শেরেবাংলা নগর ও মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শয়ন ও দুই সহযোগী গ্রেপ্তার 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৬:৫২
অ- অ+

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর ও আদাবর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের কুখ্যাত গডফাদার ও শীর্ষ সন্ত্রাসী শিহাব হোসেন শয়ন ওরফে আরাফাতকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী।

সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর মানিক নগর এভিনিউয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এসময় শয়নের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তার দুই সহযোগী রিদয় এবং সোহাগকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তবে প্রধান সহযোগী এবিএম মাহমুদুল বশ্রী ওরফে জন পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

মঙ্গলবার সকালে ৪৬ পদাতিক ব্রিগেড-এর ২৩ ইস্ট বেঙ্গল পদাতিক ব্যাটেলিয়ানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে তেঁজগাও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের দমন নিপীড়নে রাজধানীর আদাবর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় শয়নকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় আরও একাধিক মামলা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তার নামে থাকা বাকি মামলাগুলোতে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে।’

জানা গেছে, শিহাব হোসেন শয়ন মিরপুর মডেল থানাধীন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ট্রিপল মার্ডার, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, চাঁদাবাজি এবং অপহরণসহ অন্তত ১০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। গত জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের দমন-পিড়নের অভিযোগে ৫ আগস্টের পরে তার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে মিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলাও রয়েছে।’

৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের ২৩ ইস্ট বেঙ্গল পদাতিক ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শিহাব হোসেন শয়ন ওরফে আরাফাত মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের অন্যতম সহযোগী। ঢাকা উত্তরের ২৮ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকান এবং রাষ্ট্রনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ঢাকা থেকে শেরপুরে পালিয়ে যান। সম্প্রতি তিনি আগারগাঁও এলাকা তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে পুনর্গঠিত করতে ঢাকায় ফিরে আসেন।’

যেভাবে গ্রেপ্তার

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর সেনাবাহিনীর দুটি দল শয়নের সম্ভাব্য গন্তব্যের পয়েন্টে দুটি চেকপয়েন্ট স্থাপন করে। ফলস্বরূপ, তাকে মোটরসাইকেল চালানোর সময় মানিক মিয়া এভিনিউতে গ্রেপ্তার করা হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার দুই সহযোগী রিদয় এবং সোহাগকে আগারগাঁও এলাকা থেকে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত এবং তার সহযোগীদের পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শের-ই-বাংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। গ্রেপ্তার শয়নকে পরবর্তীতে আদাবর থানায় আনা হয়েছে।

শয়নের বিরুদ্ধে যত মামলা

গ্রেপ্তার শয়নের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পরে ছাত্র-জনতার উপরে দমন-পীড়নের দায়ে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে মিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা নম্বর-২৩, তারিখ: ২৩-৯-২৪, আদাবর থানায় গত ৩০ নভেম্বর ও ১০ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলা নম্বর ১৮ ও ৩, ভাটারা থানায় ২৮ জানুয়ারি দায়ের করা মামলা নম্বর ৫১।

এছাড়া শয়নের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে ৩ জনকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের আরও একটি হত্যা মামলা, ২০১৩ সালে শিল্পি (ডাক নাম অধরা) নামের একটি মেয়েকে গণধর্ষণ (আলোচিত শিল্পি ধর্ষণ), ২০১৯ সালে কুপিয়ে জখম করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় একই থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। মিরপুর মডেল ২০২১ ও ২৩ সালে একই থানায় ভাঙচুর, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ দুটিসহ আরও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় অপহরণ, শেরেবাংলা নগর থানায় বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা রয়েছে।

জানা গেছে, শিহাব হোসেন শয়নকে অবৈধ অস্ত্রসহ নিজ বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। যে মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

বহুমুখী প্রতারক শয়ন

প্রতারণার কৌশল হিসেবে নিজেকে ধরাছোয়ার বাইরে রাখতে ন্যাশনাল আইডি কার্ডে বদলে ফেলেছেন নিজের ও পিতা-মাতার নাম পরিচয়। কুমিল্লার মুরাদ নগর থানার বাসিন্দা শয়ন নিজের নাম পরিচয় বদলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছেন সাভার থেকে। সেখানে নিজের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছেন মো. আরাফাত হোসেন। শয়নের পিতার প্রকৃত নাম মো. মোজাম্মেল হোসেন শানু হলেও ঠিকানা গোপন করে সাভার থেকে করা ন্যাশনাল আইডিতে নাম দিয়েছেন মো. আহছানুজ্জামান। শয়নের মায়ের প্রকৃত নাম মোর্শেদা হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম দিয়েছেন মোছা. পারভীন আক্তার। তবে স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নাম সঠিক রেখেছেন। শিহাবুল হাসান শয়নের নামে আবার তার নিজের আবার একটা পাসপোর্ট রয়েছে। যারা নম্বর : ই-১৪১৪৬২৪।

যত অভিযোগ

শেরেবাংলা নগর এলাকা ও মিরপুর থানাধীন আমতলা, বটতলা ভাঙ্গা ব্রিজ, লেকভিউ সোসাইটি, ওসমান গনি রোড, ছয়তলা গার্মেন্টস ও আদাবর এলাকার মূর্তমান আতঙ্ক এই শয়ন। এসব এলাকায় জমি দখল, প্লট, ফ্ল্যাট দখল, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, লেগুনা, টেম্পু, সিএনজি, পিকআপ থেকে চাঁদাবাজি মাদক কারবারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রকের অভিযোগ রয়েছে শয়নের বিরুদ্ধে। এছাড়া ছেলেমেয়েকে একসাথে ঘুরতে দেখলেই তাদের আটক করে সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছিল শয়ন গ্রুপের নিত্যদিনের কাজ।

টাকা দিলেই ফাঁসিয়ে দিতেন মামলায়

এসব অপকর্মে শয়নের অন্যতম সহযোগী শ্যামলীর আশা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবিএম মাহমুদুল বশ্রী ওরফে জন। গতরাতে সেনাবাহিনী শয়নকে সাথে নিয়ে জনের বাসায় অভিযান চালায়। তবে অভিযানের আগেই সেখান থেকে সটকে পড়েন তিনি। জন ও শয়ন সিন্ডিকেট মিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চাহিদা মাফিক টাকা পেলেই বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দিতেন। যারমধ্যে বায়েজিদ, মো. বিল্লালকে অস্ত্র মামলায় এবং আনোয়ারকে নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

এছাড়া এই চক্রের হাত থেকে রেহাই পাননি বিলাল হোসেন নামে যাত্রাবাড়ীর এক বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ীও। পাওনা ৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে জিম্মি করে বেলালের কাছ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় শয়ন-জন সিন্ডিকেট। এ ঘটনায় বেলাল যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করলে জন ও তার সহযোগী শয়নকে আটক করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/৪মার্চ/এসএস/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টঙ্গীতে প্রতিবন্ধী তরুণীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে হত্যা 
নুসরাত ফারিয়ার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, নির্দোষ হলে ছেড়ে দেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত বাইডেন দুই মাসের মধ্যে মারা যেতে পারেন: লরা লুমার
ফ্যাসিবাদের পতন হলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি: নজরুল ইসলাম খান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা