কুষ্টিয়া থানা ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলা, গুলিতে নিহত ৮

কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের গুলিতে আটজন নিহত এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। তাদেরকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শহরের থানাপাড়া এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর গেটে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
এদিন দুপুর ১টার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়। পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ।
পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেনি। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
এর পরপরই আন্দোলনকারীরা থানার ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে থানার ভেতরের সমস্ত আসবাবপত্র ও জরুরি রেকর্ডসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে যায়। এছাড়া ভবনের সামনে থাকা ৮-১০টি মোটরসাইকেল ভস্মীভূত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে দুপুর ২টার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি গ্রুপ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ঢুকে পড়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি চালায়। এতে বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা আটজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসায় রক্তের জন্য হাহাকার চলছে। হতাহতদের স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এদিকে দুপুর ২টার পর পরই হাজার হাজার মানুষ কুষ্টিয়া শহরে নেমে এসে উল্লাস করতে থাকেন। অনেকে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। কেউ কেউ মিষ্টিও বিতরণ করেন।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। আওয়ামী সমর্থকদের কয়েকটি দোকানে লুটপাট হয়েছে।
সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও কিছু জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।এছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।
(ঢাকা টাইমস/০৬আগস্ট/এসএ)

মন্তব্য করুন