জাতীয় সংগীত নিয়ে কর্নেল অলি বললেন, সবকিছুই পরিবর্তন সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৪

জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সবকিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের বিষয়ে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার দাবি নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

কর্নেল অলি বলেন, ‘একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে, জাতীয় সংগীত একটি বিতর্কিত বিষয়। সুতরাং এটি পরিবর্তন করা যাবে না। তার জানা উচিত, জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সবকিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব।’

মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কর্নেল অলি।

সংবাদ সম্মেলনে গণবভনকে মিউজিয়াম বানানোর দাবি নিয়েও কথা বলেন কর্নেল অলি। তিনি বলেন, ‘গণভবন কারও ব্যক্তিগত ভবন না, বরং জাতীয় প্রতিষ্ঠান। মিউজিয়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে প্রশ্ন হলো গণভবনে কেন? অন্য জায়গায় নয় কেন? জাতীয় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার আইনগত ভিত্তি এখন কোথা থেকে পেলেন? ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর অন্য কিছুই অধিকতর গুরুত্ব পেতে পারে না।’

তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘অথর্ব, অকর্মণ্য ও ধীরগতির ব্যক্তিদের দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’ তার পরামর্শ, ‘গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে মনোনয়ন বা নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া উপদেষ্টা এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অতীত ইতিহাস জানা না থাকলে বা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব থাকলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

অলি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী, অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারী এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হয়েছে। এ অসীম আত্মত্যাগকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।’

অলি সতর্ক করেন, ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের সব কর্মকাণ্ড স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন না হলে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। অনেকগুলো নিয়োগ নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। হুজুগের মাথায় লোক দেখানো কাজ করলে হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এলডিপির পক্ষ থেকে গত ৮ ও ১৭ আগস্ট দুই দফায় সংবাদ সম্মেলন এবং ৩১ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মোট ৮৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করি, যা আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয় বরং দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সংস্কার বাস্তবায়নের গতি হতাশাব্যাঞ্জক।’

কর্নেল অলি বলেন, ‘আন্দোলনকারী ছেলেমেয়েদের বা জনতার সরলতাকে পুঁজি করে কোনো অন্যায় পদক্ষেপ নেওয়াও ঠিক হবে না। এদেশে একনায়কত্ব স্বৈরশাসন কায়েমকারী, গণহত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, টাকা লুণ্ঠনকারী, চাঁদাবাজ এবং জঙ্গীবাদের কোনো স্থান নাই। যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলার উন্নতি সাধন করতে হবে। আমরা জানি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি খুবই কঠিন কাজ।’

অলি সতর্ক করেন, ‘পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে, তা না হলে গণহত্যাকারীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ, সমস্যার অন্ত নেই। এ চ্যালেঞ্জগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করে জনগণকে স্বস্তি দিতে হবে, তা না হলে আমাদের আরও কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অসংখ্য আহত ছাত্র-জনতা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। এরই মধ্যে বন্যায় কয়েকটি জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বারবার ভাটির দেশ হিসেবে আমরা উজানের দেশের বৈরিতার শিকার হচ্ছি।’

তার দাবি, ‘শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ও লোটা বহনকারী অনেক ব্যক্তি এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গুম, খুন, দুর্নীতি, টাকা পাচারকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা খুবই জরুরি। সর্বোপরি, দুর্নীতিবাজ একজন ব্যক্তি এখনও পর্যন্ত দেশের এক নম্বর আসনে বসে আছে। এটার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে যারা তাকে এই আসনে বসিয়ে রেখেছে, তারা পক্ষান্তরে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করছে না।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে দেশকে ভারতের কাছে নতজানু করে ফেলেছে। আমরা ইচ্ছা করলেও প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। সুতরাং উভয় দেশের সুসম্পর্কের স্বার্থে অনতিবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আত্মসম্মান ও মর্যাদা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌথ নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ভারত মনে করে তারা আমাদেরকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। তাদেরকে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরাই বরং তাদেরকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছি।’

অলি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নাই। মেজরিটি বা মাইনরিটি বলতে কিছুই নাই। সকলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সকলের সমান অধিকার। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সততা, ন্যায় এবং নিষ্ঠার সঙ্গে প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, ইমান মজবুত করতে হবে। আমরা অন্য কোনো দেশের ক্ষতি কামনা করি না। অনুরূপভাবে আমরা চাই, কেউ যেন আমাদের দেশের ব্যাপারে নাক না গলায় বরং আমরা সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মহান আল্লাহ্ আমাদের সহায় হবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আলম তালুকদার, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, খাইরুল কবির পাঠান ও হামিদুর রহমান খান প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/জেবি/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :