'অসম্পূর্ণ সংস্কারে পুরনো বন্দোবস্তে নির্বাচন হলে বিপর্যয় অনিবার্য'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়ায় নতুন করে আশঙ্কা, ভয় ও হতাশা তৈরি হয়েছে—এমন মন্তব্য করেছেন নীতি–নির্ধারক, শিক্ষাবিদ, সাবেক আমলা, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস আয়োজিত ‘অসম্পূর্ণ সংস্কার ও পুরনো বন্দোবস্তের নির্বাচন: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেন, “সংস্কারহীন নির্বাচনে জাতি আরেকটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে।”
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাসান নাসির (অব.)। কী–নোট পেপার উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক এসকে তৌফিক এম হক। প্রধান আলোচক ছিলেন কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের মতো বিতর্কিত নির্বাচনের দায়ে সংশ্লিষ্ট আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীর জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। তারা দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ছাড়া গ্রহণযোগ্য ভোট সম্ভব নয়। সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভুতুড়ে ভোটার বাদ দেওয়া, সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও অপরাধী–দুর্বৃত্তদের প্রার্থীতা বাতিল করার মতো মৌলিক কাজগুলো এখনো হয়নি।
বক্তাদের মতে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনী থেকে আওয়ামী অনুগত ও বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলকে সরানো না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৬ বছর দমন–পীড়নের কারণে সুসংগঠিত হতে পারেনি; এখন তাদের সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ দিতে হবে।
সেমিনারে অতিথি আলোচক হিসেবে অংশ নেন সাবেক সচিব ও রাজনীতিবিদ এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সেলিম উদ্দীন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের ডিন অধ্যাপক ওয়ারেসুল করিম, বিশিষ্ট আইনজীবী মহসীন রশীদ, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলি, সাংবাদিক নেতা শহীদুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
আলোচনার সারসংক্ষেপে বক্তারা একবাক্যে বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, প্রশাসন–বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সময় না দিলে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।'
সেমিনার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের সেক্রেটারি–জেনারেল লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান, বীর প্রতিক (বরখাস্ত)।

মন্তব্য করুন