দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় আরো ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বন্যার কারণে বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) নতুন করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আরো তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১টিতে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলার নদী তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৪৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ রাস্তাঘাট। প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার অবস্থা খুবই করুণ। বুধবার এই দুই ইউনিয়নের ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বৃহস্পতিবার আরো তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ তালিকায় যুক্ত হলো।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য সহায়তা শুরু হয়েছে।
পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২ আগস্ট থেকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১২.৯৫ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যা বিপৎসীমা থেকে ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে।
এদিকে পদ্মার শাখা মাথাভাঙা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রাতের তুলনায় দিনে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বেশি।
ধারাবাহিক পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর পার্শ্ববর্তি নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর এই দুই ইউনিয়ন মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষ করে শ্রমজীবী পরিবারের অবস্থা খুবই করুণ।
পদ্মার পাড় পেরিয়ে পানি যেন লোকালয়ে প্রবেশ না করে সে জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যেদিকে চোখ পড়ে শুধু পানি আর পানি। রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। একবাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাতায়াতের জন্য নৌকা বা ভেলা ব্যবহার করতে হচ্ছে। অসংখ্য বাড়ি ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে।
ফিলিপনগর, মরিচা, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, কলা, ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, চিলমারী ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের ১৫ হাজার, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের ২০ হাজার, ফিলিপনগর ইউনিয়নের ১১ হাজার ও মরিচা ইউনিয়নের ২৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এক হাজার হেক্টর জমির ফসল।
বুধ ও বৃহস্পতিবার দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ও মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
মরিচা ইউনিয়নের ভূরকাপাড়া গ্রামের জামিরুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে। কেননা নদীর পাড়ের ব্যাপক অংশ অরক্ষিত রয়েছে। যে কোন সময় এসব অংশ নিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে নদীর অরক্ষিত পাড় রক্ষা করা জরুরি।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, রোপা আউশ কলা, বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভুট্রা বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককের তালিকা করা হচ্ছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশমত পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান বলেন, আগের তুলনায় পানি বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে। ২-৩ দিনের মধ্যেই পানি কমা শুরু করতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ১৮৫ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন