ইরানের হামলার ভয়: শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন নেতানিয়াহু

ইরানের সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। স্থানীয় গণমাধ্যম এ কথা বলেছে। খবর বিবিসির।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইরানের সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যা করা বিমান হামলার জন্য তেহরান প্রতিশোধ নেবে এমন সম্ভাবনা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন>> ইসরায়েলে মার্কিন কূটনীতিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
মার্কিন কর্মকর্তারা বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ইসরায়েলের ওপর ‘চ্যালেঞ্জিং’ বড় হামলা অচিরেই ঘটতে পারে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা প্রতিরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক- দুভাবেই প্রস্তুত।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং বিরোধী ব্যক্তিত্ব বেনি গ্যান্টজসহ তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিবিএসের সঙ্গে কথা বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যে ইরান ১০০টিরও বেশি ড্রোন, কয়েক ডজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং সম্ভবত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
এগুলো ইসরায়েলে সামরিক স্থাপনা টার্গেট করতে পারে বলে জানা গেছে। ওই কর্মকর্তা যোগ করেন, ইরান পিছিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন একটি সম্ভাবনা এখনও রয়েছে।
শুক্রবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, “সেই হামলার আকার, স্কেল, পরিধি কেমন হতে পারে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।”
ইরানের হুমকি বিশ্বাসযোগ্য, যোগ করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যেই ইরানের হামলার হুমকির ঘটনায় ইসরায়েলকে তার দেশের ‘লৌহবর্ম’ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশকে ইসরায়েল ভ্রমণে সতর্কতা জারির দিকে পরিচালিত করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলে কূটনৈতিক কর্মীদের এবং তাদের পরিবারকে তেল আবিব, জেরুজালেম ও বেরশেবা শহরের বাইরে ভ্রমণে নিষেধ করেছে।
কিছু ইসরায়েলি বলেছেন যে তারা সম্ভাব্য ইরানি হামলা নিয়ে চিন্তিত নন।
জেরুজালেমের একটি বাজার থেকে ড্যানিয়েল কোসম্যান বলেন, “আমরা জানি যে আমরা শত্রুদের দ্বারা ঘেরা, দক্ষিণে, উত্তরে, পূর্বে এবং পশ্চিমে।”
“আমরা ভয় পাই না, আমি আপনাকে কথা দিতে পারি। চারপাশে তাকান, লোকেরা বাইরে যাচ্ছে।” বলেন তিনি।
ইরানের হামলার সম্ভাবনা ইসরায়েলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সরকার পানি, তিন দিনের খাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ করার বিদ্যমান নির্দেশনার উপরে জনগণকে কোনো নতুন পরামর্শ দেয়নি।
ইসরায়েলি রেডিও অবশ্য জানিয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আক্রমণের সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে পাবলিক আশ্রয়কেন্দ্রের প্রস্তুতি রয়েছে।
গত সপ্তাহে ইরানের হুমকির সম্ভব হওয়ার প্রথম ইঙ্গিত হিসেবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কমব্যাট সৈন্যদের জন্য অভ্যন্তরীণ ছুটি বাতিল এবং বিমান প্রতিরক্ষা জোরদার করেছে।
ইসরায়েল দামেস্কে ইরানি দূতাবাসের পাশে হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে দেশটি এ হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হয়
১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৩ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ইরানের ঊর্ধ্বতন সামরিক নেতারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাদের মধ্যে সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের এলিট কুদস ফোর্সের সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিও ছিলেন।
ইসরায়েল এ হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশটি এই হামলা চালিয়েছে বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে।
বেশ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের ওপর হামলা শুরু করা থেকে ইরানকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন, এই ভয়ে যে এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের জন্ম দিতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীন, সৌদি আরব এবং তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ইরানের ওপর তাদের প্রভাব ব্যবহার করতে রাজি করার চেষ্টা করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, তার সরকার ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের সমস্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন মেটাতে’ প্রস্তুত।
শুক্রবার মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের সঙ্গে দেখা করার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ইরানের আক্রমণের হুমকির কারণে দুই দেশের মধ্যে বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়েছে। সূত্র বিবিসি।
(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/এফএ)

মন্তব্য করুন