যমুনার সব অবৈধ বালুঘাট বন্ধ, দখলে নিতে সংঘর্ষের শঙ্কা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ‘হোয়াইট গোল্ড’ হিসেবে খ্যাত অবৈধ বালু উত্তোলন ও বালুঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১৬ বছর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দখলে থাকা এসব বালুঘাট নিজেদের হাতে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগবিরোধী লোকজন। এ নিয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের সারপলশিয়া, সিরাজকান্দি, ল্যাংড়া বাজার, কোনাবাবাড়ী, মাটিকাটা, গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া, গোবিন্দাসী, খানুরবাড়ী ও জিগাতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ বালুঘাট বন্ধ রয়েছে। বালুঘাটের রাস্তায় স্থাপন করা হয়েছে গাছের খুঁটি। ফলে কোনো ট্রাক ঘাটগুলোতে যেতে পারছে না। বালুঘাটে নিশ্চল পড়ে আছে ভেকু। একেবারে নীরব-নিস্তব্ধ পরিবেশ।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা জানাজানি হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের বিরোধী লোকজন বালুঘাটগুলো বন্ধ করে দেয়। সরেজমিনে দেখা যায়, তারা সেখানে পাহারা বসিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী দেখা যায়নি। তাদের দলীয় কার্যালয় ও বাসাবাড়িতে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত ১৫ বছরের বিভিন্ন সময়ে এসব বালুঘাট তার নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। সবশেষ টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের ছত্রছায়ায় তার নেতাকর্মীরা দাপটের সঙ্গে এসব ঘাট পরিচালনা করত তারা। বালুঘাট থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা নিতেন প্রভাবশালী নেতারা।
পটপরিবর্তনে এলাকার লোকজন বালুঘাট বন্ধ করে দিয়েছেন বলে দাবি নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মন্ডলের। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের নেতারা মানুষের ওপর জুলুম, নির্যাতন ও নানা ধরনের হয়রানি করে যমুনা নদীর ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিল। ফলে বর্ষা মৌসুমে নিকরাইল ইউনিয়নের যমুনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয়রা তাদের বসতভিটা রক্ষায় এলাকার সব বালুঘাট বন্ধ করে দিয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে ওঠেন দলের নেতাকর্মীরা। কোণঠাসা হয়ে পড়ে আওয়ামী বিরোধীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ বালুর ব্যবসা করে রাতারাতি লাখ লাখ টাকার মালিক হন। এসব নেতা এখন আত্মগোপনে।
(ঢাকাটাইমস/৯আগস্ট/মোআ)