কোন বিবেচনায় পুলিশ বাদী মামলায় অব্যাহতি পান মাহি-রকিব? কী ছিল প্রতিবেদনে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৪৪| আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:৫০
অ- অ+

ফেসবুক লাইভে এসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার (সাবেক) মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুসের অভিযোগ আনেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। আলোচিত এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে।

গতবছরের ১৭ মার্চ এই ঘটনার পর একইবছর আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। পরে আদালত মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। তখন আদালত জানান, চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করার পর মামলা আমলে নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হলো।

সম্প্রতি মাহির সঙ্গে রকিব সরকারের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপরই আলোচনায় এসেছে পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় কীভাবে এই দম্পতি তখন রক্ষা পেলেন? তাহলে কী মামলার কোনো ভিত্তি ছিল না? নাকি কারও হস্তক্ষেপে এই ঘটনায় আপস-মীমাংসা হয়েছে? নাকি পুলিশ প্রতিবেদন এমনভাবে দিয়েছে যাতে অভিযুক্তরা রক্ষা পান? এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা টাইমস অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লাইভ করা হলো, সেটা সবাই দেখল। আবার সেই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলো পুলিশ। তার মানে হয়ত দুই পক্ষ মীমাংসা করেছে। না হলে তো এমন হওয়ার কথা না। আবার মাহি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এজন্য কারও মধ্যস্ততায় মীমাংসা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

গতবছরের মার্চে মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার ওমরাহ পালন করতে যান। সেসময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালনরত মাহি সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে (১৭মার্চ ভোরে) এসে রকিবের গাড়ির শো-রুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন। এসময় মাহি বলেন, ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন ও মামুন সরকার নামে দুজনের নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়েছে।

মাহি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের বিরুদ্ধে ‘ঘুস’ নেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, একারণে পুলিশ তাদেরকে সহায়তা করছে না। ঘটনার পর মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথক দু'টি মামলা হয়। এরমধ্যে ভুক্তভোগী লাদেন একটি মামলা করেন। আরেকটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া।

মামলার পরের দিন দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। তবে একইদিন দুটি মামলায় জামিন পান মাহি। কিছুদিন পর দেশে ফিরে জামিন পান তার স্বামী রকিব সরকার।

মাহি ও রকিবের আইনজীবী ইশরাত হাসান জানিয়েছেন, গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনাল তাদেরকে অব্যাহতি দেন। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করার পর যাচাই বাছাই করে মামলা আমলে নেয়ার প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকায় বিচারক তাদের এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।

বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলা তদন্ত করছিলেন ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম। তবে তিনি বদলি হলে দায়িত্ব পান পরিদর্শক সেলিম। তদন্ত শেষে তিনিই প্রতিবেদন জমা দেন।

মামলার বিষয়ে জানতে বুধবার ফোন করা হয় বাসন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিমকে। তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এটা আগের পরিদর্শক সব করেছেন। পরে পরিদর্শক জাহাঙ্গীরকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি বদলি হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় এসেছি। তদন্তকালে একটা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পরে তো বদলি হয়ে গেছি। এরপর কে তদন্ত করছে জানি না।

এদিকে নথি ঘেঁটে জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলাটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেন বাসন থানার বর্তমান পরিদর্শক সেলিম। মামলা সম্পর্কে তথ্য দিতে কেন এতো লুকোচুরি জানতে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি আর ফোন ধরেননি।

এদিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, আমি এই থানার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এর বেশি জানি না।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মাহির এমন অভিযোগ এবং পুলিশ বাদী হয়ে মামলার পর প্রশাসনের অনেকে সেটা ভালোভাবে নেননি। আবার জিএমপি কমিশনারকে তার পদ থেকে সরাতে বিভিন্ন জায়গায় জোর লবিং চালান রকিব সরকার ও তার স্ত্রী মাহি। এতে তারা সফল হন। গত ৩১ মে এক প্রজ্ঞাপনে গাজীপুরের কমিশনার মোল্যা নজরুলকে এপিবিএনে বদলি করা হয়। পরে পুলিশ মামলা তদন্তে কিছুটা ধীরগতি দেখায় এবং প্রতিবেদন এমনভাবে প্রস্তুত করে যাতে মামলা আর না আগায়।

সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক মনে করেন, অভিনেত্রী পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে লাইভ করেছেন। সেটা যদি মিথ্যা হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। ‘তবে কেন প্রতিবেদন দিলো না সেটা বলতে পারব না’, বলেন সাবেক এই আজিপি।

অনেক ক্ষেত্রে আপস মীমাংসা হয় উল্লেখ করে সাবেক পুলিশপ্রধান বলেন, ‘অনেকে ভুল স্বীকার করেন, তাই আপস মীমাংসা হয়। এক্ষেত্রে তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি দেখিয়ে প্রতিবেদন দিতে পারে। হয়ত ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষও বলতে পারে সেভাবে প্রতিবেদন দিতে।’

সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে হারেন মাহি:

মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আগে থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে মাঠে নামেন মাহি।

তবে ভোটের লড়াইয়ে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন এই অভিনেত্রী। রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহি ট্রাক প্রতিকে পান মাত্র ৯ হাজার ৯ ভোট। ওই আসন থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী।

বিচ্ছেদ:

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিডিও বার্তায় মাহি বিবাহ বিচ্ছেদের কথা জানান। এরপর থেকে ছেলে সন্তান দিয়ে স্বামী রকিব সরকার থেকে আলাদা থাকছেন এই অভিনেত্রী।

(ঢাকাটাইমস/২৯ফেব্রুয়ারি/এসএস/ইএস/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার
বিএনপির ওপর নির্যাতনের প্রতিশোধ হবে ৩১ দফা বাস্তবায়ন: তারেক রহমান
পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি ও বিশেষ ভিসা সুবিধা বাতিল করল ভারত
আনিসুল হকের বান্ধবী তৌফিকা করিমের ৩৮টি ব্যাংক হিসাব জব্দ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা