দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ভারত: ববি হাজ্জাজ

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন— এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, ‘মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তানে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশের উপর বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরে চালানো দাদাগিরি বিনা নোটিশে অচল হয়ে যাওয়ায় ভারত এখন দিশেহারা। আমরা মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ভারত।’
সোমবার দলে নীতিনির্ধারণী পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ববি হাজ্জাজ বলেন, আমরা আজকে শুধু আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত জানাতে নয় বরং ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আপনাদের সহযোগিতা চাইতেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনারা অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আমাদের পাশে থাকবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। আমাদের সম্পর্ক মূলত দুইদেশের জনগণের মধ্যে। বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। তথাপি বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ভারতের সাথে নিজ দলের কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে নতজানু করে রেখেছিল। আমরা ফেলানির ঝুলন্ত লাশের কথা ভুলি নাই।
তিনি বলেন, ফেলানি থেকে আদানি পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় গণহত্যার হুকুমদাতা ফ্যাসিস্ট হাসিনা কীভাবে দিল্লির দাসত্ব করে গিয়েছে। যার ফলে ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে দিনে-দুপুরে দেশ ছাড়িয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় পতিত স্বৈরাচার হাসিনা। তবে হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে ভারত এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ধাক্কা খায়। বাংলাদেশে তাঁদের পালিত স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের পর থেকেই পরিকল্পিতভাবে এদেশে সংখ্যালঘু ইস্যু সৃষ্টি করে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। আর এসবের প্রেক্ষিতে দলীয় বক্তব্য এবং রাজপথের প্রতিবাদী কর্মসূচি আপনাদের অবহিত করতেই আজকের এই মিডিয়া ব্রিফিং।
এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, ভারতের তথ্য যাচাই এবং ভুয়া খবরের খোঁজ দেয় এমন ওয়েবসাইট “অল্ট নিউজ”-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী “বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে” এমন ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত একদল টুপি পড়া মানুষ লাঠি আর লোহার রড হাতে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে যে ভিডিও প্রচার করছে সেটা মূলত গত ২৬ নভেম্বর শেরপুরের মুর্শিদপুরের একটি গ্রামের ঘটনা যেখানে ইসলামিক শরিয়া পরিপন্থি কাজের অভিযোগে একটি মাজারে উত্তেজিত জনতার ঘেরাও এর ভিডিও। ভারতের হিন্দুত্ববাদী সামাজিক মাধ্যমগুলো ঢাকার মোল্লা কলেজে অন্য একটি কলেজের ছাত্রদের হামলার ঘটনাকেও হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা বলে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। রিউমার স্ক্যানের তথ্য অনুযায়ী ভারতের অন্তত ৪৯টি সংবাদ সংবাদ মাধ্যম এসব ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ভুয়া তথ্যগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, শেখ হাসিনার নামে ভুয়া খোলা চিঠি, মুসলিম এক ব্যক্তির তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান চেয়ে করা মানববন্ধনকে হিন্দু ব্যক্তির সন্তান বলে প্রচার, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার ভুয়া দাবি, পাকিস্তানি জাহাজে করে অস্ত্র আসার মত ভিত্তিহীন দাবি, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মত মিথ্যা তথ্য, চিন্ময়ের আইনজীবীর উপর হামলার ভুয়া তথ্য ইত্যাদি। ফেসবুকে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার রোধে মেটা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলায় আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনীর সাইবার সেল, সিআরই, ইয়াং বাংলার সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাঁদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং গণহত্যা এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উসকানি মাধ্যম হিসাবে মেটা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজকে ব্যান করতে হবে।
আমরা মনে করি, ভারতীয় অপপ্রচার কোনো অংশেই একটি স্বাধীন দেশের সীমান্তে অন্য একটি দেশের সামরিক মহড়ার চেয়ে কম নয়। এর পাল্টা প্রস্তুতি হিসাবে আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রদর্শন অত্যন্ত জরুরি। একইসাথে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত বিদেশি গণমাধ্যমে ইংরেজিতে একাধিক সরকারি এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ব্রিফিং এবং সরেজমিনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানানো জরুরি। পাশাপাশি মূলধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ প্রচারণা প্রয়োজন।
ঢাকায় অনুষ্ঠাতব্য বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের “ফরেন অফিস কনসাল্টেশন” বৈঠক সম্পর্কে ববি হাজ্জাজ বলেন, আমরা আশা করি, এই বৈঠকে ভারত নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ককে মর্যাদার ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করবে। হাসিনার আমলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফর করে যেভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছিলো আমরা সেই দিন আর দেখতে চাই না। ভারত যদি বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেয় তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁরাই হবে। আমরা ভারতকে পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই, দুইদেশের সম্পর্ককে আপনারা শেখ হাসিনার মত মীমাংসিত ইস্যুতে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। হাসিনার কালো অধ্যায় এই দেশে এখন শুধুই অতীত। নতুন বাংলাদেশে আমরাই বিকল্প। আমরা হাসিনাকে গণহত্যার আসামি হিসেবে ফেরত চাই।
তিনি বলেন, আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন ভবনে হামলা, দিল্লিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী কর্তৃক বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা আমাদের ব্যথিত করেছে। এর প্রতিবাদে আগামী ১২ ডিসেম্বর সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরা জাতীয় পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করব বলে আজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
্
ভারত এখনো বুঝতে সক্ষম হয় নাই যে জুলাই বিপ্লব ছিল গণমানুষের আন্দোলন। হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া নিয়ে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও প্রথমে তারা প্রতিক্রিয়া দেখায় নাই। তবে ভারতই পরিকল্পিতভাবে উসকানি দিয়ে এ দেশের মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে। হাসিনা দিল্লিতে বসে ফোনালাপ ফাঁসের মাধ্যমে যেভাবে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছে তাতে এ দেশের মানুষের ভারতের প্রতিই বিরাগভাজন হচ্ছে। ভারতে কোন মুসলিম নেতা আটক হলে, দিল্লি বা কাশ্মিরে মুসলিমদের উপর নির্যাতন হলে বাংলাদেশ প্রতিক্রিয়া দেখায় না তবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ইসকনের একজন বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় দাসের আটকের পর ভারতের বিবৃতি এ দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপের শামিল।তিনি বলেন, নিরাপত্তার খাতিরেই ভারতকে উগ্রতা পরিহার করে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ করতে হবে, উজানে নদীর পানি প্রত্যাহার করা থেকে সরে আসতে হবে, আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক এবং পানি কূটনীতি চালাতে হবে। বাংলাদেশে আমরা কোনো সাম্প্রদায়িক উসকানি আমরা সহ্য করব না।
(ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন