আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করেছিল কারা, কার নির্দেশে? যা জানা গেল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা কর্মসূচি ঘিরে গত ১৭ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট এবং পরদিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেওয়া হয়। তৎকালীন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক একাধিকবার ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্য দেন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল সরকারি দুই সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। একই সঙ্গে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সরাসরি ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যদিও সরকারি সংস্থাগুলো ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেনি। তবে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছিলেন, ইন্টারনেট অবকাঠামোয় অগ্নিসংযোগের কথা।
জানা গেছে, ১৫ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে আরেক নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলা হয়।
পরদিন ১৬ জুলাই দুপুরের দিকে বিটিআরসির একই বিভাগ থেকে দেশের ৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ আসে। এই নির্দেশের ক্ষেত্রে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কথা বলা হয়।
সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ও আইটিসি সূত্রে জানা যায়, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় বিটিআরসি ব্যান্ডউইডথ বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আইটিসি কোম্পানিগুলো লিখিত আদেশ চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়। রাত ৯টার মধ্যে পুরো দেশ ইন্টারনেট–বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত বিটিআরসি নজরদারি করতে থাকে। সাবমেরিন কেবল কোম্পানিকে তখনকার প্রতিমন্ত্রী পলক নিজে ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলেন।
অন্যদিকে ১৭ জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনাগুলো দিতে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা এনটিএমসি। সেদিন রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান নেতৃত্বাধীন এনটিএমসি থেকে মোবাইল অপারেটরদের বলা হয়, তাদের আধেয় বা কনটেন্ট ‘ব্লকিং’ ও ‘ফিল্টারিং’ ডিভাইসের আওতার বাইরে থাকা ফেসবুক ও ইউটিউব রাত ১২টা থেকে বন্ধ করে দিতে হবে। এর দুই ঘণ্টার মাথায় এনটিএমসি সব মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয়।
এছাড়া ২৮ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে এনটিএমসি থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের বলা হয়, ইন্টারনেট সচল হবে। তবে তার আগে অপারেটরদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ভাইবার, ইমো, ইউটিউব, বিপ, সিগন্যাল, স্কাইপ ও বটিম বন্ধ করতে হবে।
পুরো দশদিন পর গত ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয় এবং ৩১ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালু হলেও সর্বশেষ সরকার পতনের অসহযোগ আন্দোলনেই মধ্যে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির দিন ৫ আগস্ট ফের কয়েক ঘণ্টার জন্য মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড উভয় ইন্টারনেট সেবাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর দুপুর ২টার পর এনটিএমসির নির্দেশনাতেই দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সচল হয়।
এদিকে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। রবিবার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নির্দেশে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব একেএম আমিরুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে সময় কেন ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল এবং কার নির্দেশে এ কাজ করা হয়েছিল তার তদন্ত শুরু হচ্ছে। দায়ীদের শাস্তি পেতে হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/এমআর)