কম্বোডিয়ায় দেখার আছে অনেক কিছু

রেজাউল মাসুদ
  প্রকাশিত : ২২ মে ২০২৫, ১১:৪৬| আপডেট : ২২ মে ২০২৫, ১১:৪৮
অ- অ+

নাগা ওয়ার্ল্ড র কাছে যেতেই মাথা ঘুরে গেল আমাদের! মনে হচ্ছে কোন উৎসব উৎযাপন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে নমপেনের এই ক্যাসিনো। এতো দেখছি যেন আমাদের যমুনা ফিউচার পার্কের চেয়েও বড়। মনোমুগ্ধকর লাইটিং আর বর্ণিল সাজসজ্জার রাতের পুরো নাগা ওয়ার্ল্ড আলোকিত। পৃথিবীর অন্যতম বড় জুয়ার আসরটি এখানেই হয়ে থাকে।

ক্যাসিনো বললেই অনেকের কল্পনায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের নাম। তবে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন, ক্যাসিনোতে কিন্তু এশিয়াই এগিয়ে। নাজমুল ভাই বলতেছিলেন চাইনিজ কোম্পানির নাগা ওয়ার্ল্ড কম্বোডিয়ার সেরা স্থাপনা।

কম্বোডিয়াতে চাইনিজদের অনলাইন ক্যাসিনো তথা ফ্রড বাটপারির আরেকটা অবৈধ ব্যবসাও আছে যেটা নরমাল ক্যাসিনো না। নাজমুল ভাই জানাচ্ছিলেন কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশ থেকে লোক আনতে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা খরচ হয়। অথচ রিটার্ন টিকেটে টুরিস্ট ভিসায় সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা লাগে। আমি নাজমুল ভাইকে বললাম,আমাদের গ্রামের দুইটা ছেলে সম্প্রতি এখানে এসেছে এবং সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে যে তারা মাসে লাখ টাকার উপরে ইনকাম করে, এটা কিভাবে সম্ভব?

উনার কাছে যেটা আমি শুনলাম শুনে অনেকটা আশ্চর্য হলাম, অসহায় বোধ করলাম। শরীর আমার ঠান্ডা হয়ে আসছিল এমন! ৫-৬ লাখ টাকায় দালালের মাধ্যমে কম্বোডিয়াতে এসেই চাইনিজদের কাছে তারা পন্য কিংবা দাসদের মত বিক্রি হয়ে যায়।

বাংলাদেশী এই ছেলেদেরকে তারা ফ্রড বাটপারির এজেন্ট হিসেবে কাজে লাগায়। অনলাইন ক্যাসিনোতে যারা কাজ করে পুরো সময়টা তারা একটা ঘরে জেলখানার বন্দীর মত জীবন কাটায়। তাদের থাকা খাওয়া এবং কাজ একই জায়গায়। মাসে কেবলমাত্র এক দিনের জন্য বাইরে যেতে পারে, তাও ৩-৪ ঘন্টা সময়।

এই বাংলাদেশি ছেলেদেরকে তারা বিভিন্ন ধনী দেশের বয়স্ক লোকদেরকে রোমান্স স্ক্যাম, হানিট্রাপ এবং নানান ধরনের ফ্রড বাটপারির কাজে লাগায়। সহজে প্রতারিত হয় বাংলাদেশের মতো এরকম অনেক দেশের নাগরিকদের তারা ট্রাপে ফেলে। তাদেরকে টার্গেট দিয়ে দেয়। এই টার্গেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওয়ার্কাররা প্রতারণার কাজ ব্যবহৃত হতে থাকে। তাদের কেউ কেউ হয়তোবা মাসে ৫০-৬০ হাজার কিনবা আরো বেশি ইনকাম করে কিন্তু তাদের কাজটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনেক বেশি নীতি-নৈতিকতা বিরোধী। এই ধরনের কাজে জড়িত অনেক বাংলাদেশী নমপেনে জেলে বন্দি অবস্থায় আছে।

চাইনিজ প্রতারকরা আরেকটা কাজ করে। এই সমস্ত বাংলাদেশি ওয়ার্কারদেরকে দিয়ে দেশ থেকে আরও লোক সংগ্রহ করায়। এরা দেশে তার এলাকায় প্রচার করে যে তারা কম্বোডিয়াতে খুব ভালো অবস্থানে আছে, মাসে লাখ টাকা ইনকাম করছে, তোমরা কি আসতে চাও! তাদের কথায় প্রলুদ্ধ হয়ে অনেকে এখানে এসে চাইনিজদের কাছে বিক্রি হয়! তাদের ডিমান্ড মত কাজ করা কিংবা টার্গেট পূরণ না হলেই আবার তারা হাত বদল হয়ে কোম্পানির অন্য চাইনিজদের কাছে বিক্রি হয়। আবার অনেকে চরম বিপদে পড়ে লাখ লাখ টাকা খোঁয়ায়। নাজমুল ভাই বাংলাদেশ থেকে লোক আনা নেয়ার কাজ করলেও আমাকে সব ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে অনুরোধ করে, ভাই আপনার রিলেটিভদের কেউ যেন কম্বোডিয়ায় চাকুরী কিংবা জীবন গড়ার কাজে না আসে। এখানে চাইনিজদের প্রতারণার কাজ ছাড়া তেমন কোন জব নেই! আসলে তারা বিপদে পড়বেই।

ফিরে আসি নাগা ওয়ার্ল্ডে! এখানকার ক্যাসিনো জুয়া খেলার নির্দিষ্ট আসর। এখানে আবার ফ্রড বাটপারি প্রতারণা দুই নম্বরির কিছু নেই। আমরা দেখলাম নামি-দামি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল অনেক দর্শনীয় স্থানের কাছেই এর অবস্থান।

নমপেনের নাগা ওয়ার্ল্ড পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হোটেলে অবস্থিত এই ক্যাসিনো। ইনফরমেশন ডেস্কের বিভিন্ন তথ্যে দেখলাম ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত এই ক্যাসিনোর গেমিং জোন। এখানে প্রতিদিন ১৩৯টি টেবিলে পোকারসহ বিভিন্ন রকমের জুয়ার আসর বসে। রয়েছে ভিডিও জুজু, প্রোগ্রেসিভ স্লট ও মাল্টি গেম মেমিনসহ জুয়া খেলার নানা উপকরণ। সারা পৃথিবী থেকে ধনকুবেররা আসেন এই ক্যাসিনোতে। এখানে ১ ডলার থেকে ১০০০ ডলার পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। আবার কেউ কেউ ৫ লাখ ডলার পর্যন্ত প্লে আউট করে থাকে। আমরা দেখতেছিলাম অনেক প্লাজমা টেলিভিশনে মাঠের খেলাধুলা নিয়েও চলছিল জুয়া খেলা। এসব খেলার মধ্যে জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ফুটবল, সকার, মার্শাল আর্ট, বক্সিং ইত্যাদি।

ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম শতশত জুয়ারীদের আনাগোনা। জুয়াড়িদের মনোরঞ্জন কিংবা উৎসাহ দেয়ার জন্য রয়েছেন সুন্দরী মডেল কিংবা পার্টি গার্ল। রয়েছে বার, স্পা, কফি হাউস, মিউজিক ফ্লোর। সিকিউরিটি প্রোটোকলের লোকজনও দেখলাম। ভিআইপি জুয়াড়িদের জন্য আলাদা জোন রয়েছে। আকর্ষণীয় এই ক্যাসিনোটি ভিতর এবং বাহির দুদিক থেকেই দেখতে অপরূপ। ক্যাসিনোর মার্বেল পাথরে তৈরি লবি আর নান্দনিক আলোকসজ্জা সত্যিই অসাধারণ। রাতে ক্যাসিনোটি ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। এর ভিতরে আমরা যত দেখছিলাম ততই বিস্মিত হচ্ছিলাম। ভাবা যায় প্রতি রাতে এখানে চলে কোটি কোটি ডলারের নানা ধরনের রোমাঞ্চকর আয়োজন। ক্যাসিনোটির প্রতিটি খেলার স্পট ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি। পুরো ক্যাসিনোটিই আগত জুয়াড়িদের অত্যন্ত পছন্দের। এটি শুধু ক্যাসিনোই নয়, বরং একটি পাঁচতারকা মানের হোটেলও। নাগা ওয়ার্ল্ডে আগত অতিথিদের জন্য রয়েছে বিলাসবহুল রুম। কম্বোডিয়ায় যে একবার যাবে তার জগদ্বিখ্যাত ও কুখ্যাত নাগা ওয়ার্ল্ড ক্যাসিনোটি দেখার কৌতূহল জাগবেই।

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
বনানীতে বাপ্পা মজুমদারের বাসায় আগুন, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন গায়ক
আমুর খালাতো ভাই রাহাত হোসেন ডিবির অভিযানে গ্রেপ্তার
টাঙ্গাইলের নৃ-গোষ্ঠী ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের চেক বিতরণ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা