ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ আয়োজিত 'অভ্যুত্থান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য কনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গণ অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র না থাকায় আমরা দুর্বল হয়েছি উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, এই অভ্যুত্থানের গণ অভিপ্রায় হচ্ছে গণ সার্বভৌমত্ব। এর প্রথম ধাপ হবে সংবিধানে গণ সার্বভৌমত্ব উল্লেখ করা। কিন্তু আমরা হাসিনার সংবিধানটাই ছুঁড়ে ফেলতে পারিনি। এর বদলে আমরা করেছি একটি সংস্কার কমিশন এবং এর নেতৃত্বে রয়েছেন তারা, যারা অভ্যুত্থানে ছিলেন না। কমিশনগুলো জনগণের কাছে থেকে তাদের কথা শোনেনি। এতে আমরা ক্রমশ দুর্বল হয়েছি।ফলে, যারা আপনাদের অশান্তিতে রেখেছে আপনারা তাদের বিচার করতে পারবেন না। তাই গণ সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রে নতুন স্বাধীন গঠনতন্ত্র লাগবে।
জুলাই আন্দোলনের ঘোষণা পত্র ড. ইউনুস দিতে দেননি বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ড. ইউনুস গণঅভ্যুত্থান ফসল, তিনি নেতা নন। জুলাইয়ে তিনি ঢাকায় ছিলেন না। তিনি আমাদের ঘোষণাপত্র দিতে দেন নাই। তিনি মহা ভুল করেছেন। এর ফলাফল জনতা আগামী দিনে ভোগ করবে।’
ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা আধুনিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে ইসলামের খোঁজ করি। আধুনিক রাষ্ট্র ক্যাপিটাল দিয়ে চলে। আমরা সারাক্ষণ ক্যাপিটালের অধীনে থাকি। পুঁজিবাদের অধীনে থেকে ধর্ম প্রতিষ্ঠা হবে না। আগামী দিনের লড়াই হবে এই পুঁজির বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদে বিভক্ত করে আলাদা হওয়া যাবে না। কারণ দুনিয়াতে জাতীয়তাবাদের যুগ শেষ হয়ে গেছে।
জনগণের সার্বভৌমত্বকে মূল্যায়ন করে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং নতুন সংবিধানে তিনটি বিষয় উল্লেখ করার দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের ৭২ সালের সংবিধান জনগণ করেনি। ৭১ এর ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার বাদ দিয়ে 'সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ'সহ ৪টি মূলনীতি করা হয়েছিল। এই সংবিধানকে বাতিল করে জনতার অভিপ্রায়ের নতুন গঠনতন্ত্র চাই। জনতার অভিপ্রায়ের জন্য ৩টি বিষয় সংবিধানে উল্লেখ করতে হবে। দাবি তিনটি হলো- প্রথমত, রাষ্ট্র এমন আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না যাতে ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা খর্ব হয়। দ্বিতীয়ত, প্রান প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করবে এমন আইন বা নীতি রাষ্ট্র গ্রহণ করতে পারবে না। তৃতীয়ত, রাষ্ট্র এমন কোনো আইন বা নীতি গ্রহণ করতে পারবে না যাতে জীবন ও জীবিকা হরণ বা ধ্বংস হবে।আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসঊদ। উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আফরিনা আফরিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী প্রমুখ শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী।
(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/এমআর)

মন্তব্য করুন