সুস্থ থাকতে ৬-৬-৬ নিয়মে হাঁটুন, বদলে যাবে জীবন!
শরীর ফিট রাখতে হাঁটতে হবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হলো হাঁটা। নেই। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে পারলে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। তাই বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত হেলেদুলে হলেও কিছুক্ষণ হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যান্ত্রিক জীবনে অলসভাবে সবার সময় কাটে। এতে করে শরীরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকে শরীরচর্চা করার সময় পান না। ওজন কমানো কিংবা চনমনে থাকা—প্রতিদিন কিছুটা সময়ের জন্য হাঁটা জরুরি।
হাঁটলেই শরীর থাকবে সুস্থ। ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। নিয়ম করে যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটতে পারেন, তা হলে বেশি সুফল পাবেন। রোজ হাঁটলে শুধু শরীর ভাল থাকে তা নয়, ভাল থাকে মন, আয়ুও বাড়ে। হাঁটাহাঁটি করলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। মন এবং মস্তিষ্ক দুই-ই ফুরফুরে হয়। চিকিৎসকদের মতে, কয়েক পা হাঁটার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সুস্থতার চাবিকাঠি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশির ভাগ মানুষ জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতে অপারগ। তবে তারা চাইলে নিয়ম করে প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটলে রেহাই পাবেন জিম করার ঝামেলা থেকে। কারণ, হাঁটতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। যেকোনো বয়সের মানুষ চাইলেই এ কাজটি করতে পারেন। শুধু হাঁটুর হাড় ক্ষয় হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। এ ছাড়া সবাই হাঁটতে পারেন অনায়াসে।
হাঁটা থেকে যদি উপকার পেতে হয় তাহলে হাঁটতে হবে ঘাম ঝরিয়ে। আরাম করে হাঁটলে হবে না। হাঁটার সময় ঘাম ঝরান, একটু হাঁপ লাগবে তাতেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত উপকার।
শীত-গ্রীষ্ম ঘাম ঝরাতে, হার্ট সুস্থ রাখতে মানুষ হাঁটছে ঠিকই কিন্তু তার কোনও প্রভাব পড়ছে কি? অধিকাংশ মানুষই হাঁটার কোনও রুলবুক মেনে চলেন না। অথচ সামান্য একটি নিয়মে বদলে যেতে পারে জীবনধারাই! ‘৬-৬-৬'! এই বিশেষ নিয়মে প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও হাঁটার উপকারিতা টের পাওয়া যাবে। কী এই ৬-৬-৬? ৬ মিনিটের ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন সহ ৬০ মিনিটের হাঁটা, সকাল ৬টায় আর সন্ধ্যা ৬টায়। হাঁটার ৬-৬-৬ নিয়মটি মানলে সুস্থ থাকা, ওজন বশে রাখা, মানসিক ভাবেও চনমনে থাকা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর এই অভ্যাস তৈরি হলে শারীরিক অনেক সমস্যাই কমে যেতে পারে। জেনে নিন কেন এই নিয়ম এত উপকারী বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের?
