হরিরামপুরে সরকারি চালের বস্তায় এখনও শেখ হাসিনার নাম

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গতবছরের ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার। তার পতনের দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস পরেও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সরকারি নানা কর্মসূচির চালের বস্তায় এখনও রয়েছে শেখ হাসিনার নামসহ স্লোগান। দীর্ঘদিন পরেও চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নামসহ স্লোগান থাকায় বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। চালের বস্তার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেও ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকে।
উপজেলা মৎস্য দপ্তর ও খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাটকা আহরণে বিরত থাকা জেলেদের মাঝে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে ৮৮ মেট্রিক টন চাল বিতরণ চলছে। পাশাপাশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ছয় হাজার ৮২১ জন ৩০ কেজি করে মোট ২০৪ টন ৬৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন। এসব চালের বস্তায় রয়েছে শেখ হাসিনার নামসহ স্লোগান। অথচ, এ ধরনের বিতর্কিত বস্তা ব্যবহার না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সরজমিনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কয়েকটি ডিলার পয়েন্ট, ইউনিয়ন পরিষদ ও খাদ্যগুদাম ঘুরে দেখা যায়, এখনও চালের বস্তার গায়ে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ লেখা স্লোগান রয়েছে। সেই চাল বিতরণ করা হচ্ছে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের মাঝে। মাঝে মাঝে দু-একটি বস্তায় শেখ হাসিনার নাম স্প্রে কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাতে ফল হয়নি। এরপরও বোঝা যাচ্ছে শেখ হাসিনার নাম।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কয়েকজন ডিলার বলেন, আমরা সম্প্রতি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশীপ পেয়েছি। খাদ্যগুদাম থেকে আমাদের শেখ হাসিনার নামসহ বস্তায় চাল দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে দুই-একটি বস্তায় কালি দিয়ে মোছা হলেও বেশিরভাগ বস্তায় এখনো শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। আমরা যেভাবে চাল পেয়েছি, সেভাবেই বিতরণ করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিকুজ্জামান শিপু বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের সাড়ে সাত মাস পরেও সরকারি চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নাম ও স্লোগান থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি চাল জনগণের করের টাকায় কেনা হয়। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বা দলের টাকায় নয়। দ্রুত এসব চালের বস্তা অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনার নাম থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ঝিটকা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘গতবছর এবং ২০২৩ সালে আসা চালের বস্তা এখনো গুদামে রয়েছে। সেগুলোতে শেখ হাসিনার নাম-স্লোগান রয়েছে। তবে, আমরা গুদাম থেকে চাল বিতরণের সময় লেবারদের দিয়ে বস্তায় থাকা শেখ হাসিনার নাম কালি দিয়ে মুছে দিচ্ছি। তবে, সবসময় আমার পক্ষে উপস্থিত থাকা সম্ভব না হওয়ায় লেবাররা হয়তো কাজে ফাঁকি দিয়েছে। যার কারণে সব বস্তায় মোছা হয়নি। আগামী মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত চালের বস্তা গুদাম থেকে বিতরণ শেষ হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা রয়েছে বস্তায় শেখ হাসিনার নাম-স্লোগান মুছে দেওয়ার। ঝিটকা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রতিটি বস্তায় নাম মুছে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন রাতে যে বস্তাগুলো গিয়েছে সেগুলোতে দু-একটা মিসিং হয়েছে। একটা বস্তাও যেন মোছার বাকি না থাকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাকে বলা হয়েছে।’
(ঢাকা টাইমস/১৮মার্চ/এসএ)

মন্তব্য করুন