প্রাণঘাতী রোগ মেনিনজাইটিস, প্রতিরোধ ব্যবস্থাই পারে বাঁচাতে

মেনিনজাইটিস একটি প্রাণঘাতী রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু বরণ করতে পারে। তাই এই রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই হতে পারে জীবন রক্ষার সর্বোত্তম পন্থা।
দারিদ্র্য, ঘনবসতি এবং যথোপযুক্ত প্রতিরোধব্যবস্থা না থাকায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। মেনেনজাইটিস রোগে প্রতি বছর প্রায় ১.৭ মিলিয়ন শিশু আক্রান্ত হয়। সচেতনতা না থাকায় বাংলদেশে এখনও এ রোগে আক্রান্তের সঠিক হিসাব নেই। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা খুব দ্রুত এই রোগে আক্রান্ত হয়।
চিকিৎসকরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে আগাম টিকা দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। চিকিৎসকদের মতে, অবহেলা করলে আক্রান্ত ব্যক্তি বিকলাঙ্গও হয়ে যেতে পারে। মেনিনজাইটিস চিকিৎসার জন্য খুব কম সময় পাওয়া যায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে আক্রান্ত হবার প্রবণতা থাকলেও ঝুঁকিতে রয়েছে বড়রাও।
মেনিনজাইটিসের প্রধান কারণ ব্যাকটেরিয়া। আরও কিছু কারণে মেনিনজাইটিস হতে পারে। যেমন– ক্যান্সারের বিস্তৃতি, কিছু বিশেষ ওষুধ সেবন (ব্যথানাশক ওষুধ), সারকোডিয়াসিস, কানেকটিভ টিস্যুর সমস্যাজনিত রোগ, সিস্টেমিক লুপাস ইরাথেমেটোসাস উল্লেখযোগ্য।
মেনিনজাইটিস একটি মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ। এটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগটি শনাক্ত করা কঠিন কারণ এই রোগের লক্ষণগুলো অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের মতোই।
অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মেনিনজাইটিসের রোগী মারা যায়। তবে সব ক্ষেত্রে এ রকম হয়, এমনটি বলা যাবে না। মেনিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, গলার মাংস শক্ত হয়ে যাওয়া, স্মৃতিবিভ্রম, বমি বা বমি ভাব, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, অস্বস্তি, শরীরের বিশেষত পায়ের পেছনে ও নিতম্বে ঘায়ের মতো বিশেষ দাগ, অচেতন অবস্থা, তন্দ্রা ভাব, শরীরের ভারসাম্য হারানো প্রভৃতি।
মেনিনজাইটিস ডায়াগনসিস রোগের লক্ষণের পাশাপাশি মেনিনজাইটিস থাকার ব্যাপারে সন্দেহ হলে ব্লাড কালচার ও রক্তের রুটিন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। রোগীর মেরুদণ্ডের ভেতরে থাকা কশেরুকা থেকে সিএসএফ বা তরল পদার্থ বের করে তা পরীক্ষা করা হয়। সিএসএফে সেল কাউন্ট, প্রোটিন, গ্লুকোজ দেখে এবং সিএসএফের গ্রাম স্টেইন, কালচার পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়। যক্ষ্মা থেকে মেনিনজাইটিস হলে এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ তদানুযায়ী পরীক্ষার পাশাপাশি সিএসএফ কালচার, পিসিআর পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। মেনিনজাইটিস প্রতিরোধ ও টিকা মেনিনজাইটিস প্রতিরোধে বাংলাদেশে শিশুদের দেড় মাস বয়সের পর থেকে টিকাদান কর্মসূচিতে বিসিজি বা যক্ষ্মা, হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ-বি, নিউমোকক্কাল, এমএমআর বা মিসেলস মাম্পস রুবেলা ও হেপাটাইটিস টিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত রোগীর নিকটতম আত্মীয়স্বজন, সেবাদানকারী সেবিকা, চিকিৎসকের চিকিৎসা চলাকালে রোগ প্রতিরোধে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন অথবা রিফামপিসিন সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে (সেফট্রায়াক্সোন, ভ্যানকামাইসিন) স্টেরয়েড এবং খিঁচুনি হলে অ্যান্টিকনভালস্যান্ট জাতীয় ওষুধ দিয়ে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের আগে শুধু লক্ষণ দেখেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কারণ, দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে প্রাণহানির শঙ্কা থাকে।
(ঢাকাটাইমস/২৯ মার্চ/আরজেড)

মন্তব্য করুন