সকাল ৬টায় মর্নিং ওয়াক দিয়ে দিন শুরু করুন
হার্ট ফাউন্ডেশনের গবেষকরা দেখেছেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০ মিনিট হাঁটলেই হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৫% কমে যেতে পারে। সকাল ৬টায় হাঁটার কিছু সুনির্দিষ্ট সুবিধা রয়েছে। এটি বিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, তাজা বাতাসে শ্বাস নেওয়ার ফলে দিনের শুরুটা দুর্দান্ত হয়। মর্নিং ওয়াক রক্ত সঞ্চালনকে বাড়ায়, শরীরকে শক্তি জোগায় এবং মানসিক স্বচ্ছতাকেও উদ্দীপিত করে। সকাল সকাল উঠে হাঁটলে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনে এত বিষয় আর কাজের অনুপ্রবেশ ঘটে যে দিনের ক্যালেন্ডার, মেজাজ সবই ঘেঁটে যেতে পারে। ফলে আলাদা করে আপনি ব্যায়াম করার জন্য সময়ই নাও পেতে পারেন। ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি বলছে, সকালে যদি শরীর সক্রিয় থাকে তাহলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে।
সন্ধ্যা ৬টায় কুল-ডাউন করার উপকারিতা
সন্ধে ৬টায় হাঁটলে মন শান্ত হয়। সারাদিনের ব্যস্ততার পরে নিজের মধ্যে তৈরি হওয়া চাপ থেকে মুক্তি ঘটে। সন্ধেয় হাঁটলে ঘুমও ভালো হয়। মানসিক চাপ কমানোর এবং দিনে যা ঘটেছে তার প্রতিফলন ঘটানোরও সেরা সময় এই সন্ধেবেলাই। কিন্তু সন্ধে ৬টায় অফিস ছুটি হওয়ার সৌভাগ্য আর ক'জনেরই বা হয় এখন? কুছ পরোয়া নেহি! ইচ্ছে থাকলেই উপায়। তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরোতে না পারলে অফিস প্রাঙ্গণেই ২-মিনিট দ্রুত হাঁটতেই পারেন।
সবচেয়ে ভালো ফল পেতে ৬০ মিনিট হাঁটতেই হবে
৬০ মিনিটের হাঁটা শরীরের চর্বি কমানোর জন্য যথেষ্ট। এই হাঁটা হার্টের স্বাস্থ্য, ফুসফুসের ক্ষমতা এবং সহনশীলতা বাড়ায়। ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, সপ্তাহে প্রায় ৩০ থেকে ৬০ মিনিট হাঁটলে পেশির শক্তি বৃদ্ধি হয় যা মৃত্যু, ক্যান্সারের আশঙ্কা হ্রাস করে। ওজন কমানোর লক্ষ্যে সপ্তাহে ৫ বার অন্তত ৬০ মিনিট দ্রুত হাঁটা দরকার। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই সময়টা দেওয়া আবশ্যক।
শরীরকে প্রস্তুত করার জন্য ৬ মিনিটের জন্য ওয়ার্ম আপ
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, ওয়ার্ম-আপ আসলে তাপমাত্রা-নির্ভর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত৷ শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে হিমোগ্লোবিন এবং মায়োগ্লোবিন থেকে অক্সিজেন বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। বিপাক ভালো হয়, পেশিতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, পেশির সান্দ্রতা হ্রাস পায়, নার্ভ রিসেপ্টরগুলির সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে খেলাধুলো-সম্পর্কিত পেশিত আঘাতের আশঙ্কাও হ্রাস পায়। সকালে ভালো করে ওয়ার্ম-আপ করে হাঁটা শুরু করলে, ৬ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং বা পেশি এবং গাঁটের হালকা ব্যায়ামে আঘাতের ঝুঁকি কমে যায়। এই সংক্ষিপ্ত ওয়ার্ম-আপ রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায় এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে আরও কার্যকর করে।
অবশ্যই ৬ মিনিট কুল-ডাউন দরকার
কুল-ডাউন যেকোনও ব্যায়ামের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত হাঁটার পর এক মিনিটের মধ্যে হৃদপিণ্ডকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে, পেশির দৃঢ়তা হ্রাস করতে ধীরে ধীরে ৬-মিনিট কুল-ডাউন করা উপকারী। স্ট্রেচিং শরীর নমনীয় রাখতে সাহায্য করে, ব্যথা না হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
হাঁটায় উপকার পেতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই হবে
৬-৬-৬ নিয়মটি দাঁড়িয়েই আছে ধারাবাহিকতার উপর। হঠাৎ একদিন হেঁটে, আবার দিন চারেক বিশ্রামে চলে গেলে কোনও কাজের কাজই হবে না। দিনে দু'বার এক ঘণ্টা করে হাঁটা, তারপরে ওয়ার্ম-আপ আর কুল-ডাউনের অভ্যাস করে ফেলে কোনও জিম বা ব্যায়ামের বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজনই নেই। শুধু ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই হবে।
(ঢাকাটাইমস/১০ নভেম্বর/আরজেড)
মন্তব্য করুন