বগুড়ার করতোয়া নদী দখলমুক্ত করতে টিএমএসএসের কারখানার স্থাপনা উচ্ছেদ  

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৭
অ- অ+

বগুড়ায় করতোয়া নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) প্রতিষ্ঠান বিসিএল গ্লাস কারখানায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাহিয়ান মুন্সিফ এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন।

উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং ফায়ার সার্ভিসের একাধিক দল।

নদী দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলমান থাকবে।

তিনি আরো বলেন, গত তিন দশক ধরে বগুড়া সদর উপজেলায় করতোয়া নদীর প্রায় ১৭ একর জমি দখল করেছে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) নামের একটি এনজিও।

এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে বগুড়া জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড করতোয়া নদীর পুনঃখননের সময় নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে টিএমএসএস গ্লাস ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এলাকায় করতোয়া নদীর খাস জমিতে ১১টি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে টিএমএসএস যার পরিমাণ ৯৩ দশমিক ১৫ শতক।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরির এই জায়গায় আগে একটি নদীর অংশ ছিল। পরে টিএমএসএস এই জায়গায় ময়লা দিয়ে ভরাট করে। পরে তারা গ্লাস ফ্যাক্টরি নির্মাণ শুরু করছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে বগুড়া জেলা প্রশাসনের ভূমি অফিস করতোয়া দখলের একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেই সময় ৩৮টি দখলের একটি তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসন। এই জরিপ রিপোর্টে দেখা যায় বগুড়া সদর উপজেলার মহিষাবান মৌজায় টিএমএসএস একাই ৪ দশমিক ৯ একর নদীর জমি দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে। পরে বিভিন্ন সময় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হলেও এখনো সেই জমি উদ্ধার করা যায়নি।

অবৈধ দখলের বিষয়ে টিএমএসএস এর উপ-নির্বাহী পরিচালক এবং বিসিএল গ্রূপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারোয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই স্থাপনা অবৈধ নয়। যে জমিতে আমরা বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরি নির্মাণ করছি সেটি নদীর অংশ নয়। নদীর পাশের জায়গা। এই জমির মালিক সরকার। এখানে আমাদের ৩৮ একর জমি আছে। এরপরে সরকারি যে জমিতে স্থাপনা গিয়েছে তা লিজ নেওয়ার জন্য আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আজ সকালে হঠাৎ করে আমাদেরকে পূর্বে কোন নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়েছে। যদি গতকালও আমাদের জানানো হতো তাহলে আমরা আমাদের মালামালগুলো সরিয়ে নিতে পারতাম। এখানে যে সমস্ত মালামাল রয়েছে সব বিদেশ থেকে আমদানি করা। আমাদেরকে আজ ফ্যাক্টরিতে ঢুকতেই দেয়নি।’

বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, সারা দেশে সরকার ৭টি নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার করতোয়া নদীও রয়েছে। সেই কারণেই আমরা আজ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে নোটিশ দিয়েছিলাম কিন্তু তারা স্থাপনা না সরিয়ে আদালতে গিয়ে এক পাক্ষিকভাবে ইনজাংশন জারি করে নিয়ে আসে। আমরা কোর্টের জবাব দিয়েছি যথাসময়ে। এরপরে আদালতে শুনানি হয়। সেখানে ইনজাংশন ভ্যাকেড হয়েছে এবং তাদের আবেদনটা খারিজ হয়েছে। এরপর তারা উচ্চ আদালতে একটা আপিল করেছে কিন্তু সেখানে কোন ইনজাংশন নেই। এরআগে তারা জজ কোর্টে একটা মামলা করেছিলেন জমি কবুলিয়ত এর জন্য। কিন্তু এটা যেহেতু নদীর জমি সুতরাং নদীর জমি কেউ লিজ দিতে পারে না। আমরা সেই মামলায় হাইকোর্টে একটি আপিল করি এবং সেখানেও কোন ইনজাংশন নেই।

তিনি আরও বলেন, এর আগে মহামান্য হাইকোর্ট তুরাগ নদী নিয়ে একটি রায় দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছে নদীর জমি কেউ বন্দোবস্ত দিলে শুরুতেই এটি নাল এবং ভয়েড হয়ে যাবে এবং তুরাগ নদীর এই জাজমেন্টটা বাংলাদেশের যেকোন নদীর জন্য প্রযোজ্য হবে। যেহেতু আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই সেই জন্য আমরা আজ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, টিএমএসএস বিভিন্ন সময়ে নদীর এই ১৬ দশমিক ৯৭ একর জমি লিজ নিয়েছে বলে সবাইকে বিভ্রান্ত করে। লিজের যে কাগজপত্র টিএমএসএস আমাদের কাছে জমা দিয়েছে সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি যে সরকারি জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য বা লিজ দেওয়ার জন্য যে শর্তগুলো থাকার কথা সেই চিটির ভাষা এবং বন্দোবস্ত কেস কিছুই নেই। এই চিঠিগুলো আমার কাছে মনে হয়েছে অতিরঞ্জিত। এরপর আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নদীর সীমানা নির্ধারণের কাজ করি। সীমানা নির্ধারণে দেখা গেছে টিএমএসএস বিভিন্ন সময় নদীর যে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ-এর দুইটি লুপে পর্যায়ক্রমে মাটি দিয়ে ভরাট করে ১৬ দশমিক ৯৭ একর নদীর জমি দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্ধারণ করেছে। একটি জায়গায় (মহিষাবান মৌজায় মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য ছাত্রাবাস, একটি অক্সিজেন প্লান্ট, একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করছে। আর একটি অংশে এই বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরি নির্মাণ করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, আগে গ্লাস ফ্যাক্টরিটির এই ৯৩ দশমিক ১৫ শতক জমি উদ্ধার করব। এর পরে মহিষাবান মৌজার ৪.৯ একর জমি দখলমুক্ত করা হবে।

(ঢাকা টাইমস/১১এপ্রিল/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা