কোটিপতি হওয়ার আশায় অস্ত্র তৈরি শুরু করেন, প্রশিক্ষণ নেন ভারতে
ভারতের কলকাতা এবং আসামের শিলিগুঁড়িতে প্রায় ১২ বছর মূর্তি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করে আসছিলেন মোখলেছুর রহমান সাগর। সেখানে সুকুমার নামক একজন অস্ত্র তৈরির কারিগরের সাথে পরিচয় অতঃপর তার কাছ থেকে অস্ত্র তৈরির দক্ষতা অর্জন করে সাগর।
এরপর দেশে এসে অস্ত্র তৈরি করে স্বল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় উক্ত অবৈধ অস্ত্র তৈরি করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরবরাহের পরিকল্পনা করেন তিনি।
দেশে এসেই তানভির, অনিক ও সৈকতদের নিয়ে অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে সাগর। গ্রেপ্তারকৃত তানভির পেশায় একজন লেজার সিএনসি ডিজাইনার। লেজার সিএনসি ডিজাইনার হওয়ায় সে যে কোন কিছু কম্পিউটারে নকশা অনুযায়ী অত্যন্ত সূক্ষভাবে কাটিং করার দক্ষতা অর্জন করে। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তানভির সাগরের দেওয়া নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে সাগরের অস্ত্র তৈরির প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। সাগর ও তানভির অস্ত্র তৈরি করে সেগুলো অনিক ও সৈকতের নিকট হস্তান্তর করতো।
সোমবার একটি অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রটিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১০। বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার এম. জে. সোহেল জানান, রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে ৪টি পিস্তল ও অস্ত্র তৈরীর বিপুল সরঞ্জামাদিসহ অস্ত্র তৈরির কারিগরসহ ৬ জন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০।
এম. জে. সোহেল জানান, সোমবার পৌনে ১১টায় র্যাব-১০ রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকার উত্তর বাড্ডায় অভিযান চালায়। অভিযানে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের প্রধান ও অস্ত্র প্রস্তুতকারী মোঃ মোখলেছুর রহমান সাগরর (৪২) ও মোঃ তানভির আহম্মেদকে (৩২)। গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার মধ্যরাত পৌনে ৩টায় বাড্ডার হাজী আব্দুল হামিদ রোডের পূর্ব-পদরদিয়া এলাকায় আরেকটি অভিযান চালিয়ে অনিক হাসান (২৮), মোঃ আবু ইউসুফ সৈকত (২৮), রাজু হোসেন (৩৮), মোঃ আমির হোসেন (৪০) নামের অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও ব্যবসায়ী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৪টি পিস্তল, ৪ রাউন্ড কার্তুজ পিস ৭টি পিস্তলের কাঠের ফর্মা, ১০টি ফায়ারিং ম্যাকানিজম, ৪টি ট্রিগার, ২টি পিস্তলের হ্যান্ডগ্রিপ, ২টি ড্রিল বিট, ৫টি রেত, ৫০টি স্প্রিং, ৪০টি পিস্তলের নাট বল্টু, ২টি কম্পাস, ৩টি গাজ, ৪টি ক্লাম, ২টি ড্রিল মেশিন, ২টি বাইস, ১টি বার্ণি স্কেল, ১টি মুগুর, ৪টি ক্লাম, ২০টি হেস্কো ফ্রেম, ২টি গোল্ড এলএস ফ্লাম, ১টি টুল বক্স, ১টি গ্যারেন্ডার মেশিন, ১টি কাঠের যোগান, ১টি হাতুরি, ৪টি শিরিস কাগজ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায় প্রতিটি পিস্তল ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতো এই চক্রটি। গ্রেপ্তারকৃত আমির ও রাজু তাদের অন্যতম অস্ত্রের ক্রেতা। আমির ও রাজু অস্ত্র ক্রয় করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের কাছে অধিক মূল্যে বিক্রি করতো। তারা উভয়ই অস্ত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে অনিক ও সৈকতের কাছে আসে এবং অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করাকালীন হাতেনাতে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।
(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এইচএম/কেএ)