পপগুরু আজম খানের জন্মদিন আজ, তার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?

বাংলা ব্যান্ড জগতের নিভে যাওয়া এক নক্ষত্রের নাম আজম খান। প্রচলিত আছে, তার মাধ্যমেই বাংলা সংগীত জগতে ব্যান্ড গানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ জন্য তাকে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের ‘গুরু’ বলা হয়। জীবদ্দশায় বেশ কিছু হিট গান উপহার দিয়ে গেছেন এই শিল্পী। তার ব্যতিক্রমী ঢঙের গায়কীতে মুগ্ধ হতেন দেশের ব্যান্ড সংগীতপ্রিয় মানুষ। দেশের গানেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন ‘পপগুরু’।
হারিয়ে যাওয়া সেই নক্ষত্রের জন্মদিন আজ বুধবার। ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম হয়েছিল ঢাকার আজিমপুরে। তবে ছয় বছর বয়স থেকে তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন কমলাপুরে। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল- সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আজম খান।
প্রয়াত এই সংগীত তারকার কর্মজীবন শুরু মূলত ষাটের দশকের শুরুতে। ১৯৭১ সালে তার ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বন্ধু নিলু ও মনসুরকে গিটারে, সাদেক ড্রামে এবং নিজেকে প্রধান ভোকাল করে শুরু করেন সংগীত জীবন। ওই সময় বিটিভিতে তার গাওয়া ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ এবং ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি প্রচার হয়।
দুটি গানই বেশ প্রশংসা পায়। ১৯৭৫ সালে দেশত্ববোধক ব্যান্ড গান ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’ দিয়ে হৈ চৈ ফেলে দেন আজম খান। সংগীতে বিশেষ অবদান রাখায় আজম খানকে ২০১৯ সালে মরনোত্তর একুশে পদক দেয় বাংলাদেশ সরকার। তার পক্ষে পদক গ্রহণ করেন শিল্পীর মেঝো ভাই প্রখ্যাত সুরকার আলম খান। গত বছরের ৮ জুলাই তিনিও মারা গেছেন।
এদিকে, গান গাওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক প্রতিভা ছিল আজম খানের। ১৯৯১-২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষ হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন। এছাড়া তিনি ‘গডফাদার’ নামে একটি বাংলা সিনেমায় ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেই ছবির নায়ক ছিলেন অ্যাকশন হিরো রুবেল। পাশাপাশি নাটক এবং বেশ কিছু বিজ্ঞাপনেও তিনি কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। ১৯৭১ সালে আজম খানের বাবা আফতাব উদ্দিন খান সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। বাবার অণুপ্রেরণায় তিনি যুদ্ধে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
মাত্র ২১ বছর বয়সে যুদ্ধে যান আজম খান। সে সময় তার গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা আর সাহস যোগাতো। তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরের শিবিরে। এরপর তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সমুখ সমরে অংশ নেওয়া শুরু করেন।
তবে কিছুদিন পর আজম খান কুমিল্লা ছেড়ে আবার আগরতলায় ফিরে আসেন। এরপর তাকে পাঠানো হয় ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইনচার্জ। আজম খান মূলত যাত্রাবাড়ি-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/এজে)

মন্তব্য করুন