অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে অভিযানে র্যাব, জরিমানা ১৪ লাখ
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়েছে র্যাব-৩। অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মসহ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও ভুল চিকিৎসা দেওয়াসহ নানান অপরাধে ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
সোমবার র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, র্যাব-৩ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার মাধ্যমে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে নানাভাবে রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নানা দুর্ভোগে ফেলছে। সাধারণত রাজধানীর বিভিন্ন নামকরা সরকারি হাসপাতালের দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা এসব হাসপাতালে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এসে প্রতারিত হয়।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত না হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিম্নমানের অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করে অদক্ষ চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, নার্স ও আয়াদের মাধ্যমে ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের নানা ধরনের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়। তাছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং নমুনা সমূহ ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে সংরক্ষিত হয় যাতে এর কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়।
উদাহরণ টেনে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এক্সরে মেশিন এমন জায়গায় রাখা হয় যেখানে ন্যূনতম সুরক্ষা-ব্যবস্থা নেই৷ এতে এক্সরে করতে আসা রোগী, যিনি এক্সরে করাচ্ছেন তিনি এবং আশপাশের মানুষ ভয়াবহ রেডিয়েশনের শিকার হচ্ছেন৷ রি-এজেন্ট অর্থাৎ কেমিক্যালের পাশে রাখা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় জিনিস। অনুমোদনবিহীন এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অধিকাংশ চিকিৎসকই অদক্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এছাড়াও ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স ও অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম৷ অর্থাৎ চিকিৎসার নামে মরণ ব্যবস্থা চালু করে রেখেছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা।
অভিযানের র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় খিলগাঁও এলাকায় বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ‘সীমান্তিক ক্লিনিক’ এর মালিক মো. সামসুদ্দীনকে তিন লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান মাহবুব আলমের কোনো প্রকার শিক্ষাগত সনদ না থাকায় সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ওষুধ রাখার স্টোর নোংরা, ওটি ও এক্সরে রুম অস্বাস্থ্যকর হওয়া, ডিউটি ডাক্তার ১৫ জনের জায়গা ১০ জন থাকা, নার্স ৩০ জনের স্থলে ১২ জন থাকা, ফায়ার লাইসেন্স না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের।
এছাড়া রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ‘পিপলস্ হসপিটাল’ এর মালিক মো. মনোয়ারুল হককে চার লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকা, ব্লাড ব্যাংক এর লাইসেন্স না থাকা, পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ওটি ও এক্সরে রুম অস্বাস্থ্যকর হওয়া, অপ্রতুল ডাক্তার ও নার্স থাকা প্রভৃতি অনিয়মের।
এছাড়া রাজধানীর মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ফ্রেন্ডস কেয়ার হাসপাতালে’ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে হাসপাতালের মালিক শফিকুর রহমান এবং সাকুর আহমেদকে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হাসপাতালের মেয়াদত্তীর্ণ লাইসেন্স, পরিবেশ ও নার্কোটিক্স ছাড়পত্র না থাকা, ওটি ও এক্সরে রুম ময়লাযুক্ত প্রভৃতি অনিয়ম।
একই সময় রাজধানীর মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘সুরাইয়া হাসপাতালে’ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে হাসপাতালের মালিক সিরাজুল ইসলামকে দুইলাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
এর আগে গত ৪ মার্চ ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব-৩। এসময় ৫৮ জন দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/এসএস/ইএস)