প্রেসক্লাবে বিএফইউজে-ডিইউজের সমাবেশ
গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল দাবি
সাংবাদিকদের সুরক্ষা, গণমাধ্যমবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচারদাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। সাংবাদিক নেতাদের নামে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তারা এসব ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনেরও ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে এসব দাবি ও ঘোষণা দেন নেতারা।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং সাংবাদিক নেতাদের নামে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের প্রতিবাদে এই সাংবাদিক সমাবেশ হয়।
সমাবেশে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পতনের পর কোনো দাবি দাওয়ার জন্য রাজপথে নামতে হবে এটা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না। তবে দুঃখের বিষয়— সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে আমাদের রাজপথে নামতে হচ্ছে। সাগর-রুনির হত্যার বিচার চাইতে হবে কেন? এটা নিয়ে এত টালবাহানা কেন। কেন আপনারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না। কেন কোনো পুলিশের ইনকোয়ারি করেন নাই, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’ অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা গণতন্ত্র নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করছেন অভিযোগ করে বিএফইউজের সভাপতি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারবেন না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে, সে বাংলাদেশকে কলুষিত করার ক্ষমতা আপনার নেই।’
রুহুল আমি গাজী যেসব সাংবাদিক শেখ হাসিনা সরকারের সময় অপকর্ম ও দালালি করে বেড়িয়েছেন তাদেরও ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন, ‘সোজা পথে চলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই। অন্যথায় দায়-দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে।’
বিভিন্ন মাধ্যমে সাংবাদিক নেতাদের চরিত্র হনন করে ভুয়া বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের নিন্দা জানিয়ে বিএফইউজে সভাপতি বলেন, ‘এ কেমন সাংবাদিকতা? অপসাংবাদিকতা সাংবাদিক সমাজ সহ্য করবে না। মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার জন্য, সাংবাদিকদের চরিত্র হনন গণমাধ্যের কাজ নয়। এদের কিছুতেই ছাড় দেয়া যাবে না।’
কবি আবদুল শিকদার বলেন, ১২ বছরেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়া দুঃখজনক। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’ গত ১৫ বছরে ৬৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এসব সাংবাদিক পরিবারকে ক্ষতি পূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
সমাবেশে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী দীর্ঘ ১২ বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার বিচার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারকে বলতে চাই— অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, একইভাবে আর কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে গিয়ে যেন কোনো সাংবাদিক আহত-নিহত না হন সেটাও চাই।’
ত্যাগী সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে সাংবাদিক সামাজকে কলুষিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএফইউজে মহাসচিব। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের আগেও রাস্তায় গুলির সামনে দাঁড়িয়ে আমরা সমাবেশ করেছি। তখন বলেছিলাম, ছাত্রদের ওপর গুলি বন্ধ করো, না হয় আমাদের ওপর গুলি করো। রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন করলেও কোনো দিন দলদাসের মতো কাজ করিনি। তারপরও কিছু লোক ত্যাগী সাংবাদিকদের কলুষিত করছে।’
ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, সেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কিছু মিডিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার করছে।’ যারা এসব অপকর্মে জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের তদন্ত করা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার বাংলাদেশের সবকিছু এককেন্দ্রিক করার মধ্য দিয়ে এখানে (সংবাদ জগৎ) একটি দালাল বাহিনী তৈরি করেছিল বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সেই দালালদের আমরা চিনি। তারা এখনো বিষোদগার করে যাচ্ছেন।’ বিগত দিনের কর্মের জন্য তাদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান তিনি।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান প্রতিবেদক ও ডিআরইউর সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানি তার বক্তব্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনটি দাবি করেন। প্রথমটি হলো, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের সময় বলা হয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরা হবে। কিন্তু ১২ বছরেও তা হয়নি। তার দাবি, তৎকালীন পুলিশ প্রধানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। দ্বিতীয়টি হলো, স্বৈরাচার সরকারের পতনের সময় নিহত চার সাংবাদিকের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আর তৃতীয়টি হলো, ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারকে যেসব সাংবাদিক ‘তেল’দেওয়ার কাজ করেছেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। যাতে করে তারা কখনো সংবাদ সম্মেলন করতে না পারে।
মোরসালিন সাংবাদিক নেতাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশেনের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এমন নোংরামি থেকে সংশ্লিষ্টদের সরে আসার আহ্বান জানান।
ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দ্য নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, মুন্সীগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী বিপ্লব হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুবেল, বিএফইউজের সহসভাপতি খায়রুল বাশার, সাবেক সহসভাপতি জাহিদুল করিম কচি, সাংবাদিক নেতা বাছির জামাল, এরফানুল হক নাহিদ, শাহীন হাসনাত, খন্দকার আলমগীর, সাঈদ খান প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/জেবি/মোআ)