রাজস্বে এগিয়ে থাকা ভোমরা স্থলবন্দর নিয়ে চক্রান্ত, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা
  প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৪২
অ- অ+

সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টমস স্টেশন অচিরেই কাস্টম হাউসে পরিণত হচ্ছে। ভোমরা স্থলবন্দরের সামগ্রিক সুবিধা বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই স্টেশনকে হাউস ঘোষণার আগেই সম্প্রতি ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গুঁড়া দুধ ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ভোমরা স্থলবন্দরের চলমান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে ।

সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতে ঘোজাডাঙ্গা কাস্টমস ও কলকাতার দূরত্ব বেনাপোল বন্দর থেকে ৩৫ কিলোমিটার কম থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দরের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। দূরত্ব কম,পণ্য পরিবহনে ফুয়েল সাশ্রয় ও সময় বাঁচার কারণে ব্যবসায়ীরা অতি কম সময়ের মধ্যে ভোমরা বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে আমদানিকৃত সকল ধরনের পচনশীল দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সময় কম লাগায় ব্যবসায়ীরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে ভোমরা বন্দরে। যে কারণে পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দর সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের দিকে ঝুকছেন। এখানে বেনাপোল বন্দরের মত ফলের ট্রাক থেকে শুরু করে সকল ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক ডিজিটাল স্কেলে নিখুঁত ভাবে পরিমাপ করে রাজস্ব নির্ধারণ করা হচ্ছে।

তথ্য অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরের একটি কুচক্রীমহল সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরে অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দপ্তর ও গণমাধ্যমে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ প্রচার করে ভোমরা বন্দর ও বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ভোমরা স্থলবন্দরের জমি অধিগ্রহণসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। অচিরেই, কাস্টম হাউজ, শেড, ইয়ার্ড, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ সকল ধরনের পণ্য আমদানির কার্যক্রম পুরোদমে ব্যবসায়ীরা শুরু করলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা এই বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হবে বলে জানিয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ গত অর্থ বছরে রপ্তানীকৃত পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২১ হাজার ৬২৭টি এবং ২০২৩-২০২৪ চলতি অর্থ বছরে রপ্তানীকৃত পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৮০টি, যা গত অর্থ বছরের তুলনা চলতি অর্থ বছরে রপ্তানীকৃত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৬৫ শতাংশ। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ি এসেছে ৬৩ হাজার ৯০২টি, যা গত অর্থ বছরে ছিল ৮২ হাজার ২২৮টি। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা কম এসেছে ১৮ হাজার ৩২৬টি।

অপরদিকে, গত অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৯ হাজার ৯৫৫ মে. টন এবং চলতি অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ ২৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬২ মেট্রিক টন। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে আমদানি পণ্য কম হয়েছে ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরেই সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের অবস্থান। দিনে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যসহ আবশ্যকীয় পণ্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য আমদানি হয়ে থাকে উক্ত স্থলবন্দর দিয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতিদিন গড় ৫০ থেকে একশত পণ্যবাহী ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারত ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও অন্যতম সদস্য মাকসুদ খান বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাগ্য খুলেছে। কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরটি সব থেকে কাছে হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভোমরা বন্দর খুবই গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই বন্দরের প্রতি আমদানি-রপ্তানিকারকরা ঝুঁকছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ভিতর একটি কুচক্রীমহল এই বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যে অচল অবস্থা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

তারা বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভোমরা বন্দরে এনালগ স্কেলে পণ্যবাহী ফলের ট্রাকের ওজন পরিমাপের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির কথা বলে ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। যে খানে জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, জাতীয় গোয়েন্দা প্রতিরক্ষা সংস্থা ডিজিএফআই ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল স্কেলে সকল ধরনের পণ্য পরিমাপ করা হয়। কোন আমদানিকারকের ওজন ফাঁকির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

তারা আরও জানান, ভোমরা সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভোমরা স্থল বন্দর নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক প্রকাশিত নিউজের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। এছাড়া কাস্টমস হাউজ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা সব ধরনের পণ্য আমদানির কার্যক্রম শুরু করলে এই বন্দরে রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

ভোমরার স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা (পরীক্ষণ) বাবলুর রহমান জানান, এ বন্দরে ফলের ট্রাকের ওজনসহ সকল পণ্য পরিবহনের ওজন জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সকলের উপস্থিতিতে ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। এখানে এনালগ পদ্ধতিতে কোনো ওজন পরিমাপের সুযোগ নেই। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে ভোমরা বন্দরের ওজন ফাঁকির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ভারত থেকে পিটি-১৩২০১১ নম্বরের যে ট্রাকে করে ভোমরা বন্দরে আপেল প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। আদৌও এই নম্বরের কোনো ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করেনি। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে।

ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মো. রুহুল আমিন (ট্রাফিক) জানান, প্রায় ১১শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে স্যান্ড ফিলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৫৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সেখানে উন্নতমানের ওয়ারহাউজ,শেড, ইয়ার্ড, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এগুলো সম্পন্ন করা হলে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবস্থা বাণিজ্যে আরোগতি আসবে। বছরের কয়েক হাজার কোটি টাকা সরকারের আরও বেশি রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

ভোমরা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মতলেবুর রহমান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে কাস্টমস প্রশাসন। কোন অনিয়ম দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকায় তৈরি হয়েছে ব্যবসাবান্ধব অনুকূল পরিবেশ। বিগত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে ২৭৫.৮৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। আগামীতে সকলের সহযোগিতায় চলতি অর্থ বছরে তুলনায় আরো বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ করছে ইন্টারপোল: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পাক সেনাপ্রধানকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন, উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজতে দুপক্ষকে আহ্বান
আ.লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবি: শাহবাগে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে বিক্ষোভ
পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ভারতীয় কর্মকর্তার মৃত্যু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা