বদির সঙ্গে কাদেরের ঘনিষ্ঠতা কেন?

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৩| আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৪০
অ- অ+

একবার সরকারি কাজে কক্সবাজার গেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শনের পর স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন। মন্ত্রীর সঙ্গে আছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ কক্সবাজার জেলার কয়েকজন সংসদ সদস্য। লাঞ্চের সময় হয়ে এসেছে। মন্ত্রী মহাশয় সাংবাদিকদের খাওয়াতে চান। টাকা দেবে কে? ওবায়দুল কাদের নিজেই সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে বললেন, ‘বদি, টাকা দিয়ে দাও।’

বদিকে চিনতে পারছেন? মনে হয় না। ইয়াবা বদি? এবার নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন। গত আওয়ামী লীগের শাসনামলে একজন সংসদ সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দিতে এমন বিশেষণ ব্যবহার করতে হয়।

মন্ত্রী মহাশয় প্রশাসনের কর্মকর্তা কিংবা অন্য কোনো সংসদ সদস্যকে টাকা দিতে বলেননি। এর মানে মন্ত্রীর সঙ্গে অন্যদের চেয়ে বদির ঘনিষ্ঠতা বেশি, সেটাই সবার সামনে তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের।

ইয়াবা বদি কিভাবে হয়ে গেলেন সংসদ সদস্য? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে যেতে হবে কিছুটা পেছনে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় বসবাস করেন আবদুর রহমান বদি। মিয়ানমার থেকে বৈধ আর অবৈধভাবে বিভিন্ন পণ্য আনার ব্যবসা করে বেশ ভালো অর্থ কামিয়েছেন। মাছ ধরার ট্রলারেও ছিলো বিনিয়োগ।

সেই বদি ২০০২ সালে টেকনাফ পৌরসভা নির্বাচনে জিতে হয়ে যান পৌর চেয়ারম্যান। প্রথমে এই পদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বখরা আদায় শুরু করেন। পরে আত্মীয়স্বজন আর ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে নিজেই শুরু করেন এই ব্যবসা। এভাবে টেকনাফ হয়ে উঠে মাদক চোরাচালানের নিরাপদ স্বর্গরাজ্য, যেই মাদকের মধ্যে ইয়াবা ছিলো সবচেয়ে বেশি।

টাকার জোর আর পৌর চেয়ারম্যানের পদবী ভাঙিয়ে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে হয়ে যান সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তো বিরোধী দলই অংশ নেয়নি, তাই দ্বিতীয় দফা সংসদ সদস্য হতে বদিকেও কোনো রকম কষ্ট করতে হয়নি।

সংসদ সদস্য হওয়ার পর ইয়াবা ব্যবসার সাম্রাজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন বদি। আর তখন থেকেই সংবাদমাধ্যমে ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে তার নামও প্রকাশ হতে থাকে। এমনকি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের তালিকাতেও মাদক চোরাচালানের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে স্থান পায় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নাম।

কিন্তু এরপরও বদির কিছুই হয় না। কারণ, ওবায়দুল কাদেরের মতো আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়মিত মাসোহারা দিতেন বদি। এসব নেতাই বিপদ-আপদ থেকে বদিকে রক্ষা করতেন।

মাদক ব্যবসার কারণে বদিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে প্রচণ্ড সমালোচনা শুরু হলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাকে আর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। কিন্তু টাকার তো শক্তি আছে। তাই আওয়ামী লীগের যেসব নেতা বদির কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন তারা এগিয়ে আসেন। বদির বদলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তারই স্ত্রী শাহিন আক্তার, যিনি এর আগে কখনো রাজনীতিই করেননি। স্ত্রীকে সামনে রেখে সংসদ সদস্যের সকল প্রভাবই ধরে রাখেন আবদুর রহমান বদি। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও একই কায়দায় সংসদ সদস্য হন শাহিন আক্তার।

অবশ্য অন্য অনেক সংসদ সদস্যের মতোই আর শেষ রক্ষা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন আবদুর রহমান বদি।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/আরবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নোয়াখালীতে ভূমিহীনদের বন্দোবস্তকৃত জমি দখলের প্রতিবাদ ও পুনরুদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ 
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি: বাংলাদেশ নয়, ভারত ও পাকিস্তানকে সেমিতে দেখছেন রবি শাস্ত্রী
বিএনপির মালিক দেশের ১৮ কোটি মানুষ: দিপু হায়দার
নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা