতেই ৭০০ টাকার মতো কেজি দাম চলে আসে। যখন গরুর দাম কম ছিল আমরাও কমে বিক্রি করতাম।’

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :