ইউক্রেন যুদ্ধ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা নেই

চলতি বছরের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের অবসানে আলোচনা ও শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল শুক্রবার জানিয়েছে, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাশিয়ার সঙ্গে যে কোনও শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ওয়াশিংটন এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তারা।
সংবাদপত্রটি বলছে, দুই বছর আগে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ রাজনৈতিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পশ্চিমা নেতারা কিয়েভের প্রতিরক্ষায় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন এবং তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পরাজিত করলে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সমর্থন ভেঙে যেতে পারে। যা ভূ-রাজনৈতিতে ওয়াশিংটনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুন্ন করবে।
ওয়াশিংটনের একজন সিনিয়র রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল চারাপ বলেন, ‘ইউক্রেনের স্বাধীনতার প্রকল্পে মার্কিন বিনিয়োগের মাত্রা বেড়েছে এবং তাই ইউক্রেনে রাশিয়ার উদ্দেশ্য পূরণ বা ব্যর্থতার উপর ভিত্তি করে ভূ-রাজনৈতিতে মার্কিন বিশ্বাসযোগ্যতা বিচার করা হবে।’
তিনি মনে করেন ‘যদি ইউক্রেনের পতন হয়- তাহলে রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের উদীয়মান ছদ্ম-জোট ভূ-রাজনৈতিতে আরও বেশি দাপট দেখাবে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই মাসের শুরুতে মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মস্কো সবসময় শান্তি আলোচনার জন্য উন্মুক্ত এবং ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাবে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও এই সপ্তাহে বলেছেন, ইউক্রেন বা তার পশ্চিমা সমর্থক কেউই রক্তপাত বন্ধ করতে ইচ্ছুক নয়। তাই মস্কোর উদ্দেশ্যগুলো অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
তিনি দাবি করেন, মার্কিন নির্বাচন এই ইস্যুতে খুব কম প্রভাব ফেলবে কারণ রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট উভয়ই রাশিয়াকে ‘প্রতিপক্ষ এবং হুমকি’ হিসাবে দেখেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, একদিকে রিপাবলিকানরা ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়নে ৬০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার বাইডেনের অনুরোধ অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে হাঙ্গেরির আপত্তিতে ইউক্রেনের জন্য প্রায় ৫০ বিলিয়ন ইউরোর সহায়তা আটকে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে ইউক্রেন। বর্তমানে গোলাবারুদের অভাবে সামরিক অভিযান কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে ইউক্রেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা আটকে যাওয়ার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেল ওলেকসান্দ্র তারনাভস্কি।
গত মাসে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল তারনাভস্কি জানান, সামরিক বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট গোলাবারুদের অভাবে ভুগছে এবং শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান না হলে অদূর ভবিষ্যতে কিয়েভের সামনে ‘বিরাট বিপদ’ আসবে।
তারনাভস্কি বলেন, বর্তমানে আমাদের কাছে গোলাবারুদের যে মজুত রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। তাই আমরা সেগুলো বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে পুনর্বণ্টন করেছি এবং যতদূর সম্ভব রক্ষাণাত্মক সামরিক কৌশল অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি। অর্থাৎ খুব প্রয়োজন পড়লে যেন সেগুলো ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইউনিটগুলোকে।
ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই জাগোরোদনিউক বলেছেন, ‘আমাদেরকে সামঞ্জস্য করার জন্য কোন সময় না দিয়েই সহায়তা বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা। যদি এই সংকটের সমাধান না করা হয় এবং ইউক্রেন সহায়তা না পায়, তবে এটি হবে পুতিনের জন্য একটি বিশাল উপহার।’
সূত্র: আরটি
(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রয়ারি/এমআর)

মন্তব্য করুন