ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করে সমাধানের পথ রুদ্ধ করে কাদের কী লাভ হলো: ড. রওনক

পৃথিবীজুড়েই তারুণ্যের একটা নিজস্ব স্বাধীন সত্তা আছে, ভাষা আছে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধরন আছে। সেই ভাষা বুঝা আমাদের দায়িত্ব, শিক্ষক হিসেবে আমরা তাদের সেই আবেগকে ধারণ করি বলেই তাদের নিয়ে আমাদের পথ চলা অনন্তকালের। রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব আছে তাদের সেই আবেগকে মুল্য দেয়া, অন্তত তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেয়া, তাদের দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা- তাদের বেকারত্বের গ্লানি, ছাত্র জীবন শেষে হতাশা, তারুন্যের না পাওয়ার হাহাকার, সমাজ আর সংসারের চাপ- এসব কিছুর চাপে অতিষ্ঠ হয়েই আজ তারা সরকারি চাকরির জন্য রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে ।
তাদের বাস্তবতা এই আমরাই তৈরি করেছি, এখন আমাদেরকেই তার সমাধান করতে হবে। এই সংকট হতে পালাবার পথ নেই, তাদের কিংবা তাদের দাবিগুলোকে অবজ্ঞা করারও কিছু নেই। কোভিড পরবর্তী বছরগুলোতে সারাবিশ্ব জুড়েই তারুন্যের এই সংকট চলছে। সেসব দেশগুলোতে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন, তারা তারুণ্যের বেকারত্বের এই হতাশাজনক আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে ও মনোযোগ সহকারে ধারন করে, সমস্যার সমাধান কল্পে কাজ করে চলছে, আমাদেরকেও তাই করতে হবে। দমন নিপীড়নের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসকে রক্তাক্ত করা কোনভাবেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে, সংলাপ চলতে পারে, পারস্পরিক সম্পর্কটা আরেকটু সহজ করে এগুতে পারতো, অথচ এখন কি হলো? এভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের উপর আক্রমণ করে সমস্যা সমাধানের সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়ার ফলে কাদের কি লাভ হলো? সংলাপের কোন বিকল্প নেই, ছাত্রদের কথা মনোযোগ দিয়ে সারাজীবন ধরে আমরা শিক্ষকরা শুনি, রাষ্ট্র না হয় একদিন শুনলো! সিদ্ধান্ত যাইহোক, তাদেরকে শোনাটা জরুরী, অবজ্ঞা নয়। তাদের দাবি যৌক্তিক না অযৌক্তিক- সেই বিচার তাদের দাবিগুলো শুনেও করা যেতো। তাদেরকে দূরে ঠেলে দিলে এই ফসল যাবে অন্য ঘরে! তাই দমন-নিপীড়ন নয়, প্রয়োজন সহানুভূতিশীল হওয়া, ধৈর্য সহকারে তাদের আবেগের সাথে একাত্মতা বোধ করে সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। তারা আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ছাত্র, আমাদের ভালোবাসা ❤️❤️।
দুবাই এয়ারপোর্ট,
১৬ জুলাই।
লেখক: ড. রাশেদা রওনক খান, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[লেখাটি লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহিত]

মন্তব্য করুন