ফরিদপুরে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু, সাপ মেরে লাখ টাকা পাচ্ছেন দুজন

ফরিদপুরে বিষধর রাসেলস ভাইপারের দংশনের শিকার এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাসেলস ভাইপার সাপের দংশনের শিকার কৃষক হোসেন বেপারী (৫১) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মারা গেছেন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কৃষক হোসেন বেপারী সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গম চরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পরেশউল্লা বেপারীর ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হোসেন বেপারীকে রাসেলস ভাইপার সাপে কামড়া দেয়। পরে তাকে ট্রলারযোগে পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার আগেই শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়।’
এদিকে, পার্শ্ববর্তী ডিক্রিরচর ইউনিয়নে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুদিনে দুইটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেগুলো পিটিয়ে মেরেছেন গ্রামবাসী।
পুড়ন : রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামে ক্ষেতে কাজ করার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পান ওই গ্রামের তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)।
মুরাদ মোল্লা বলেন, ‘সকালে বাদামের জমিতে কাজ করার সময় সাপটি নজরে পড়ে। এরপর লাঠি এনে তিন-চারটি বাড়ি মেরে সাপটি মেরে ফেলি।’
এর আগেরদিন (বৃহস্পতিবার) ওই গ্রামের হারুন শেখের ছেলে ইউসুফ আরও একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরেছেন বলে জানান তিনি।
ডিক্রির চর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, ‘গতকাল দুপুরে ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর পাশে একটি রাসেলস ভাইপার দেখে পিটিয়ে মারেন এলাকাবাসী।’
তারা পাবেন ৫০ হাজার করে পুরস্কার:
বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শহরের রাসেল স্কয়ারে দলীয় কার্যালয়ে এক সভায় ঘোষণা করেন, রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেবেন।
এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হলেও পুরস্কারের অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকির। তিনি বলেন, ‘ঘটনা সঠিক। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ঘোষিত পুরস্কারের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নিয়াজ জামান সজীব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমানে আমাদের সভাপতি ঢাকায় অবস্থান করছেন। রাসেলস ভাইপার সাপটি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি (যিনি মেরেছেন) পুরস্কার পাবেন।’
ওইদিন সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ‘প্রতিটি রাসেলস ভাইপার সাপ মারার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হবে। যতজন যে কয়টি সাপ মারতে পারবেন, সাপপ্রতি ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এ সাপ থেকে মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টার কারণেই এ ঘোষণা দেওয়া হলো।’
তবে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি দেশের শীর্ষ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ঘোষণার সময় এ–সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে জানা ছিল না। তাছাড়া এটি কোনো খোলা জনসভা ছিল না, ছিল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির ঘরোয়া সমাবেশ। তবে এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ‘ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। সেখানে বলা হবে, রাসেলস ভাইপার জীবিত অবস্থায় ধরে বন বিভাগের কাছে সোপর্দ করা হলে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।’
এটিও পড়ুন: ‘রাসেলস ভাইপারে আতঙ্ক নয়, অ্যান্টিভেনম পর্যাপ্ত’
(ঢাকাটাইমস/২১জুন/এসআইএস)

মন্তব্য করুন